আপনাদেরও কি কিছুটা দায়িত্ব নেই?

লেখিকা
লেখিকা

এই লেখা তাদের জন্য যারা অভিবাসী ও প্রবাসীদের কাছে অভিযোগ করেন। গোশ্‌শা করেন। আবদার করেন। প্রয়োজনে বদনামও করেন।

একজন মানুষ যখন পরের দেশ থেকে নিজের দেশে যান, তখন সে শুধু তার মা-বাবা, ভাইবোনকে দেখতে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দেন না। সবার জন্যই যান। তা না হলে যার সব কাছের স্বজন সঙ্গে থাকে, তিনি কোন দুঃখে দেশে যাবেন? কিন্তু দুঃখ তখনো সেই মানুষটা পান না। তখনই পান, যখন দেশে থাকা লাট বাহাদুর আপনারা পায়ের ওপর পা তুলে, অবিবেচকের মতো অপেক্ষা করেন। বিদেশ থেকে যে মানুষটা এল, তিনিই বাড়ি বাড়ি গিয়ে আপনাদের দেখে আসবেন, ধন্য করে আসবেন। তিনিই ফোন করে করে বলবেন, আপনারা আসেন!
যদিও আপনারা জানেন, তবুও আপনাদের অভিনয় করে বলতে হবে। আমিতো মাত্র এলাম। আপনাকেই প্রথম ফোন দিলাম। আপনারা আসেন! যদিও আপনারা দেখেছেন ফেসবুকের বুকে তার আসার বার্তা। তবুও আপনারা অনুযোগ করেন, দেখেছি তো কী হয়েছে! কিংবা দেখেছি তার প্রমাণ কী! আলাদা করে জানাবে না? ব্যাপারটা অনেকটা আগের দিনের মতো। ছিল না কিছু মানুষ, যারা ভাবতেন বিয়ের দাওয়াত ফোনে দিলে হবে না। ফোনে দিলে সেই দাওয়াতে যাব না। পায়ে হেঁটে বাড়িতে গিয়ে গিয়ে দিলেই না সেটা দাওয়াত! সে যত সময়ের অপচয় হোক না কেন। আপনি তার স্বজন তবু যত কষ্টই আপনার হোক না কেন।
মুঠোফোন যুগের সেই কাল এখন কিছুটা কাটলেও মুখপঞ্জির যুগের ক্রান্তিকাল এখন চলছে। মুখপঞ্জির বুকেও আছে এমন কিছু কূটনৈতিক স্বজন। যারা প্রযুক্তির ষোলো আনা নেবেন ঠিকই, কিন্তু স্বীকার করবেন না। দেখবেন ঠিকই, তবু দেখেছি বলবেন না। ওমা! ফেসবুকের স্ট্যাটাসে লিখেছে। পড়েছি। তাতে কী! ওইটা তো হবে না। গ্রুপ মেসেজ? আমার আলাদা মর্যাদা নেই? ছিঃ ছিঃ। এই সহজ ব্যাপারটা সহজে মেনে নেবার ক্রান্তিকাল এখনো কিছু কিছু মানুষের কাটেনি। প্রযুক্তির এই সৌন্দর্যটা সুন্দর চোখে দেখতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। আপনারা কেন এটুক বিবেচনা করেন না, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা এই মানুষটা কতটা ক্লান্ত, কতটা পরিশ্রান্ত। তার একজনের পক্ষে কী সম্ভব জনে জনে প্রতিটা মানুষ জানা সত্ত্বেও তাকে জানানো? আমি এসেছি!
এই ভণিতাটা আপনারা কেন করেন? আমাকে বলেন। একজন মানুষের শতজন মানুষকে কল দেওয়া সহজ নাকি এক শজন মানুষের একজন মানুষের খোঁজ নেওয়া সহজ? নিশ্চয়ই এক শজন মানুষের হিসাবটা সহজ। কারণ একজনের পক্ষে একা এক শজনকে অ্যাট অ্যা টাইম কভার করা সম্ভব না। যতটা না সহজ এক শ জন মানুষের একজন মানুষের খোঁজ নেওয়া। ধরুন টানা দুই দিন জার্নি করে তিন দিনের জন্য দেশে গেলেন অভিবাসী বা প্রবাসীরা। গিয়ে তার মধ্যে দেড় দিন যদি এই সব কারণেই নষ্ট হয়, জানেন কি, তখন মধুর কথাও যে ত্যক্ত হয়ে বের হয়?
