লেবাননে প্রবাসীদের আনন্দঘন ঈদ উদ্যাপন

আলামিন মসজিদে ঈদের নামাজে সমবেত মুসল্লিরা
আলামিন মসজিদে ঈদের নামাজে সমবেত মুসল্লিরা

লেবাননে অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত শুক্রবার (১৫ জুন) লেবাননে ঈদ উদ্‌যাপিত হয়। রাজধানী বৈরুতের সবচেয়ে বড় মসজিদ আলামিন-এ জামাতের নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। এ মসজিদে কয়েক শ প্রবাসী বাংলাদেশি ঈদের নামাজ আদায় করেন। রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে এখানে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকারও নামাজ আদায় করেন।

এখানে নামাজের আগে দেখা হয় প্রবাসী হেলালের সঙ্গে। তিনি বললেন, একটা জিনিস ভাই খুব মিস করি!
তার কাছে জানতে চাইলাম, সেটা কি ভাই?

বাংলাদেশিদের ঈদের জামাতে নামাজ শেষে কোলাকুলি
বাংলাদেশিদের ঈদের জামাতে নামাজ শেষে কোলাকুলি

হেলাল বললেন, এই যে ধরেন ঈদের দিন নামাজ শেষে কোলাকুলি। কোলাকুলি করতে পারি না। আপন মানুষের সঙ্গে কোলাকুলি করতে না পারলে কোনোভাবেই ভালো লাগে না। এই জিনিসটা খুব মিস করি। প্রবাসে থেকে ঈদের কোনো আমেজ নাই, যতই টাকা পয়সা ইনকাম করি না কেন।
ঈদ নিয়ে তাঁর মনের কথাগুলো তিনি এভাবে বললেন। হেলালের বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। তাঁর বয়স ৪০। দুই সন্তান আছে। ঈদের জামাতে নামাজ শুরুর আগে বসে মোবাইলের স্ক্রিনে সেভ করা সন্তানের হাসিমাখা মুখ দেখছিলেন আর মুখ ভার করেছিলেন। রাজ্যের মন খারাপ করে নামাজ আদায় করলেন তিনি।

বাংলাদেশিদের ঈদের জামাতে বক্তব্য দেন আবদুল মোতালেব সরকার
বাংলাদেশিদের ঈদের জামাতে বক্তব্য দেন আবদুল মোতালেব সরকার

মধ্যপ্রাচ্যে ঈদ হয় বাংলাদেশের একদিন আগে, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে। লেবাননেও একই দিন ঈদ হয়। এখানে আরও কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, প্রবাসে ঈদের আনন্দ তাঁদের কাছে অনেকটাই পানসে। একা একা এখানে ঈদে তেমন মজা নেই। আত্মীয়স্বজনের বাসায় যেতে পারেন না। নিজের সন্তান, বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হয় না। অদৃশ্য কষ্ট নিয়ে পরবাসে দিন যাপন করেন তারা।
তবে এবার কিছুসংখ্যক প্রবাসীর এ কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। ঈদের দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকার তাঁর সরকারি বাসভবন তথা বাংলাদেশ হাউসের খোলা চত্বরে প্রবাসীদের জন্য আয়োজন করেছিলেন এক ঈদ ওপেন হাউসের। দূর-দূরান্ত থেকে এই আয়োজনে হাজির হয়েছিলেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি।
মাত্র বছর পাঁচেক হলো লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস হয়েছে। রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব সরকারের উদ্যোগে ইদানীং এমন অনেক আয়োজন হচ্ছে লেবাননে। আগে স্থানীয়রা বাংলাদেশকে যেভাবে চিনতেন না। এখন অন্যভাবে চিনছেন বাংলাদেশকে। বিভিন্ন প্রকার অনুষ্ঠান করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য স্থানীয়দের কাছে সুন্দরভাবে মেলে ধরছেন। এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিণী সাদিয়া সরকার অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের স্বাগত জানান ও সকলের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ওপেন হাউসে প্রবাসীরা
ওপেন হাউসে প্রবাসীরা

উল্লেখ্য, গত প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশকে লেবানিজদের কাছে পজেটিভলি তুলে ধরার জন্য চেষ্টা করছেন রাষ্ট্রদূত। খুব অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে ইতিমধ্যে কিছু সমস্যার সমাধান করেছেন তিনি। এ জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানান প্রবাসীরা। তারা বলেন, দূতাবাস এখন প্রবাসী বান্ধব। দূতাবাস কোনো জরিমানা ছাড়াই চার হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এখনো অনেক বাংলাদেশি লেবাননে অবৈধ অবস্থায় আছেন। প্রবাসীরা তাদের বৈধ করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। এ সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রদূত তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। ঈদের ছুটিতেও থেমে নেই রাষ্ট্রদূতের কর্মকাণ্ড। অসুস্থ দুজনকে তিনি ভর্তি করিয়েছেন রফিক হারিরি হাসপাতালে। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে অনুষ্ঠানে আগত প্রবাসীরা।

ওপেন হাউসে প্রবাসীরা
ওপেন হাউসে প্রবাসীরা

ওপেন হাউসে অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বাজছিল জাতীয় কবির সেই বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এখানে আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদ্‌যাপন করে প্রবাসীরা কিছুক্ষণের জন্য যেন বাংলাদেশেই ফিরে গিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে আগত সকলের জন্য রাখা হয় বিভিন্ন ধরনের বাংলাদেশি খাবার। ছিল পোলাও, রোস্ট ও গরুর মাংস ভুনাসহ হরেক রকমের মিষ্টান্ন ও ফল। কয়েক শ প্রবাসী বাংলাদেশি এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

ওপেন হাউসে প্রবাসীরা
ওপেন হাউসে প্রবাসীরা

এর আগে সকালে আলামিন মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশিদের আয়োজিত কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত পরিদর্শন করেন। তিনি প্রবাসীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন। ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসীরা রাষ্ট্রদূতকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় রাষ্ট্রদূত প্রবাসীদের জানান, আগামী ঈদে প্রবাসীদের নিয়ে আলাদা ঈদের জামাত আয়োজন করার উদ্যোগ নেবেন তিনি। যাতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। বৈরুতে বেশ কয়েকটি ঈদের জামাতের আয়োজন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কোরবানির ঈদের নামাজ বড় করে করার জন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে সহযোগিতা চেয়েছেন রাষ্ট্রদূত।

জুবায়ের কবির: বৈরুত, লেবানন।
ছবি: বাবু সাহা, সাগর হাওলাদার, আশিক রহমান ও আরমান প্রধান।