মেঘ রোদ্দুরের খেলা-তিন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আতিক তখনো ফোনে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে হাসছে—হি-হি, হি-হি! হঠাৎ হঠাৎ অট্টহাসিও দিচ্ছে। ইয়াপ, সুইট এজ!...ইউ আর মাই প্রিন্সেস! হা-হা-হা।

রাকিব হাট দরজা গলে আতিকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকাল।

আতিক বালিশটা ডানহাতে বুকে চেপে ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে কথা বলছে। তার বাম হাতে কর্ডলেসটা ধরা।

রাকিব ভাবল, এ এক আজব মানুষ আতিক! হঠাৎ পরিচয়ে যে কারও সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলাপ করতে পারে। কিন্তু সে পারে না। টেলিফোনে কাউকে দুই-একটা ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করার পরই সে কথার খেই হারিয়ে ফেলে। তবে সে খুব ধৈর্য ধরে মানুষের কথা শোনে।

রাকিব জানে, এ বাসায় দুজন মানুষ পাশাপাশি বসবাস করলেও তারা দুজন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর মানুষ। আতিক হলো খোলামেলা ও খামখেয়ালি টাইপের। নিজের ভালোমন্দ দুটোই ঢাকঢোল পিটিয়ে বেড়াতে ভালোবাসে। সুযোগ পেলেই নাইট ক্লাবে চলে যায়, মদ পান করে। নাচতে নাচতে কোনো মেয়েকে পটিয়ে কোথাও রাত যাপন করে আসে। কিন্তু আবার যখন কোনো তাবলিগ জামাত বা ধর্মীয় ব্যাপার-স্যাপার হয়, তখন থাকে প্রথম কাতারে। নারীঘটিত ব্যাপারগুলো যেমন তার কাছে কৌতুকের ব্যাপার, তেমনই ধর্মীয় ব্যাপারগুলো নিয়েও সে কৌতুকবোধ করে। এদিকে নিউজিল্যান্ডের কিছু কিছু মেয়ে আছে যাদের দুই পেগ হুইস্কি, দুই বোতল বিয়ার খাওয়ালেই রাতের জন্য কাত হয়ে যায়!

কিন্তু সে নিজে? রাকিব ভাবল, তার ভালো লাগাগুলো তার নিজস্ব। মন্দ লাগাগুলোও তার নিজস্ব। সে সবকিছুই নিজের ভেতর রাখে। একটার সঙ্গে আরেকটার মেশায় না। বাইরের সব ব্যাপার সে বাইরেই রেখে আসে। বাসায় টেনে আনে না। সে নিজেকে বিশ্বাস করে। সে নিজস্ব সুখদুঃখ অন্যের কাছে প্রকাশ করে কোনো স্বকীয়তা খুঁজে পায় না।
স্বকীয়তা, হ্যাঁ স্বকীয়তা! রাকিব ভাবল, যার ভেতরে কবিত্ব ভাব আছে, তারা এত স্বকীয়তা খুঁজে বেড়ায় কেন? সে একসময় কবিতা লিখত। প্রথম সে কবিতা লেখা শুরু করে স্কুল ম্যাগাজিনে। বাংলার শিক্ষক বদির আহমেদ স্যারের অনুপ্রেরণায় আর তার ছোট চাচিকে মুগ্ধ করার জন্য!
