ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনকে জয় করা সমুদ্র সৈকত
গোল্ডকোস্ট। নামের মাঝেই একটা সোনালি আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের একটি শহর, যা কিনা ব্রিসবেন থেকে ৬৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এক সময় এই স্থানের নাম ছিল সাউথ কোস্ট। গোল্ডকোস্ট কুইন্সল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও অস্ট্রেলিয়ার ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর। ১৮২৩ সালের পর থেকে ইউরোপিয়ানরা এসে এখানে বসবাস শুরু করে। আর ১৮৭৫ সালের পর থেকে শহরটি বিত্তশালী ব্রিসবেনবাসীর অবকাশযাপনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এভাবে ধীরে ধীরে গোল্ডকোস্ট পুরো অস্ট্রেলিয়া ও তার আশপাশের দেশগুলোর ভ্রমণপিপাসু মানুষের মনকে জয় করেছে। প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন পর্যটক সারা পৃথিবী থেকে এখানে ঘুরতে আসেন।
গোল্ডকোস্ট শহরের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সমুদ্র সৈকত। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র তটরেখা জুড়ে একের পর এক সাজানো সৈকত। কিছু বড় বড় দালানকোঠা ছাড়া কৃত্রিমতার তেমন কোনো ছোঁয়া নেই। তাও সেটা যেন এই সৈকতগুলোর সৌন্দর্যকে উজ্জ্বল করে তোলাই উদ্দেশ্য।
সবচেয়ে বিখ্যাত সৈকতটি হলো সারফারস প্যারাডাইস। নামই যেন বলে দিচ্ছে স্থানটির বৈশিষ্ট্য। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বিনোদন ও আকর্ষণ জল কেন্দ্রিক। তার মানে হলো পানিতে নেমে যত ধরনের আনন্দ করা যায়। আর এ কারণেই গোল্ডকোস্ট এত সমাদৃত। সারফিং, সাঁতার, বোটিং, স্কুবা ডাইভিং এসবই এ অঞ্চলের সাধারণ লোকের কাছে জনপ্রিয়। আর ছোট শিশুদের পছন্দ সৈকতের সোনালি আভা ছড়ানো মসৃণ বালুরাশি। এ ছাড়া মারমেইড বিচ, পাম বিচ, ব্রড বিচ, বার্লি হেডস, কারাম্বিন, কুলাংগাটা আর প্যারাডাইস পয়েন্টসহ রয়েছে অসাধারণ সব সমুদ্র সৈকত। যার প্রতিটিই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর।
গোল্ডকোস্টের আরেক অন্যতম বৈচিত্র্য এর আবহাওয়া। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র জলবায়ু। খুব গরম বা ঠান্ডা কোনোটাই নয়। সারা বছরই তাপমাত্রা কমবেশি সহনীয়। যা কিনা পর্যটকদের দিনে রাতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য যথার্থ। এই জলবায়ুর কারণে এখানে প্রচুর রেইন ফরেস্ট দেখতে পাওয়া যায়।
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এই বিখ্যাত কোরাল রিফ যা কিনা এই কুইন্সল্যান্ডেই অবস্থিত। এ বছর গোল্ডকোস্টের আকর্ষণ ছিল একটু ভিন্ন। গত ৪ এপ্রিল গোল্ডকোস্টে অনেক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাঝে ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসের পর্দা উন্মোচন হয়। এ উপলক্ষে চারদিকে ছিল সাজসাজ রব।
গোল্ডকোস্টে অনেক বাংলাদেশি বাস করেন। যারা অনেকেই এই কমনওয়েলথ গেমসে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রবাসে থাকলেও বাঙালিরা সর্বদা অন্তরে বাংলাদেশকে লালন করেন। আর তাইতো শত ব্যস্ততার মাঝেও কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণে আসা বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদদের তারা উৎসাহ উদ্দীপনা জোগাতে ছুটে যান বিভিন্ন ভেন্যুতে।
গোল্ডকোস্টের বাঙালিদের কাছে এবারের এপ্রিল মাসটা ছিল বেশ আনন্দময়। একদিকে কমনওয়েলথ গেমসের সাজসাজ রব, অন্যদিকে স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের ইস্টার ও টার্ম হলিডের সঙ্গে বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখ বরণের জন্য প্রাক আনুষ্ঠানিক মহড়া, আড্ডা আর মজাদার দেশীয় খাবার। এই দূরদেশে একটুখানি দেশের আমেজ। ১৪২৫ বৈশাখকে বরণ আর সেইসঙ্গে গোল্ডকোস্টের আর্দ্র গরম হাওয়া যেন অস্ট্রেলিয়ার বুকে লাল সবুজের পালে দোলা দিয়ে গেছে। শুভ হোক আমাদের সকলের জীবনে।
‘তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।।’
রাকিয়া হোসাইন: গোল্ডকোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া।