এই লেখা তাদের জন্য, আপনারা যারা ফোন তো কোনো দিন করবেন না, কোনো দিন না। কিন্তু বিদেশে থাকা মানুষটা একাই যোগাযোগ করে করে যখন ক্লান্ত। যখন একাই সম্পর্ক টানতে টানতে হাল ছেড়ে দেন একদিন, তখন বলতে ছাড়েন না, ফোনটোন তো এখন আর করো না। আর তখন যদি মুখের ওপর যৌক্তিক উত্তর পড়ে, আমি তো করিনি, আপনি কেন করলেন না? অমনি আপনাদের ঠোঁটের আগায় বদনাম। বিদেশ গিয়া নষ্ট হইছে! কিন্তু আপনারা স্বদেশ থাইক্যা যে নষ্ট মস্তিষ্কের নষ্ট ভাবনা উৎপাদন করেন, তা কিছু না! কেন শুধু ওই মানুষটার কাছেই আশা করেন তার দায়িত্ব। আপনাদেরও কি দায়িত্ব নেই কিছুটা?
বলতে পারবেন হে তথাকথিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা? কেন আপনাদের প্রত্যাশার পারদ নামে না শত কিছুতেও? কখনো কী ভেবেছেন সময় অসময় তাদেরও থাকতে পারে? হয়তো কোনো নাজুক মুহূর্তে তারা আপনার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। আপনারা তা জানেন না। কারণ আপনাদের তা জানানো হয় না। আপনারা ওই মুহূর্তে এটুকু শুধু জানেন, নিশ্চয়ই আপনাদের প্রতি ভালোবাসা দেশের বাইরে থেকে আসা মানুষটার একটু কম। নয়তো অনেকটুকু চাহিদা নিয়ে যে বসে আছেন, মানুষটা বিদেশ থেকে সেসব আনল না কেন! কেন ভাবেন না, তারও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে? এই লেখা তাদের জন্য যারা পাঁচ লাখ টাকা পাঠালেও দশ টাকা খরচ করে একটা ফোন করে বলেন না, টাকা পেয়েছি। কারণ আপনাদের অভিধানে ‘কৃতজ্ঞতা’ শব্দটি নেই।
এই লেখা তাদের জন্য, যাদের সহায়তা করতে পারলেন তো ভালো। আর পারলেন নাতো আকাশে মেঘ, মনটা কালো। আপনারা কী জানেন একসঙ্গে এতজনকে অর্থ সংক্রান্ত সহায়তার বৃষ্টি দিতে না পারা বিদেশে থাকা মানুষটা অসুস্থ বোধ করে এতে? তারও কষ্ট হয় আপনার আবদারটা না রাখতে পারলে। জানেন তা? জানবেন কেন? আপনারা তো শুধু জানেন, আপনাকেই করা হয়নি। আপনি একক। আপনি কী জানেন আপনি একাই শুধু তার সাহায্যের আবদারে নেই। এমন অসংখ্য এককে ভরে আছে তার কাছে সহায়তা চাওয়ার আবদার।
এই লেখার শুরুতেই লেখা আছে, এই লেখা তাদের জন্য যারা অভিযোগ করেন। গোশ্‌শা করেন। আবদার করেন। প্রয়োজনে বদনামও করেন। সবার জন্য কথাগুলো প্রযোজ্য নয়। তাদের জন্যই প্রযোজ্য, যারা নিজের দায়িত্বটা পালনে অসচেতন অথচ আরেকজন মানুষকে দায়িত্বজ্ঞান দিতে, ফোড়ন কাটতে বিরাট সচেতন।
আপনারা কী ভাবেন। দূর থেকে বলেন আর কাছ থেকেই বলেন, মন থেকে বলা ভালো থেকো। মন থেকে ভালো কামনা করা এমন শুভাকাঙ্ক্ষীর শুভকামনা কী অভিবাসী ও প্রবাসী মানুষগুলো বিদেশ থেকে আঁচ করতে পারেন না? নিশ্চয়ই পারেন। আর পারেন বলেই দূর দেশ থেকে একটা মানুষ তাদের জন্যই দেশে ছুটে যান একবার, দুবার, বারবার। তাদের জন্যই রাত গভীরে দূর পরবাসে একলা কেঁদে বুক ভাসান।

জাহান রিমা: ইমার্জেন্সি ডেন্টাল কেয়ার, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র।