এখন অবশ্য সে এমন করে কবিতা লেখে না। মাঝেমধ্যে হয়তো কবিতায় তাড়িত হয়। কবিতায় তাড়িত হয়ে দুই-চার লাইন ডায়েরির পাতায় লিখে রাখে।
আর কবিতা! রাকিব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আতিকের রুমের হাট দরজা থেকে সরে কিচেনে এসে দাঁড়াল। কিচেনের বেঞ্চটাপের একপাশে মাইক্রোওয়েবের গা ঘেঁষে একটা নতুন কেনা ব্রেড পড়ে থাকতে দেখল। আতিক নিশ্চয়ই কাজ শেষে আসার সময় নিয়ে এসেছে।
ব্রেড দেখে রাকিব খানিকটা খুশিই হলো। ভাবল যাক, সকালের নাশতাটা ভালোয় ভালোয় করা যাবে। এমনিতে শেলফে হুইডবিক্স বা সিরিয়াল কিছুই নেই। ফ্রিজে দুধের কন্টেইনারে এক ফোঁটা দুধও নেই। খালি কন্টেইনারটাই প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পড়ে আছে।
রাকিব চার স্লাইস ব্রেড নিয়ে টোস্টারে দিল। পাশেই হট ওয়াটার জগ। টেপ থেকে পানি নিয়ে সে হট ওয়াটার জগটা অন করে দিল। ফ্রিজের ওপর একটা স্টিলের খাঁচায় পাঁচটা ডিম এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। ওখান থেকে একটা ডিম নিয়ে ফ্রাইপ্যানটা চুলায় বসিয়ে তেল খুঁজতে গিয়ে দেখল তেলের কন্টেইনারে এক ফোঁটা তেলও নেই।
রাকিবের মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেল।
টেলিফোন রেখে রুম ছেড়ে আতিক তখনই কিচেনে এল। মুখে কৌতুকের হাসি। বলল, চিজ একখান রে দোস্ত!
আতিককে দেখে ও তার কথা শুনে রাকিবের মেজাজটা তৎক্ষণাৎ বিগড়ে গেল। তার মেজাজ বিগড়ে গেলে বরাবরই তার চেহারা ভারী হয়ে যায়। সে গম্ভীর গলায় বলল, কীসের চিজ?
—ওই যে, তুমি আমাকে ফোনটা ধরিয়ে দিলে যে, যার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বললাম...।
—ভালো কথা, সে চিজ হলো কীভাবে?
—না, মানে।
—বলো সে কীভাবে চিজ হলো?
রাকিবের গলাটা আরও গম্ভীর ও কঠিন শোনাল।
আতিক খানিকটা থতমত খেয়ে হাসিটা গিলে ফেলল। বলল, না মানে, ব্লোন্ডি গার্ল...মানে, যার সঙ্গে এতক্ষণ ধরে কথা বললাম!...মানে দোস্ত! আতিক পুরো কথাটা না বলেই থেমে গেল।
রাকিব দৃষ্টিটা আরও গম্ভীরতর করে সরিয়ে নিল।
আতিক জিজ্ঞেস করল, হোয়াট হ্যাপেন, ইজ এনিথিং রং?
রাকিব কয়েকবার মাথা নাড়ল। তারপর সে হাত বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের খালি কন্টেইনার নিল। সেটাকে নেড়ে সে জিজ্ঞেস করল, হোয়াট ইজ দিস? ডু ইউ হ্যাভ এনি এক্সপ্লেনেশন?
—ইয়ে মানে তেলের খালি কন্টেইনার।
—তাতো দেখতেই পাচ্ছি, কন্টেইনারটা খালি কেন?
—ও, সরি, সরি।
—কীসের সরি?
—সরি দোস্ত, আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার ওপর কেন রাগ করছ? সত্যি দোস্ত, আমি পুরোপুরি ভুলে গেছিলাম।
—কী ভুলে গেছিলে?
—সুপারমার্কেটে যেতে।
—তুমি ভুলে গেছিলে, না...।
রাকিব আবার মাথা নাড়ল। বলল, কেন মিথ্যে বলছ? আমি গতকাল টুনা ফিস্ ভাজার সময়ও দেখেছি কন্টেইনারে বেশ খানিকটা তেল রয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখি এক ফোঁটাও নেই। এর কারণ কী বলো, তেল কি হাওয়া হয়ে গেছে?
