আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল চেনে না বাংলাদেশকে!

ইতালিতে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে তেমন উত্তাপ নেই। কারণ এবার রাশিয়া যাচ্ছে না ইতালি। ইতালিয়ানদের এবার খেলা দেখার আগ্রহ কম। বাংলাদেশে গত কয়েক দিন যাবৎ ফেসবুকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি সমালোচনা। কারও হাতে বদনাও দিয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সময় পায় কোথায় জানি না। নষ্ট হচ্ছে এমবি, খালি হচ্ছে হাত। সামনে ঈদের সময় নিজের পরিবার বা ভাইবোনের প্রতি খরচ কমিয়ে দেখা যাবে ভিনদেশি পতাকা বানাবে সমার্থকেরা। খেলা দেখা নিয়ে হবে মারামারি। কেউ স্ট্রোক করে পত্রিকায় শিরোনাম হবেন। আবার কেউ জমি বিক্রি করে পতাকা বানিয়ে দেশজুড়ে আলোচনায় আসবেন।

এবার আসি মূল কথায়। ২০০৬ সালে নিজে পতাকা বানিয়ে বাড়ির সামনে গাছে টানিয়ে রাখছিলাম। ছোটবেলা থেকেই ব্রাজিলের সমর্থক। ইতালি আসার পর সমর্থন পরিবর্তন করিনি, তবে ইতালির প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। যে দেশে থাকি, সেই দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে রাজাকার হতে চাইনি। ইতালি বা রোম ক্লাব জিতলে আনন্দিত হই। আবার হারলে খারাপ লাগে। টুরিজম কোম্পানিতে কাজ করি, তাই অনেক ব্রাজিলিয়ান ও আর্জেন্টাইন নাগরিকদের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। হঠাৎ কৌতূহল জাগল এদের কাছে জেনে নিই বাংলাদেশ চেনে কি না। যে দেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার জন্য মানুষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ম্যাচ জয়ে আত্মহারা হয়, আবার পরাজয়ে আত্মহত্যা করে, স্ট্রোক করে। গত ১৫ দিনে প্রায় ২০ জন আর্জেন্টাইন এবং ব্রাজিলিয়ান নাগরিকের ওপর জরিপ চালিয়ে ছিলাম। তাঁরা বাংলাদেশকে চেনে কি না, সরাসরি উত্তর—না। দুজন বলেছেন, ইন্ডিয়া চিনি। আবার একজন বলেছেন, যে দেশে ইতালিয়ান হত্যা করা হয়েছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার দেশ আর্জেন্টিনা গত বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে যাওয়ায় আমার দেশে দুজন মারা গেছেন। তোমার দেশের মিডিয়ায় কি প্রচার করেছে। ওই নারী বললেন, আমাদের চোখে পড়েনি। খেলায় হারজিত আছে, সাময়িক কষ্ট পাই, পরে ঠিক হয়ে যায়। এখানে মারা যাওয়ার কি আছে! আমরা এমন দেশের সমর্থক, যে দুই দেশ আমাদের বাংলাদেশকে চেনে না অথচ সেই দেশের পতাকা ওড়াতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাই। আমরা কি আসলেই ফুটবলপ্রেমিক নাকি বোকা। আমি সব সময় দুর্বল দলের পক্ষে। শক্তিশালী দল দুর্বল দলের কাছে হেরে গিয়ে আগামী বিশ্বকাপ নতুন একটি দেশ পাবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

*এমডি রিয়াজ হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক, রোম, ইতালি