লেবাননে সংগীত ও নৃত্য উৎসবে বাংলাদেশ

উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা
উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা

এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে এশিয়া আন্তর্জাতিক মিউজিক ও ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল। এর আয়োজন করে ভিরেনা মিউজিক স্কুল। গত শনিবার এ উৎসব আয়োজন করা হয়। উৎসবে যোগ দিয়েছিলে এশিয়ার চারটি দেশ। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল অন্যতম।

বাংলাদেশ পর্ব সাজানো হয়েছিল বাংলাদেশের সাতটি বিখ্যাত লোকসংগীত দিয়ে। মন মাতানো এসব লোকসংগীতের সুরের মূর্ছনা মুগ্ধ করেছে লেবাননের হাজারো দর্শককে। আয়োজকেরাও বেশ খুশি।
উল্লেখ্য এ আয়োজনে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল। এ সাংস্কৃতিক দল দেশটিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের নিজ হাতে গড়া। দলটি লেবাননের আনাচকানাচে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য গত প্রায় দুই মাস পরিশ্রম করেছে সাংস্কৃতিক দল। রাষ্ট্রদূতের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রতি সপ্তাহে চলেছে তাদের মহড়া।

উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা
উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা

প্রথমেই জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান পর্ব শুরু হয়। বাজানো হয় লেবাননসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জাতীয় সংগীত। এরপর অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করেন মূল পর্ব। লেবাননের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এরপর প্রথম পরিবেশনা ছিল বাংলাদেশের। দূতাবাসের সাংস্কৃতিক দল সাতটি লোকসংগীত পরিবেশন করে। ‘দে দে পাল তুলে দে’ গানটি মুগ্ধ করে লেবাননের দর্শকদের। বাংলাদেশের তবলা, হারমোনিয়াম ও বাঁশির সুরও মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও দর্শকেরা।
অনুষ্ঠান সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার বলেন, লেবাননে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। গত দুই-তিন বছরে আমরা দূতাবাসের উদ্যোগে বেশ কটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। তা ছাড়া আমাদের তৈরি নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছি আরও বেশ কটি অনুষ্ঠানে। আশা করছি, এসব অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের লেবানিজ বন্ধুরা আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে সংস্কৃতি, পর্যটন, শিক্ষাক্ষেত্রসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা
উৎসবে বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা

বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে লেবাননের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য লেবাননের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে দূতাবাসের সাংস্কৃতিক দল। ছোট ছোট করে এসব অংশগ্রহণই এক সময় বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত।
তিন-চার বছর আগেও লেবানিজরা বাংলাদেশিদের শ্রীলঙ্কান বা ভারতীয় বলে মনে করত। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গত তিন বছর ধরে লেবানিজরা এখন বাংলাদেশিকে চেনে বাংলাদেশি হিসেবে। শ্রীলঙ্কা বা ভারতীয় হিসেবে নয়। আগের চেয়ে অনেক শ্রদ্ধাও করে বাংলাদেশিদের। আর তাই বেজায় খুশি লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে আব্দুল মোতালেব সরকার
বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে আব্দুল মোতালেব সরকার

এ উৎসবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা অংশগ্রহণ করে। সব দেশ নিজেদের সংস্কৃতি ও কালচার তুলে ধরে। সবার জন্য সময় বরাদ্দ ছিল ৩০ মিনিট। অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রায় এক হাজারের বেশি দর্শক।
বৈরুতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশের গান শোনার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন এ উৎসবে। তারা হাত তালি দিয়ে, নেচে-গেয়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন বাংলাদেশি শিল্পীদের। অনেকে বলেছেন আজ (সেদিন বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার খেলা ছিল) আর্জেন্টিনা হারলেও লেবাননে জিতেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অংশগ্রহণ প্রবাসীদের মধ্যে আনন্দের উৎস ছিল সেদিন।

দর্শকদের একাংশ
দর্শকদের একাংশ

দূতাবাসের সাংস্কৃতিক দলের মমতাজ, জহির, সেলিম, দবির ও সাঈদ গান পরিবেশন করে। তবলায় ছিলেন রনি। হারমোনিয়ামে ফারুক। বাংলাদেশের ঢোল বাজিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন জনি।

জুবায়ের কবির: বৈরুত, লেবানন।

ছবি তুলেছেন: জহির রায়হান, বাবু সাহা ও আশিক মাহমুদ।