—তেল তো হাওয়া হওয়ারই জিনিস। আতিক আবার হাসার চেষ্টা করল।
রাকিব একবার খানিকটা বাজখাই গলায় বলল, শাট আপ, দিস ইজ নট ফান।
আতিক তৎক্ষণাৎ দৃষ্টিটা নামিয়ে পরক্ষণই আবার দৃষ্টিটা তুলল। একটু নরম গলায় বলল, সরি দোস্ত, কাল সন্ধ্যায় কাজে যাওয়ার আগে কন্টেইনারে যতটুকু তেল ছিল তার সবটা দিয়ে এগ-ফ্রাইড রাইস করেছিলাম। তুমি তো জানো, আমি ওই সব টুনা ফিশের ক্যান পছন্দ করি না। কেমন আইসটা আইসটা গন্ধ লাগে। বমি আসে। তুমি বিশ্বাস কর, এগ-ফ্রাইড রাইস তোমার জন্যও করেছিলাম। পরে মজা লাগাতে একাই সবটুকু খেয়ে ফেলেছি। হি-হি, হি-হি!
আতিকের হাসি দেখে রাকিবের মেজাজটা এবার বিগড়ে গেল না। তবে সে আগের মতোই গম্ভীর দৃষ্টি মেলে তার দিকে তাকাল। ভাবল, একজন মানুষ কী সুন্দরভাবে এমন করে মিথ্যে কথা বলতে পারে? এই তো, মাসখানেক আগেই একদিন তাকে পেঁয়াজ কুঁচি ও তেল দিয়ে টুনা ফিশ ভাঁজতে দেখে সে ঈষৎ তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিল, কী যে করো না দোস্ত, এসব ক্যানের টুনা ফিশ আবার ভাঁজতে হয় নাকি? অযথা তেল আর পেঁয়াজ-মরিচ নষ্ট করা? এই দেখ আমি কেমন কাঁচাই খাই! বলেই সে একটা টুনা ফিসের ক্যান ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে খুলে গপগপ, গপগপ করে খেয়ে ফেলেছিল!
কিন্তু আজ আতিক কেমন অন্য কথা বলছে।
রাকিব এটাও জানে, আতিক কাল এগ-ফ্রাইড রাইস শুধু তার নিজের জন্যই করেছিল, বাড়তি কোনো এগ-ফ্রাইড রাইস সে কখনই করেনি।
রাকিব জিজ্ঞেস করল, তোমাকে কি এক সপ্তাহ ধরে সুপারমার্কেটে যেতে বলা হচ্ছে না, তুমি যাওনি কেন?
আতিক ব্যস্ত হয়ে বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে দোস্ত, আমি ফ্রেশ হয়ে এই পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যেই যাচ্ছি।
রাকিব আবার মাথা নাড়ল। বলল, তুমি এখন সুপার মার্কেটের যাবে?
—হ্যাঁ, এখনই যাচ্ছি।
—তুমি সত্যি এখন যাবে?
—কেন, তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?
—না, কারণ তুমি ভালো করেই জানো, আজ ও কাল ইস্টার হলিডে উপলক্ষে সব সুপারমার্কেট ও শপিং মল বদ্ধ থাকবে। তুমি নাটক করছ।
—ও, সরি সরি! তাইতো! বিশ্বাস করো, আমি নাটক করছি না। আমার সত্যি মনে ছিল না। বলেই আতিক চেহারায় অপরাধী ভাব টেনে রাকিবের দিকে তাকাল।
রাকিব আর কিছু বলল না।
পরিবেশটা আবার কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেল।
বেঞ্চটপের ওপর রাখা ডিমটা নড়তে নড়তে নড়ছে না। সিংকের ট্যাপ থেকে থেমে থেমে পানির ফোঁটা পড়ছে—টুপ টুপ, টুপ টুপ। হট ওয়াটার জগের শিস দেওয়া বলক ওঠা পানি থেকে এখনো সরু সরু রেখা করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।
আতিক দৃষ্টি এদিক-ওদিক করল। আর তখনই তার চোখ গিয়ে পড়ল গিয়ে টোস্টারের ওপর। দেখল, টোস্টারের চার খোপে চার স্লাইস ব্রেড খাঁড়া করে দেওয়া। কিন্তু টোস্টারের বাটন দাবিয়ে দেওয়া হয়নি।
আতিক পরিবেশটা হালকা করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে বলল, দোস্ত, তুমি টোস্টারে ব্রেডের স্লাইসগুলো দিয়েছ, কিন্তু টোস্টারের বাটন দাবাও নাই! হে হে, হে হে!
