কোরিয়ার চনবুকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঈদ পুনর্মিলনী

ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

দক্ষিণ কোরিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদ ফিতর উদ্‌যাপন করেছেন গত ১৫ জুন শুক্রবার। রাজধানী সিউলের ইথেওন ইসলামিক সেন্টার (সেন্ট্রাল মসজিদ অব কোরিয়া), বুসান, দেগু, জয়ুনজু, আনসাং, সুআন, দেজন, ইনচিয়ন, গোয়াংজু, জেজু দ্বীপ, গিয়ংগিদু, মাছুক, খুনসান ও পিয়ংটেকসহ আরও কয়েকটি শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানীয় মুসল্লি ও কোরীয় মুসলিম ফেডারেশনের (কেএমএফ) ব্যবস্থাপনায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এসব জামাতে কোরীয় মুসলমানদের পাশাপাশি বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিরিয়া, মিসর, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, তুরস্ক, মরক্কো, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, লিবিয়া ও ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী মুসলমানেরা নামাজ আদায় করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার জল্লাবুকদু প্রদেশে প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জয়ুনজু সিটির আবু বকর সিদ্দিক মসজিদে। এই জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামিক গবেষক ও কোরিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি ড. আবদুল ওয়াহাব। প্রায় পাঁচ শ মুসল্লির উপস্থিতিতে খুতবায় আবদুল ওয়াহাব বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সকল ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। নামাজ শেষে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মধ্যে কোলাকুলি আর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পুরো মসজিদ ক্যাম্পাসে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি করে।

ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

এবারের ঈদ সরকারি কর্ম দিবস শুক্রবারে হওয়ায় প্রবাসীদের অনেককেই সকালে নামাজ শেষে যার যার কর্মস্থলের উদ্দেশে ছুটতে দেখা যায়। তবে পরের দুই দিন শনিবার ও রোববার সরকারি ছুটি থাকায় বাংলাদেশি অনেকেই বিভিন্ন দল ও কমিউনিটিভিত্তিক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করেন। এসব অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জল্লাবুকদু প্রদেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বিডি গ্রুপ জয়ুনজু (BD-GROUP JEONJU) কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ ঈদ পুনর্মিলনী। ঈদের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ জুন শনিবার চনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত এই ঈদ পুনর্মিলনীতে চনবুক বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় সত্তরের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক নোমান শিবলীর সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসাইনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন কোরিয়া অ্যাটমিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পিএইচডি শিক্ষার্থী শরিফ মুহম্মদ নাসির উদ্দিন। আয়োজক কমিটির সদস্য কবির রাসেল আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন চনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. হান জাং চে।

অধ্যাপক চে তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন জয়ুনজুর (বিডি গ্রুপ জয়ুনজু) সকল সদস্যদের ঈদের শুভেচ্ছা জানান। পাশাপাশি বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমাকে এখানে দাওয়াত করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশি খাবার খেয়েছি। বাংলাদেশি খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু। তাই আজকের অনুষ্ঠানে আমি আমার মাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই। ভবিষ্যতেও আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করব।

অধ্যাপক হান জাং চে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন
অধ্যাপক হান জাং চে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ছিল নতুনদের পরিচয় ও ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবারের স্বাদ গ্রহণ। দ্বিতীয় পর্বে ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আড্ডা ও প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান।
সবাই মিলে দুপুরে বাহারি বাংলা খাবারের খাওয়ার পর শুরু হয় মন মাতানো আড্ডা ও খেলাধুলা। প্রবাসজীবনের নানান ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ছোট পরিসরে হলেও সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি খুবই আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। যেমনটি বলছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের অতি পরিচিত মুখ, নৃত্যশিল্পী মুহম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল রাত তিনটা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের খাবার রান্না করে খুবই ক্লান্ত ছিলাম। কিন্তু আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে সব ক্লান্তি ভুলে গেছি। এই দূর প্রবাসে সবাই এক দিনের জন্য হলেও দেশীয় খাবার এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারছি। এটা অনেক আনন্দের। আমারও একটা নৃত্য পরিবেশনের কথা ছিল, কিন্তু প্রচণ্ড গলা ব্যথার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

খেলাধুলা শেষে বিজয়ীদের (মেয়েদের সুই সুতার খেলায় শামীমা নাসরিন, তাজভী রহমান ও শিরিন শারমিন গুঞ্জন এবং ছেলেদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় খালেদুর রহমান, আবদুল লতিফ ও মাসুদ রানা) হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠান আহ্বায়ক শিবলী নোমান, ড. আবদুল লতিফ সরকার, ড. সানোয়ার হোসেন, ড. মেহেদি হাসান, মুহাম্মদ মোতালিব ও মুহম্মদ শামীম আলমগীর। অনুষ্ঠানটি সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. শরিফুজ্জামান সবুজ, ড. হ্যাপি মোস্তফা জামাল, আনিছুর রহমান হীরক, মিনারুল হাসান, জিয়াউর রহমান, আসিফ মান্নান, আবু হানিফ ও মণিরা খানম প্রমুখ।

আফজাল হোসেন: পিএইচডি গবেষক, চনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া।