এখন না হলে কখন?

বেগুনি, পেঁয়াজি, জিলাপি ও নানা স্বাদের খাবারে দেওয়া হচ্ছে ইউরিয়া সারের উপাদান অ্যামোনিয়া। খাবারকে মচমচে করতে অ্যামোনিয়া মেশানো হয়। ৪ জুন সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খাবারে ক্ষতিকর উপাদান মেশানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। ছবি: প্রথম আলো
বেগুনি, পেঁয়াজি, জিলাপি ও নানা স্বাদের খাবারে দেওয়া হচ্ছে ইউরিয়া সারের উপাদান অ্যামোনিয়া। খাবারকে মচমচে করতে অ্যামোনিয়া মেশানো হয়। ৪ জুন সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে খাবারে ক্ষতিকর উপাদান মেশানোর বিষয়টি ধরা পড়ে। ছবি: প্রথম আলো

ব্যাপারটা ঠিক এ রকম না যে, শুধু রমজান মাস এলেই বাংলাদেশের রেস্টুরেন্ট, হোটেল মালিক কিংবা আড়তদারেরা খাদ্যে ও ফলে ভেজাল মেশানো শুরু করেন। শতভাগ লাভের আশায় বছরের পর বছর তারা এসব অখাদ্য বিক্রি করে আসছেন এবং ভোজনরসিক বাঙালিও পরম তৃপ্তি নিয়ে তা খেয়ে যাচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভেজালবিরোধী অভিযানের পর দোষী রেস্টুরেন্টগুলো জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেই রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে পরবর্তী এক বছর ভেজাল খাবার পরিবেশনের এক অলিখিত লাইসেন্সও যেন তারা পেয়ে যাচ্ছে!
এ ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের দোষ দিয়েই বা কী লাভ? কারণ, তারা জানেন, এ দেশের মানুষ খাবার কেনে দোকানের বাহারি আলোকসজ্জা, ব্র্যান্ড কিংবা রংবেরঙের মোড়ক দেখে। চটকদার পরিবেশনার আড়ালে তাই অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা রান্নাঘরের দুর্গন্ধ নিমেষেই হারিয়ে যায়, সুসজ্জিত শোরুমের সুরভিত এয়ার ফ্রেশনারে! অপরিণত ফলগুলোও তাই গাছপাকা হয়ে যায় বিষাক্ত রাসায়নিকের মাত্রাহীন ব্যবহারে! আর আমদানি করা ফলে ফরমালিন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে প্রকাশিত পত্রিকার রিপোর্টগুলো তো সবারই জানা।
উপরিউক্ত কথাগুলো অবিশ্বাস্য মনে হলে, গত এক মাসে ভেজালবিরোধী অভিযানে অভিযুক্ত দোকানগুলোর সামনে ইফতারের আগে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় নিজ চোখে দেখে আসতে পারেন। তখন এটাও উপলব্ধি করতে পারবেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক জরিমানাকৃত অর্থের পরিমাণ, সেই দোকানগুলোর এক দিনের মুনাফার এক দশমাংশ মাত্র!
খুব জানতে ইচ্ছা হয়, আমরা ক্রেতাসাধারণ আসলে কতটুকু সচেতন? সবকিছু জেনেশুনে এই আমরাই কেন বারবার চলে যাই সেই সব দোকানগুলোতে? কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে কিনে আনা বিষাক্ত ফল কিংবা ভেজাল খাবার; প্রিয়জনের মুখে তুলে দিতে পেরে আমরা হয়তো আনন্দিত হই। কিন্তু, একবারও কেন ভাবি না, আমাদের অসচেতনতা ও প্রতিবাদহীনতাই আমাদের আপনজনদের অপূরণীয় ক্ষতির মূল কারণ?
জীবন সায়াহ্নে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চিন্তা না করে, সবাই যদি এখনই একটু সচেতন হই, তাহলে হয়তো আগামী প্রজন্ম নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা পেতে পারে। সচেতনতা দিয়ে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তখন বয়কট করা যেতে পারে সেই দোকানগুলোকে। তাতেও ভেজাল দেওয়া বন্ধ না হলে-ঐক্যবদ্ধভাবে খুঁজে বের করতে হবে নতুন কোনো উপায়। কিন্তু তাই বলে, নীরবে এই অপরাধ আর কত দিন সহ্য করব আমরা? দেশব্যাপী ভেজাল খাদ্য পরিবেশনের এই ঘৃণ্য মহোৎসব কি শেষ হওয়ার নয়?
মনে রাখবেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে-তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে’।

ডা. তাজবীর আহমেদ: চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব টোকিও, জাপান। সদস্য, বাংলাদেশ সাংবাদিক-লেখক ফোরাম, জাপান।