রাকিব টোস্টারটার দিকে তাকাল। তৎক্ষণাৎ তার মনের গম্ভীর ভাব মিলিয়ে গিয়ে ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। সে হাসিটা আড়াল করতে তাড়াতাড়ি টোস্টারের বাটন দাবিয়ে দিল।
আতিক বুঝতে পারল রাকিবের রাগ কিছুটা কমেছে। তাই সে পরিবেশটা আরও সহজ করার জন্য বলল, দোস্ত, আমার জন্যও দুই-তিন স্লাইস ব্রেড টোস্ট করো না, প্লিজ!
রাকিব জিজ্ঞেস করল, কি দিয়ে খাবে?
—কেন, ডিম ভেজে?
—ডিমটা ভাজবে কি দিয়ে?
—দোস্ত, ওটা তোমার ভাবতে হবে না, তুমি দেখোই না! হে হে, হে হে!
রাকিব চুপ হয়ে গেল।
আতিক ফ্রিজ থেকে মার্জারিন নামিয়ে এক চামচ খালি ফ্রাইপ্যানে ছেড়ে দিল। চুলা অন করতেই কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রাইপ্যানের সমস্ত পেটটা ভিজে উঠল। একটা প্লাস্টিকের বাটিতে তিনটা ডিম ফাটিয়ে রাকিবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, দোস্ত, ডিমটা কি পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে ভাজব, নাকি এমনই ছেড়ে দেব?
—বাসায় তো মনে হয় পেঁয়াজ নাই।
—তা নেই, গতকালই এগ-ফ্রাইড রাইস করার সময় খুঁজে পাইনি। তবে একটা উপায় আছে।
—কি উপায়?
—আমি গতকাল ওনিয়ন ফ্ল্যাক্স দিয়ে এগ-ফ্রাইড রাইস করেছিলাম। এখন ওগুলো দিয়েই ডিম ভাজব।
—ওগুলো তো বেরেস্তা করার জন্য আনা। বেশ পুরোনো।
—ড্রাই জিনিস পুরোনো হলেও অসুবিধা নেই। ঠেকার কাজ তো চলবে।
—আচ্ছা, তাই করো।
আতিক আত্মপ্রত্যয়ে হাসল।
ওদিকে ক্লিক শব্দ করে ব্রেডের স্লাইস চারটা লাফিয়ে উঠল। রাকিব আর কথা না বাড়িয়ে ওগুলো একটা প্লেটে নিয়ে আরও চারটা ব্রেডের স্লাইস টোস্টারে চার খাপে খাঁড়া করে বাটনটাও চেপে দিল।
এদিকে চুলা তেতে আরও উঠেছে। ভিজে ওঠা ফ্রাইপ্যানে মার্জারিন বিন্দু বিন্দু ফোঁটা হয়ে পিট পিট করছে। আতিক আরেক চামচ মার্জারিন ফ্রাইপ্যানে দিয়ে চুলাটা কমিয়ে দিল। ফেটিয়ে নেওয়া ডিম দুটোতে ওনিয়ন ফ্লেক্স হাতের মুঠোয় মর-মর ভেঙে সঙ্গে কয়েকটা শুকনো মরিচও দিয়ে দিল। তারপর প্লাস্টিকের বাটিতে চামচের ঝড় তুলল, ব্লিক ব্লিক ব্লিক, কট কট কট।
রাকিব বলল, ডিমে কিন্তু লবণ মেশাও নাই।
আতিক হেসে বলল, ও তাইতো! বলেই সে লবণের কৌটা থেকে একটা চামচে পরিমাণ মতো লবণ নিয়ে ডিমের বাটিটায় মিশিয়ে নিল। সে আবারও প্লাস্টিকের বাটিতে চামচের ঝড় তুলল, ব্লিক ব্লিক ব্লিক, কট কট কট!
