পরবাসীর হৃদয়ে ইদ আনন্দ

সিঙ্গাপুরে ঈদের জামাত
সিঙ্গাপুরে ঈদের জামাত

প্রায় দেড় লাখ বাঙালি শ্রমিক অর্থের প্রয়োজনে প্রিয়জনদের ছেড়ে সিঙ্গাপুরে কাজ করছেন। এ দেশে বোঝা যায় না কখন ফাল্গুন মাস আর কখন চৈত্র মাস। কখন জ্যৈষ্ঠে কাঁঠাল পাকে আর কখন বা পৌষে খেজুরের রস গড়িয়ে পড়ে। শুধু ইদ এলে অনুভব হয় মাতৃভূমিতে আনন্দের ঢেউ চলছে। কারণ প্রবাসীদের তখন প্রিয়জনদের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রমাণ করতে হয়!

প্রযুক্তির আধুনিকতায় হয়তো যোগাযোগটা একটু সহজ হয়ে গেছে। কথা বলে কিংবা দেখে চিত্তে শান্তি পাওয়া যায়। কিন্তু এর মাঝেও যে কাছে না পাওয়ার বেদনায় কতটুকু কষ্ট লুকিয়ে থাকে, কতটুকু যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে তা হয়তো আরেকজন প্রবাসী ছাড়া কখনোই অনুভব করা সম্ভব নয়।
নতুন জামাকাপড় শারীরিক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে। কিন্তু মানসিক কষ্ট কি পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখা সম্ভব? মায়ের হাতের খাওয়া, বাবার সঙ্গে ইদের মাঠে নামাজ পড়া, প্রেয়সীর সংস্পর্শ, আদরের সন্তানটাকে বুকে জড়িয়ে চুমু খাওয়া কিংবা ভাইবোনদের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে রাতভর আড্ডা। এই সব অনুভূতিগুলো ইদের দিন একজন প্রবাসীর ভেতরটা কাঁপিয়ে দেয়। স্মৃতিগুলো নির্মমভাবে বারবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বালিশে মুখ লুকানো ছাড়া কোনো গতি থাকে না। এক সময় প্রবাসী হওয়ার জন্য নিজের প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়।

ঈদের দিনে রান্না
ঈদের দিনে রান্না

কিন্তু তারপরেও আমরা প্রবাসী। সারা রাত কাজ করেও সকালে ইদের নামাজটি পড়ার সাধ জাগে। রান্না করা নিষেধ। ক্যাটারিংয়ের প্যাকেটটা খুললে গন্ধহীন রং মাখানো ভাতগুলোই আমাদের কাছে পোলাও! গল্প করে করে তৃপ্তি সহকারে খাই। যাদের রান্নার ব্যবস্থা থাকে তারা আগের রাতে অথবা শেষরাতে রান্না করে কিছুটা আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। অতঃপর শুরু হয় দেশে মোবাইলে অনবরত কথা বলা। কচি কণ্ঠে যখন শুনি, বাবা তুমি কি ইদের নামাজ পড়ছ? আনন্দে চোখটা কেমন জানি ঝাপসা হয়ে আসে। এক সময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যাই।
শেষ বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কিছুটা দুঃখ লাগব হয়। প্রত্যেকের মনের চাপা কষ্টগুলো ইদের কোলাকুলিতে বুকের সঙ্গে বুক মিলিয়ে ভাগাভাগি হয়ে যায়। অতঃপর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আড্ডা শেষে ক্লান্ত দেহ নিয়ে গতানুগতিক গন্তব্যে ফিরে আসা। কাঁধের ব্যাগ গুছিয়ে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে নিদ্রাদেবীর কোলে লুটিয়ে পড়া। এইতো পরবাসীর ইদ!

মো. শরীফ উদ্দিন: সিঙ্গাপুর।