বাথে একদিন

ইংল্যান্ডের বাথ শহরের হাম্মামখানা রোমানদের বানানো। প্রতিদিন অনেকেই আসেন এ শহর ঘুরতে। ছবি: সারা বুশরা
ইংল্যান্ডের বাথ শহরের হাম্মামখানা রোমানদের বানানো। প্রতিদিন অনেকেই আসেন এ শহর ঘুরতে। ছবি: সারা বুশরা

বাথ নাম হিসেবে খুব অদ্ভুত। গোসলের ঘর ধরনের আমেজ তৈরি করে কল্পনায়। অনেকগুলো বছর ইউকে থেকেও এই বাথ শহরটিতে কখনো যাওয়া হয়নি। ওদিকে আমার স্বজনেরা সবাই খুব ইতিহাসপ্রেমী। তারা ইংল্যান্ড বেড়াতে এলেই অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, স্টোনহেঞ্জ শেষ করে বাথটাও সেরে ফেলে। হেরিটেজ ও হিস্ট্রি মিলিয়ে এসব ওল্ড সিটিগুলোতে একটা অন্য রকম ক্যারেক্টর আছে, দারুণ একটা ফিলিং হয়—এসব জ্ঞানের কথা প্রায়ই আমাকে শুনতে হয়...শুনি আর হু হা করি। আমার পছন্দ পাহাড়, লেক, সমুদ্র, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত। চার হাজার বছর আগে কে কী করেছিল, সেগুলোর নিদর্শন দেখতে আর ভূত ভূত অনুভূতি নিতে ওই আদিকালের জায়গাগুলোতে কে যায়?

বাথ শহরের আছে হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস। ছবি: সারা বুশরা
বাথ শহরের আছে হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস। ছবি: সারা বুশরা

এবার আমার মা কয়েক মাসের জন্য আমার এখানে এলেন। আমার বর অফার দিল, চলো মাকে নিয়ে এবার বাথ ঘুরে আসি...সবাই বারবার যায়, একবার গিয়েই দেখি না, কী আছে? আমার মা জানতে চাইলেন, শহরটির বিশেষত্ব কী? বললাম, সবচেয়ে বিখ্যাত জিনিস হচ্ছে, The Roman Bath...এই পানি অনেক মিনারেল সমৃদ্ধ। দৈহিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও হেল্থ ভ্যালুর কারণে ব্যাপক সমাদৃত ছিল। প্রতিবছর এক মিলিয়নের বেশি ভিজিটর আসে এটা দেখতে। এককথায় বলতে হলে এটা হলো একটি ওয়েল প্রিসার্ভড রোমান সাইট ফর পাবলিক বাথিং। মা শুনে বিরক্ত স্বরে বলে উঠলেন, ২০০ মাইল ড্রাইভ করে আমি যাব হাম্মাম খানা দেখতে? আমি জ্ঞানীর ভঙ্গিতে বললাম এইটা যেন তেন হাম্মামখানা নয়, এটা রোমানদের বানানো হাম্মাম খানা। এর নামে এই শহর এর নাম...এর মধ্যে হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাস আছে...আর এটা তো শুধু বাথ নয়, এর মধ্যে মিউজিয়াম আছে, টেম্পল আছে...আসলে মাহাত্ম বোঝার জন্য আমাদের অন্য লেভেলে যেতে হবে...মা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলেন, রাখ তোর লেভেল। এ জায়গায় যাব না...অন্য কিছু প্ল্যান করো।

এ শহরে শুধু বাথ নয়। শহরে আছে মিউজিয়াম, টেম্পল। ছবি: সারা বুশরা
এ শহরে শুধু বাথ নয়। শহরে আছে মিউজিয়াম, টেম্পল। ছবি: সারা বুশরা

তবু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো এবং অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, শহরটি ভালোও লাগল। আহামরি কিছু না হলেও যারা একদিনের সিটি ট্যুর পছন্দ করেন, তাঁদের মন্দ লাগবে না। আর যারা ইতিহাস পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য তো অতি উত্তম। ল্যান্ডস্ক্যাপ গার্ডেন, আলেক্সজান্দ্রা পার্ক, গ্রিন পার্ক স্টেশন এগুলো সবই দর্শনযোগ্য। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সবচেয়ে উপভোগ্য হচ্ছে পালটেনি ব্রিজ। এ ব্রিজটি অ্যাভন নদীকে ক্রস করে যায়...পৃথিবীতে মাত্র চারটি এমন ব্রিজ আছে, যার দুই পাশেই পুরোটাজুড়ে দোকানপাট রয়েছে। পালটেনি ব্রিজ সেই চারটির মধ্যে অন্যতম। ব্রিজ এ দাঁড়িয়ে পানির দৃশ্য দেখতেও খুব সুন্দর।

বাথের ল্যান্ডস্ক্যাপ গার্ডেন, আলেক্সজান্দ্রা পার্ক, গ্রিন পার্ক স্টেশনগুলো সবই দর্শনযোগ্য। ছবি: সারা বুশরা
বাথের ল্যান্ডস্ক্যাপ গার্ডেন, আলেক্সজান্দ্রা পার্ক, গ্রিন পার্ক স্টেশনগুলো সবই দর্শনযোগ্য। ছবি: সারা বুশরা

আর হ্যাঁ, ইংল্যান্ডের অন্যান্য পুরোনো শহরের মতো এখানেও অতৃপ্ত আত্মারা অবাধে ঘুরে বেড়ালেও কাউকে ভয় দেখান না...উনারা অতি ভদ্র এবং অমায়িক প্রকৃতির ভূত।

ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সবচেয়ে উপভোগ্য হচ্ছে বাথের পালটেনি ব্রিজ। ছবি: সারা বুশরা
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সবচেয়ে উপভোগ্য হচ্ছে বাথের পালটেনি ব্রিজ। ছবি: সারা বুশরা


*সারা বুশরা, বেড ফোর্ড, ইংল্যান্ড