আমার একটি দেশ আছে

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পতাকা
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পতাকা

প্রবাস জীবনে সুযোগ পেলেই টুপ করে ঢুকে যাই লাইব্রেরিতে। যখন যেটি সামনে পাই। কখনো জংশন ব্লুবার্ডের লাইব্রেরিতে, কখনো ফ্লাশিং মেইন স্ট্রিটের লাইব্রেরিতে। বিশাল লাইব্রেরিগুলোতে ইংরেজির পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ও ভাষার বইও পাওয়া যায়। ফরেন বুকস সেকশনে গিয়ে কিছু খুঁজে বেড়াই মনের অজান্তেই। চোখে পড়ে থরে থরে স্প্যানিশ, চায়নিজ...। হঠাৎ চোখ জোড়া আনন্দে চিকচিক করে ওঠে। বাংলা! সেদিকে এগোই। থরে থরে সাজানো বাংলা বই। আমার দেশের লেখকদের বই। আমি গভীর ভালোবাসার দৃষ্টিতে প্রতিটি বই দেখি। গভীর ভালোবাসার স্পর্শে তাদের ছুঁয়ে দেখি। ভেতরটায় গর্ববোধ হয়। আমার একটি স্বাধীন দেশ আছে। বাংলাদেশ!
এলমার্স্ট হাসপাতালের পাশ দিয়ে যতবার যাই, চলন্ত গাড়ি থেকে চেয়ে চেয়ে দেখি অনেক দেশের পতাকার সঙ্গে আমার সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত উড়ছে, পতপত করে উড়ছে। হাসপাতালটিতে যেসব দেশের চিকিৎ​সকেরা সেবা দিচ্ছেন, সেসব দেশের পতাকা দিয়ে তা জানান দিচ্ছে। এত পতাকার মাঝে আমার লাল-সবুজেই চোখ স্থির হয়ে থাকে। ভেতরটা শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে আসে সেই সব মানুষের জন্য, যাঁদের জন্য আজ আমার একটি দেশ আছে বলে মাথা উঁচু করি।
ম্যানহাটনের ইউনাইটেড ন্যাশনসের সামনে যখন আমার লাল-সবুজের বিজয় নিশান পতপত করে ওড়ে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকি। পৃথিবীর সবচেয়ে তীব্র বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ভিনদেশিদের বলে উঠি, ওই দেখো, ওটা আমার দেশের পতাকা। আমার একটি স্বাধীন দেশ আছে, বাংলাদেশ। অনেক অপ্রাপ্তি, অভাব ও অনটন আমাদের... প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে পুনর্বার উঠে দাঁড়াই আমরা...বারবার মরে আবার বেঁচে উঠি... তবুও উঠিই তো! একটি স্বাধীন দেশ বাংলাদেশে।

রিমি রুম্মান চৌধুরী
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র