কোনো কবিতার ছন্দের মতো যেন শব্দটা। রাকিব শব্দটা শুনতে শুনতে আতিকের চেহারার দিকে তাকাল। সে ভাবল, এ এক অদ্ভুত ধরনের মানুষ আতিক! যার ওপর প্রতিনিয়ত রাগ হয়। কিন্তু তার সঙ্গে রাগ করে বেশিক্ষণ থাকা যায় না। আর তার জীবনযাত্রাও অদ্ভুত! কোথায় সে চলল, এর ঠিক নেই। কোথায় কী খেলো, এরও ঠিক নেই। যেখানে রাত সেখানেই কাত! তার চারিদিকে হাজারো সমস্যা। কিন্তু সে হায়ার পার্চেসে গাড়ি চালায় একটা লেটেস্ট মডেলের! এ ছাড়া মেয়েঘটিত ব্যাপারগুলো নিয়ে সে একটু বেশিই ঘাঁটাঘাঁটি করে। একটা মেয়েকে সে নাইট ক্লাবে গিয়ে পটাবে। পটিয়ে এক ধরনের লতাপাতায় জড়ানো সম্পর্ক গড়ে তুলবে। মেয়েটাকে কোনো দামি রেস্টুরেন্টে নিয়ে ডিনার খাওয়াবে। দু-এক রাত নাইট ক্লাবে যাবে। উইকএন্ডে তার লেটেস্ট মডেলের গাড়িতে করে লেকসিটি তাওপো বা বিচসিটি তাওরাঙা সারা দিন বা রাতের জন্য চলে যাবে! তারপর হোটেল-মোটেলে রাত কাটাবে!
তারপর সেই মেয়েটাকে নিয়ে আতিকের পুরোনো কাহিনির সেখানেই শেষ হয়ে যাবে! এরপর নতুন একটা মেয়েকে নিয়ে নতুন কাহিনির শুরু করবে! আতিক কখনই তার পুরোনো কাহিনিকে বেশি দূর টেনে নিয়ে যায় না।
বাসার ব্যাপারে অবশ্য রাকিবের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। আতিককে সে প্রথম থেকেই বলে দিয়েছে, যা কিছু করবে তা যেন বাসার বাইরে করে। ভেতরে নয়। এমনকি বাসার টেলিফোন নম্বরও কোনো মেয়েকে দেওয়া নিষেধ ছিল। দিতে হলে যেন তার মোবাইল নম্বর দেয়। তারপরও আতিক প্রায়ই এ ধরনের ভুলটা করে। নতুন মেয়েদের বাসার টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে আসে।
এ রকম ভুল আতিক প্রথম প্রথম খুব বেশি করত। হুট করে কোনো মেয়েকে গল্প করার নাম করে বাসায় নিয়ে আসত। বাসায় বিশাল আয়োজন করে মেয়ে ও মেয়ের বান্ধবীদের দুপুর বা রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ করত। বিয়ার-হুইস্কি, ওয়াইন, রাম বা জিমবিম দিয়ে রুম সয়লাব করত।
আতিকের সঙ্গে এসব নিয়ে রাকিবের বেশ কয়েকবার ঝগড়া হয়। একবার-দুবার সে আতিককে মেয়েসহ বাসা থেকে বেরও করে দেয়। এ নিয়ে মাঝখানে কিছুদিনের জন্য মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল। কয়েক মাস আগে আতিক একবার বাসা ছেড়ে দেবেও বলেছিল। কিন্তু তা বলা পর্যন্তই।
আজকাল আতিক অবশ্য মেয়েটেয়ে নিয়ে বাসায় আসে না। রাকিবকে সমীহ করে। যেকোনো কারণেই হোক না কেন তাকে শ্রদ্ধা করে। বেশ বিশ্বাসও করে।
রাকিবও আতিকের এই শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের মূল্য দেয়। তার অনেক ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করে দেয়। তাকে বোঝারও চেষ্টা করে। আজকাল তার দুঃখগুলোকে নিজের দুঃখ বলে মনে করে।
আতিকের সত্যি দুঃখ অনেক।
রাকিব মাঝেমধ্যে ভাবে, আতিক হয়তো তার দুঃখগুলো ভোলার জন্যই এসব করে বেড়ায়। এখান সেখানে আনন্দ খোঁজে। পশ্চিমা স্রোতে গা ভাসায়। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>