সিঁদুরে মেঘ

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

মা দেখ উত্তরের আকাশটা কেমন লাল হয়ে গেছে, 

ও কিছু না বাবা, মনে সাহস করে মা জমিলা বলে
মাঠ থেকে গরু দুটা তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় বাপ,
বয়সের অভিজ্ঞতায় মা জানেন, এ মেঘ বড় অলক্ষুনে,
কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্ব লক্ষণ
চৈত্রসংক্রান্তিকে ঘিরে অনেক দুর্যোগের কথা জমিলা
ভুলতে পারে না আজও!

ওই সিঁদুরে মেঘ তার জীবনকে করেছে বিরান ভূমি
পনেরো বছর আগে কুঁড়েঘরসহ তার সংসার
ঘূর্ণিবায়ু উড়ে নিয়ে যায় পাঁচ ক্রোশ দূরের মাঠে,
স্বামী সেবার বলেছিলেন বৈশাখী মেলায় হাতের চুড়ি
গলার পুথির মালা, পায়ের পায়েল, বউ পাগল করা বাতাসা
আর লাল টুকটুকে আলতা সবই কিনে দেবে।
কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে নাই, সে দিনই বজ্রপাতে
স্বামীর তরতাজা দেহটা ঝলসে যায় মুহূর্তের মধ্যে।

একমাত্র ছেলেকে বুকে আঁকড়ে কেটে গেছে অনেকগুলি বছর
এত দিন পর আবার সেই সিঁদুরে মেঘ
বাড়ির আঙিনার পাশ দিয়ে হাতির শুঁড় ফেলেছে
সিঁদুরে মেঘ ক্রমেই গাঢ় কালো আঁধারের রূপ নিচ্ছে
বুঝিবা ক্ষণিকেই পৃথিবীটা গিলে ফেলবে তার উদরে
হ্যাঁ, উত্তর পশ্চিম কোণ হতে ধুলাবালির কুণ্ডলী পাকিয়ে
কী যেন একটা এদিকে এগিয়ে আসছে।

বাতাসের প্রচণ্ড বেগে পাখিরা হারিয়ে ফেলছে পথ
মাতাল হাওয়ায় উড়ছে খেড়ি ঘরের চাল,
গোয়াল ঘরের ছাদ ভেঙে পড়ার কারণে প্রাণ ভয়ে
আর্তনাদ করছে খুঁটিতে বাঁধা অবলা গরুর পাল
দূর হতে ভেসে আসছে ছেলের আর্ত চিৎকার
মা আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও বলে, ততক্ষণে
উঁচু গাছের মগডালে বাতাসের তোরে ছেলের
লাশ বাবার পথ বেছে নিয়েছে বৈশাখী মেলা দেখার অনেক আগে।

(১১ এপ্রিল ২০১৮)

সরদার সায়িদ আহমেদ: নমপেন, কম্বোডিয়া।