জাপানে নিরুত্তাপ বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকার খেলার একটি দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকার খেলার একটি দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

পুরো বাংলাদেশ এখন বিশ্বকাপের জ্বরে কাঁপলেও জাপানে এর তেমন কোনো উত্তাপই নেই। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশিদের উন্মাদনা নতুন নয়। আর এ ক্ষেত্রে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মৌসুমি সমর্থকেরা বরাবরই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে আসছেন। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলের জীবনী নিয়ে একটি গল্প পড়েছিলাম। আর তখন থেকেই আমার কাছে ফুটবল মানেই ব্রাজিল। ব্রাজিলই যে নান্দনিক ফুটবলের প্রতিভূ এখন পর্যন্ত এটাই ধ্রুব সত্য।

এবারের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশকে ভীষণ রকম মিস করছি। বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশের কোনো বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে হলে থাকার সুবাদে ২০০২ ও ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ হলে বসে উপভোগের সুযোগ হয়েছিল। এখনো এই স্মৃতি বেদনাতুর করে তোলে।

ছেলেসহ লেখক
ছেলেসহ লেখক

জাপানে আসার আগে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ নিয়েও বেশ উৎফুল্ল ছিলাম। আশা করেছিলাম এখানেও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দিনগুলো ফিরে পাব। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। এখানকার নিরুত্তাপ বিশ্বকাপ নিয়ে রীতিমতো মন খারাপ। ফুটবল জাপানে জনপ্রিয় হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে দৃশ্যমান কোনো উন্মাদনা নেই। মেক্সিকো জার্মানিকে হারিয়ে আনন্দ উদ্‌যাপন করতে গিয়ে যেখানে ভূমিকম্প ঘটিয়েছে, সেখানে জাপান কলম্বিয়াকে হারানোর পরে আমি একটি হাততালির শব্দও শুনতে পাইনি। আমার দুজন জাপানি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা বিশ্বকাপ খেলা দেখেন কি না। তাদের দুজনেরই একই উত্তর, যেহেতু জাপান প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে জিতেছে তাই তারা জাপানের পরবর্তী খেলাগুলো দেখবে।
সত্যি বলতে কী, বিশ্বকাপ নিয়ে বাংলাদেশিদের মতো এত আবেগ হয়তো আর কারও নেই। আর এ কারণেই যেখানে ব্রাজিলের ৫৩ শতাংশ মানুষের চলমান ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো আগ্রহই নেই, সেখানে পুরো বাংলাদেশই এখন ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে বুঁদ হয়ে আছে। জাপানে থাকায় বিশ্বকাপকে অনেক মিস করছি বটে, তবে স্বস্তির বিষয় হলো ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কাদা-ছোড়াছুড়ি থেকে তো অন্তত নিরাপদ দূরত্বে আছি। সবশেষে, এবারও ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিতুক এই আশায় দিন গুনছি।
...

মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ও জেডিএস ফেলো, কিউশু ইউনিভার্সিটি, জাপান। ইমেইল: <[email protected]>