হিপো ফ্যামিলি ক্লাব ও জাপানি পরিবার

জাপানের একটি পরিবারের সঙ্গে লেখক।
জাপানের একটি পরিবারের সঙ্গে লেখক।

জাপানিরা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে যারপরনাই গর্বিত। জাপানি সংস্কৃতি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার জন্য রয়েছে নানা উদ্যোগ। আবার অন্য দেশের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহেরও বিন্দুমাত্র কমতি নেই জাপানিদের মধ্যে। আর এ ক্ষেত্রে সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে আসছে হিপো ফ্যামিলি ক্লাব নামের একটি সংগঠন।

বিদেশি ভাষা শেখার জন্য চমৎকার একটি প্ল্যাটফর্ম হওয়ায় হিপো ফ্যামিলি ক্লাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব জাপানিই ইংরেজি জানে এবং এ কারণে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাদের কোনো সমস্যা হয় না। হিপো ফ্যামিলি ক্লাবের অনেকগুলো কার্যক্রমের মধ্যে একটি হলো হোম স্টে প্রোগ্রাম। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশিদের অতিথি হিসেবে একটি জাপানি পরিবারের সঙ্গে থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। এ উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো খুব কাছ থেকে বিদেশিদের জাপানি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। কিছুদিন আগে হিপো ফ্যামিলি ক্লাব ইউনিভার্সিটির বিদেশি অন্য শিক্ষার্থীদের মতো আমাকেও ই-মেইল করে জানতে চেয়েছিল তাদের হোম স্টে প্রোগ্রামে আগ্রহী কি না? আমি আগ্রহ প্রকাশ করলে তারা আমাকে সপরিবার অতিথি হিসেবে একটি জাপানি পরিবারের সঙ্গে এক দিন থাকার সুযোগ করে দেয়।

আমার হোস্ট ছিলেন মিসেস সানা সুগিও নামের এক নারী। দুই সন্তানের জননী মিসেস সানা সুগিও অসাধারণ একজন ভালো মানুষ। একজন আদর্শ জাপানির সব মানবীয় গুণাবলি তাঁর মধ্যে বিদ্যমান। ফুকুওকা শহরের কাসুগায় পরিবারসহ থাকেন তিনি। ট্রেনে করে সকাল ১০টায় পৌঁছাই তাঁর বাসার নিকটবর্তী সাসাবারু স্টেশনে। আগে থেকেই আমাদের স্বাগত জানানোর জন্য দুই সন্তানসহ স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন মিসেস সানা সুগিও। বাসায় পৌঁছে সবার সঙ্গে পরিচয় ও কুশল বিনিময় শেষে মধ্যাহ্নভোজ। মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করা হলো মজাদার জাপানি মিসো স্যুপ, উদোন ও টেম্পুরা। মধ্যাহ্নভোজ শেষে সবাই মিলে যোগ দিই হিপো ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে। অনেক জাপানি পরিবার এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল। ঐতিহ্যবাহী জাপানি গান, নাচ ও বিভিন্ন রকম খেলাধুলা ছিল অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ। অনুষ্ঠানের একটা অংশে ছিল আমাদের জন্য প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে বাংলাদেশ ও এর সংস্কৃতির ব্যাপারে জাপানি বাচ্চারাসহ অনেকেরই ছিল ব্যাপক কৌতূহল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও জাপানের জাতীয় পতাকার মধ্য কিছুটা মিল আছে, এ বিষয়টা বাংলাদেশের অনেকের জানা থাকলেও জাপানিদের খুব একটা জানা নেই। এই অনুষ্ঠানে এসে জাপানি বাচ্চাসহ অন্যদের এটি জানানোর সুযোগ হলো আমার। রাতে বাসায় ফিরে আমাদের সম্মানে দেওয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করি। নৈশভোজ শেষে আড্ডা। আড্ডা দিতে দিতেই জানা হলো জাপানি জীবন, দর্শন ও সংস্কৃতির খুঁটিনাটি অনেক কিছু। আগ্রহ জন্মালো তাদের ভাষার প্রতি। সবশেষে জাপানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কিমোনো পরিধান করে ফটোসেশন। পরের দিন সকালের নাশতা শেষ করতেই বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠল। খুব দ্রুতই শেষ হয়ে গেল আনন্দঘন মুহূর্তটুকু। যথারীতি স্টেশনে এসে বিদায় জানানো হলো আমাদের। নিজের অজান্তেই জাপানি ভাষা, সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতি সৃষ্টি হয় একধরনের ভালোবাসা। খুব অল্প সময়েই বন্ধুত্ব হয় আমার চার বছর বয়সী ছেলে জারিফ ও মিসেস সানা সুগিওর তিন বছর বয়সী মেয়ে নানের সঙ্গে। তাই মিসেস সানা সুগিও ও তার পরিবারকে বিদায় জানাতে আমাদের একটু কষ্টই হচ্ছিল।

*মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ও জেডিএস ফেলো, কিউশু ইউনিভার্সিটি, জাপান