জেনেভায় ঈদ পুনর্মিলনী

বাংলাদেশ ক্লাবের সদস্যরা
বাংলাদেশ ক্লাবের সদস্যরা

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঈদুল ফিতর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর অমর সৃষ্টি ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ’ গানের প্রতিটি চরণে যেন ঈদের তাৎপর্যকে এভাবেই সুরের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর প্রবাসজীবনে চরম কর্মব্যস্ততার মাঝে একটি ঈদ পুনর্মিলনী প্রতিটি বাঙালির জীবনে যেন ঈদের খুশি আরও দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসে।

স্থানীয় নেতারা
স্থানীয় নেতারা

এ বছর জেনেভায় শুক্রবার ঈদ হওয়াতে বেশির ভাগ প্রবাসীকেই তাদের কর্মস্থলে যেতে হয়েছিল। ঈদ জামাত ছাড়া তাই কারও সঙ্গে কারও দেখাসাক্ষাৎ হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। সে ভাবনা থেকেই গতকাল রোববার (২৪ জুন) দুপুরে স্থানীয় ইউওজি হলের অডিটোরিয়ামে জেনেভার বাংলাদেশ ক্লাব আয়োজন করে ঈদ পুনর্মিলনীর।
এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান জেনেভায় বসবাসরত প্রতিটি প্রবাসী বাঙালির মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিলেন সেদিন জেনেভার সব ধর্ম, সব দল ও সব মতের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দলের স্থানীয় নেতারা ছাড়াও ছিলেন সব পেশার ও মতের মানুষজন। এ এক অভূতপূর্ব ব্যাপার বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।

নারীদের উপস্থিতি
নারীদের উপস্থিতি

প্রতি বছরের মতো বাংলাদেশ ক্লাব তাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় এই ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে এবং এই অনুষ্ঠানটি সব বয়সের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের পর চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেনসহ তুলি বড়ুয়া, রুমি বড়ুয়া, পুনম ইসলাম, রবিন বড়ুয়া, জুরিখের স্থানীয় শিল্পী মুন বণিক ও প্যারিস থেকে আগত শিল্পী সাগর বড়ুয়া ও অনুভব চ্যাটার্জি। জেনেভার বাংলা পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রিয়াজুল হক ফরহাদ একটি একক সংগীত পরিবেশন করেন। এ ছাড়া পাঠশালার ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করে।

বাংলা পাঠশালার পরিবেশনা
বাংলা পাঠশালার পরিবেশনা

সবশেষে ছোট বাচ্চাদের মাঝে র‍্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে দশটি আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণে সাহায্য করেন এসবিসিএসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। অনুষ্ঠানটি সার্বিকভাবে পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট চৌধুরী আমজাদ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন।
যাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়েছিল তারা হলেন; স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম, শ্যামল খান, ক্লাবের সাবেক সভাপতি নজরুল জমাদার ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সম্পাদক শাহ আলম এগারো। বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ারুল ইসলাম জর্জ, মাহবুবুর রহমান, কুদরত এলাহী টুকু ও মোল্লা নজরুল।

বাংলা পাঠশালার পরিবেশনা
বাংলা পাঠশালার পরিবেশনা

সার্বিক সহযোগিতার জন্য যাদের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয় তারা হলেন; নিজাম উদ্দিন, খলিলুর রহমান, আকবর, ফ্রান্স থেকে শাহীন মজুমদার, যিশু বড়ুয়া, মোজাম্মেল হক জুয়েল, জুরিখ থেকে কারার কাউছার, ইমরান খান মুরাদ, নুরুল্লাহ চৌধুরী ও জেনেভার জাবেদ চৌধুরী, আবুল কালাম, জাহিদ চৌধুরী, লুৎফর রহমান, রফিকুল ইসলাম রোকন, জাকির হোসেন রাজ্জাক, বাপ্পী, টিপু সুলতান ও হাজি শাহিন।

র‍্যাফেল ড্র
র‍্যাফেল ড্র

বিপুলসংখ্যক নারী ও শিশুদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটি বাড়তি মাত্রা বহন করে।
‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন, হাত মেলাও হাতে
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল
ইসলামে মুরিদ।’

উপস্থিতি
উপস্থিতি

বিদ্রোহী কবির শাশ্বত এই বাণীর তাৎপর্য আমাদের বাস্তব জীবনেও যেন এর যথাযথ প্রতিফলন ঘটে এই হোক প্রবাসী প্রতিটি বাঙালির প্রত্যাশা। আমরা সকল মতভেদ ভুলে নিরপেক্ষভাবে এক দেশের এক মানচিত্রের এক প্ল্যাটফর্মের এক জাতীয়তার পরিচয়ে পরিচিত হব সারা বিশ্ব দরবারে। কেননা অনেক কষ্টের অর্জন আমাদের এই বাংলাদেশ।

রাওদাতুল জান্নাত: জেনেভা, সুইজারল্যান্ড।