রুয়ান্ডায় বর্ষবরণ ও রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী

অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা
অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা

আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলা—দুই বাংলা মিলে মাত্র জনা চল্লিশেক বাঙালির বাস। তাতে কী? কোনো অনুষ্ঠানই পারতপক্ষে বাদ যাচ্ছে না মূলত এখানে বসবাসকারী সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে। কেউই চান না কোনো অনুষ্ঠান বাদ পড়ুক এবং এসব আয়োজনে আয়োজকেরও কোনো অভাব পড়ে না। নিজে থেকেই সবাই আয়োজনে উৎসাহী হন এবং অনুষ্ঠানকে সফলভাবে সম্পাদনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন, যেন এ সময়ে কোনো ক্লান্তি কাউকেই কোনোভাবেই স্পর্শ করতে পারে না একবারেই।

অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা
অনুষ্ঠানের একটি পরিবেশনা

ভাবতে পারেন মাত্র কিছুদিন আগে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের রেশ কাটতেই আবারও অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং বলা যায় অত্যন্ত সফল আয়োজন। তবে এতে আবারও বৈশাখের আবেশও নিয়ে আসা হয়েছিল বাপকভাবেই। কানাডা থেকে আনা বাংলাদেশের বিরাট বিরাট ইলিশ মাছ, দিল্লি থেকে আনা পান-জর্দা সামগ্রী, রবীন্দ্র-নজরুল সংগীত পরিবেশনা। কী ছিল না আয়োজনে? মাছের জন্য সিদ্দিকী ভাই ও পান-মসলার জন্য প্রভাক করিমকে ধন্যবাদ না দিলেই নয়।
যা হোক, অনুষ্ঠানের শুরুতেই ‘হে নতুন দেখা কি আর বার’ গানটি সকল বাঙালির অংশগ্রহণে সমবেত কণ্ঠে চমৎকারভাবে পরিবেশিত হয়। এ পরিবেশনা এমনই চমৎকার হয়েছে, প্রথমে কেউ শুনলে বুঝতেই পারবেন না, এ গানটি কোনো অপেশাদার শিল্পীরা গেয়েছেন। তার পরপরই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের ‘নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল’ ও কবিগুরুর ‘আমারও পরানও যাহা চায় তুমি তাই, তুমি তাই গো’ গান দুটি গেয়ে রুয়ান্ডা বাঙালি কমিউনিটির প্রিয় দুই শিল্পী জামিল হেলাল ও উপমা রহমান সহজেই দর্শক মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ না দিলেই নয়।

অনুষ্ঠানে সমবেত কয়েকজন
অনুষ্ঠানে সমবেত কয়েকজন

পরের অনুষ্ঠান ছিল অহমীয়া গানের সঙ্গে বিহু নাচের পরিবেশনা। যা বন্দনা ব্যানার্জি ও নাফিসা নিধি অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপিত করেছেন। মাত্র কয়েক দিনের প্রশিক্ষণে গুরু বন্দনা ব্যানার্জি সহযোগী নাফিসা নিধিকে যেভাবে এ কঠিন নাচের উপযোগী করে তুলেছিলেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল এবং দর্শকদের হাততালি থেকে সহজেই যা অনুধাবন করা গেছে।
কলকাতার অলকেশ দম্পতি পরিবেশিত শ্রুতি নাটক ‘দম্বল’ উপস্থাপনা সত্যিই অসাধারণ ছিল, যা এ জাতীয় অনুষ্ঠান না হলে হয়তো তাদের এমন প্রতিভার কথা এ কমিউনিটি কখনো জানতেই পারত না। তা ছাড়া দুই বাংলার প্রখ্যাত অভিনেতা ইন্দ্রনীল দা, বিশ্বদ্বীপ দা, নিলয় দা ও মাহফুজুর রহমান যে কী অসাধারণভাবে ‘তেলে-জলে’ নাটকটি ফুটিয়ে তুলেছেন তা তো না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না। ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁদেরকে আর ছোট করতে চাই না একেবারেই। তবে ভবিষ্যতেও এমনটি চালিয়ে যাবেন আর আমাদের পরম আনন্দে মাতিয়ে রাখবেন এ আশা তো করতেই পারি।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

প্রভাক করিম, যিনি আমাদের কমিউনিটির প্রতিটি মিলনমেলাকেই হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখেন সেই তিনি যে অসাধারণভাবে কবিতা আবৃত্তি করতে পারেন তা কি কেউ কখনো জানত? কিন্তু আমাদের এ অনুষ্ঠানে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে তার বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর শুধু তিনি তার কর্মস্থলেই রাখছেন না বরং অন্য সব বিষয়েও তিনি ঠিক সেরকমই প্রতিভাধর।
বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও তথ্যসমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এবং মেধা যাচাইয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা নিয়ে সিদ্দিকী ভাইয়ের উপস্থাপনা ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর, যা পরবর্তী প্রজন্ম তথা উপস্থিত সকলকেই ব্যাপক উৎসাহিত করেছে।
কিগালিতে আমরা আজ যারা আছি কাল হয়তো থাকব না এবং কেউ আসবেন, কেউ যাবেন আর এই আসা-যাওয়ার মাঝখানে বিদেশ বিভুঁইয়ে অবস্থানরত আমরা বাংলাদেশি ও বাঙালি স্বজনেরা এভাবেই নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে দেশীয় ঐতিহ্যকে তথা আমাদের গুণীজনদের স্মরণে রাখব এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।

জামিলুর রহমান চৌধুরী: কিগালি, রুয়ান্ডা।