প্রবাসের অপূর্ণ ঈদ!

লেখিকা
লেখিকা

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ...।’ ঈদ এসেছে তবে চারদিকে ঈদের কোনো আমেজ নেই। কোনো আলোকসজ্জা নেই। কোনো আতশবাজি পটকা নেই। নেই কোনো মাইকিং। কীভাবে থাকবে? এ যে প্রবাসের ঈদ। বাকি ৩৬৪ দিনের মতোই কর্মব্যস্ত একটা দিন।

—আপি তুই একা কীভাবে ঈদ করবি?
—নারে বোনু আমি একা না তোর ভাইয়ার সঙ্গী হয়েছি। এবার তার ছয় বছরের একাকী ঈদের সমাপ্তি ঘটবে আর শুরু হবে প্রিয় আত্মীয়পরিজন ছেড়ে অনেক দূরে আমাদের দুজনের এক অপূর্ণ ঈদ।

লেখিকা
লেখিকা

ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। হুম...তাই, তবে তা আমার দেশের ঈদ। ভিনদেশের ঈদ নয়। আমার দেশে নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রতিটা দৃশ্যই বলে দেয় ঈদ কতটা খুশির, কতটা আনন্দের। আর প্রবাসে, ঈদের ছুটির কোনো টেনশন নেই। বাড়ি যাওয়ার ধুম নেই। অগ্রিম টিকিট কাটার কোনো দরকার নেই। টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন নেই। রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। মার্কেটে নতুন জামাকাপড় কেনার উপচে পড়া ভিড়ও নেই। এ যেন এক প্রাণহীন ঈদ।
জার্মানিসহ ইউরোপে আজ চাঁদ উঠলে কাল ঈদ। কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। চাঁদ দেখার আগ্রহটাও নেই কারও এখানে। সবাই নিজের মতো ব্যস্ত। বাচ্চাদের ঈদ ঈদ বলে কোনো চিৎকার এখানে কানে আসে না। মেয়েরা দলবেঁধে হাতে মেহেদি দেবে এটা হয়তো এখানে কেউ ভাবতেই পারে না। সোনিয়া, দয়িতা, মাফরুহা, সাবাদের ছোট ছোট হাতগুলো আজ খুব বেশি মিস করছি। দেশের সেই ঈদের আনন্দের দিনগুলো আজ বারবার মনে পড়ছে। তখন ঈদের জন্য কত কিছু বাজেট করতাম। এত টাকা দিয়ে শপিং করব, ওখানে-সেখানে যাব, ওখানে এটা খাব। এ রকম আরও কত যে পরিকল্পনা করতাম তার শেষ নেই। আম্মু এটা রান্না করো, ওটা রান্না করো, কত বায়না। অনেক বেশি মিস করছি মা তোমাকে আর তোমার হাতের রান্না। মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ছাড়া ঈদ যেন ঈদ নয়, অপূর্ণ ঈদ অনেক কষ্টের ঈদ।

স্বামীর সঙ্গে লেখিকা
স্বামীর সঙ্গে লেখিকা

আমার অপূর্ণ ঈদের কষ্টের মাত্রা আরও বেড়ে যায়, যখন ছোট্ট মাইমুনা ফোন দিয়ে বলে, ‘মামি তোমাকে আমার খুব মনে পড়ে, তুমি কবে আসবা...।’
আসব ইনশা আল্লাহ। আর যেদিন আমাদের ফ্লাইট বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করবে সেদিন সকলকে কাছে পেয়ে আমাদের অপূর্ণ ঈদ হয়ে উঠবে পূর্ণ ঈদ, খুশির ঈদ।
দেশে-বিদেশে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারকভ

তামান্না ফেরদৌস: প্রবাসী শিক্ষার্থী: ইউনিভার্সিটি অব সিগেন, জার্মানি।