প্রবাসে ঈদ বিনোদন

হাত্তা বিনোদনকেন্দ্রে এক বন্ধুর সঙ্গে লেখক
হাত্তা বিনোদনকেন্দ্রে এক বন্ধুর সঙ্গে লেখক

ঈদ কথাটি শুনতেই খুশি যেন উপচে পড়ে মনেপ্রাণে। ঈদ মানেই তো আনন্দ। ঈদ মানেই খুশি। আপনজনের সান্নিধ্য পাওয়ার উপলক্ষও ঈদ। ঈদের ছুটিতে আকাশের তারা নাগালে পাওয়া যায়। মা-বাবা, ভাই-বোন, সন্তানকে নিয়ে আনন্দ যেন উদ্‌যাপন করাও এই ঈদ।

তবে এ কথাটি বোধ হয় সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়। যখন কারও নামের সঙ্গে লেখা থাকে প্রবাসী। এই প্রবাসীরা কি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন? ঈদ পার্বণে কি আপনজনদের কাছে পান? পান না। সারা দিন কাজ আর কাজের পেছনে দৌড়ানোই তো প্রবাসীদের লক্ষ্য। কাজ করলেই যে টাকা মিলবে। যেই টাকাতে অন্নসংস্থান হবে পরিবার ও পরিজনের। চিত্তবিনোদনের কথা ভাবাই যেন তাদের কল্পনাবিলাস।
মধ্যপ্রাচ্যে ঈদের দিন সূর্য পূর্বাকাশে উঁকি দিলেই শুরু হয় নামাজ। প্রসঙ্গত মধ্যপ্রাচ্যে খুব সকালেই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে অচেনা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ ও কোলাকুলি করতে হয়। পরে মোবাইলের সেট হাতে নিয়েই দেশে আপনজনের খবরাখবর নিতে উদ্‌গ্রীব হয়ে যেতে হয়। এরপর লম্বা ঘুম। এই ঘুমের জন্যই যেন অধীর অপেক্ষা।

হাত্তা বিনোদনকেন্দ্রে এক বন্ধুর সঙ্গে লেখক
হাত্তা বিনোদনকেন্দ্রে এক বন্ধুর সঙ্গে লেখক

অন্য দিন ভোরের আলো ফোটার আগেই তো কর্মস্থলে উপস্থিতি। পরিতৃপ্ত ঘুম যেন ডুমুরের ফুলের সন্ধান। তাই ছুটিতে লম্বা ঘুম। সময় মিললে তো বিনোদনের সন্ধানে বের হওয়া। দীর্ঘদিন কর্মব্যস্ত সময় পার করার কারণে অনেকে বাইরের জগৎ ও প্রবাসের বিনোদনের স্থান বিষয়েও জানেন না। বিশেষত সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীদের সুন্দর ও তুলনামূলকভাবে অপরিচিত বিনোদন স্থানের সন্ধান দিতেই এই লেখা। এবারের ঈদে আমরা কয়েকজন প্রবাসী গিয়েছিলাম সেখানে।
অপরিচিত এ স্থানটির নাম হাত্তা। দুবাই প্রদেশে এর অবস্থান। ওমান সীমান্ত থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা হাত্তা যেন মরুর বুকে পল্লি বাংলার মনোরম গ্রাম। মরুভূমিতে সবুজ বৃক্ষের স্বল্পতা থাকলেও এখানে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। খেজুর, আম, কলা, লিচু ও বাতাবি লেবুর সঙ্গে দেখা যায় আঙুরের মতো ফলের গাছও।

হাত্তা বিনোদেনকেন্দ্রে বন্ধুদের সঙ্গে লেখক
হাত্তা বিনোদেনকেন্দ্রে বন্ধুদের সঙ্গে লেখক

সবুজের হাতছানি দেওয়া হাত্তার পাহাড়ের বুকে সবুজ বৃক্ষ না থাকলেও তামাটে পাহাড়ের বুক চিড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য হাত্তা ড্যাম। লেক সাদৃশ্য এই ড্যামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নৌকা তথা বোট। এই সব বোটে করে দর্শনার্থীরা স্বচ্ছ পানিতে পাড়ি দেন এপার থেকে ওপার আর ওপার থেকে এপারে। এই ড্যাম তথা লেকে নামলে যেন চট্টগ্রামের ফয়েজ লেকের মনোরম দৃশ্য চোখের সামনে ভাসতে থাকে। এ যেন প্রবাসে প্রকৃতিময় বাংলার মনোরম পটভূমি। প্রতি বছর দুবাই প্রশাসকের উদ্যোগে শীতকালীন মেলাতে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত বিনোদন কর্মীরা এখানে উপস্থিত দর্শকদের বিনোদন দিতে উপস্থিত থাকেন। এই মেলায় শাহরুখ খানের মতো তারকারাও যোগ দিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে থাকেন।

দুবাই থেকে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালিয়ে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় হাত্তায়। এখানে প্রাকৃতিক জাদুঘর ছাড়াও চিড়িয়াখানা ও অরণ্যহীন তামাটে পাহাড় প্রাণের তৃষ্ণা মিটিয়ে দিতে পারে। যে পাহাড়গুলো মনে করে দেবে রূপময় রাঙামাটিকে। স্বজনহীন প্রবাসীরা ঈদের ছুটিতে এখানে কিঞ্চিৎ বিনোদনের তৃপ্তি মেটাতে সক্ষম হবেন।

কাজী এনাম উদ্দীন: আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইমেইল: <[email protected]>