স্বপ্নপুরী ডিজনিল্যান্ডে একদিন

ডিজনিল্যান্ডে একদিন।
ডিজনিল্যান্ডে একদিন।

স্বপ্নজগতের রাজা বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র মিকিমাউসসহ মিনি ডোনাল্ড, ডেইজি, গুফির স্রষ্টা এবং কল্পনার জগৎকে সিনেমার পর্দায় রূপ দেওয়া হয়। ওয়ার্ল্ট ডিজনির পরিকল্পনায় ১৯৫৫ সালে ১৭ জুলাই সীমিতসংখ্যক মিডিয়াকর্মী আর আমন্ত্রিত অতিথির উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ডিজনিল্যান্ড। ১৮ জুলাই দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রথম ছয় মাসে প্রায় ১০ লাখ লোক পার্কটি পরিদর্শন করেছিল; প্রথম বছরে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ দর্শনার্থী এই স্বপ্নপুরী ধন্য করেন। ডিজনিল্যান্ড ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে অ্যানাহেইমে অবস্থিত। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বে ৩৬ হেক্টর জায়গার ওপর বিস্তৃত।

ওয়ার্ল্ট ডিজনি সত্যিকারের হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা, যার জগতে দেখতে আবালবৃদ্ধবনিতা ছুটে আসেন দেশ-দেশান্তর থেকে। আসলে চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না যে মানুষের কল্পনার রাজ্যকে মানুষের সামনে কীভাবে আনা হয়েছে। আসলে আমি নিজকে ভাগ্যবান মনে করি, আমার ডিজনিল্যান্ড দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। এটা এমন একটি জায়গা, যেখানে একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছা করে। আর জেফ রিৎজ টানা ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে টানা ২০০০ দিনের প্রতিদিন উপস্থিত থেকে রেকর্ড করেন।

আমি ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর আমার চাচা ফারুকের বাসায় বেড়াতে যাই। শত ব্যস্ততার মধ্যেও চাচা প্রত্যেক দিন একটি দর্শনীয় স্থানে দেখতে নিয়ে যেতেন। আগের দিন গেলাম হলিউডের ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে, আজ যাব দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ডিজনিল্যান্ড চাচা—আমাকে বললেন সকাল ছয়টায় রেডি থাকতে। আমরা সকালে অফিসে পৌঁছালাম। আংকেল কাজে ব্যস্ত থাকায় একজন ম্যাক্সিকান চালক সঙ্গে দিলেন। তিনি আমাকে ডিজনিল্যান্ডের সামনে নামিয়ে দিলেন। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। ডিজনিল্যান্ড কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢোকার মুখে Main street USA তার ঠিক বায়ে Adventure land। তারই পাশে New Orlando Square main street ধরে সোজা একটু এগুলো গোল চত্বর, যেখানে ওয়ার্ল্ট ডিজনি ও মিকির মূর্তি চত্বরের ডানে Tomorrow land. চত্বরের সামনে Frontierland-এর মূল ফটক স্লিপিং বিউটি ক্যাসেল বা সিনড্রেলা প্রসাদ নামে প্রসিদ্ধ, যা ডিজনিল্যান্ডের আইকন হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে জাদুর আয়না রাখা আছে।

ডিজনিল্যান্ডে একদিন।
ডিজনিল্যান্ডে একদিন।

পার্কের রেলের মাধ্যমে চক্রাকারে পুরো পার্ক ঘুরে আমি রেল না নিয়ে হেঁটে প্রথমেই Fantasyland-এর Peter pan's flight-এর সামনে যেতেই দেখলাম দীর্ঘ লাইন। আসলে আমি একটা ভুল করেছিলাম টিকিট কাউন্টারে, fast pass পাওয়া যায়, যা বেশ কিছু রাইডের জন্য দীর্ঘ লাইন না ধরে উপভোগ করা যায়, যা আপনার সময়কে বাঁচাবে। যাই হোক, যেহেতু ফার্স্ট পাস নেওয়া হয়নি, দীর্ঘ লাইন অতিক্রম করে একে একে চড়তে লাগলাম।

Matter horn bobsleds পাহাড়ের আদলে তৈরি রাইডে চড়া বেশ রোমাঞ্চকর। It is small world সত্যিই বাচ্চাদের জন্য আলাদা এক জগৎ। যেখানে মিউজিকের তালে তালে কার্টুন চরিত্রগুলো বিভিন্ন নাচের তালে অঙ্গভঙ্গি আর বর্ণিল আলোর খেলা যেন এক অন্য ভুবনে নিয়ে যায়। এর পাশেই Mickey toon town যেখানে বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র মিকির বাস। ভাগ্য ভালো থাকলে মিনির সঙ্গেও সাক্ষাৎ হতে পারে। এর পাশে Royal theatare সিনড্রেলা প্লে হচ্ছিল। সময়ের অভাবে আমি এটা এড়িয়ে রেলে করে অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডের দিকে গেলাম। এখানে রাইটগুলো রোমাঞ্চকর। বুকে সাহস নিয়ে এগোলাম। ইন্ডিয়ানা জোনসের জন্য দীর্ঘ লাইন শেষে গাড়িতে বসলাম প্রত্নতাত্ত্বিকের সঙ্গে গুপ্তধন উদ্ধারে, দৃশ্যগুলো এমন ছিল, যেন সব বাস্তব। গাড়ির গতি এবং বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনা এমন ছিল যে অনেকে ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল, যা শরীর হিম করানো অনুভূতি। এরপর জঙ্গল ক্রুজ ঘুরে দেখলাম পরে টারজানের ঘরে উঠলাম গাছের ওপর। পাশে দেখলাম Bengal barbecue। দেখে বুকটা ফুলে উঠল। এই স্বপ্নপুরীতে বাংলা নাম দেখে মনে হলো, হোক না সেটা রেস্তোরাঁ। পরে Haunted mansion গেলাম সেখানে ভৌতিক সব কাণ্ডকারখানা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য জগতে। Pirates of the Caribbean-এর জন্য দীর্ঘ লাইন আবার যান্ত্রিক গোলযোগের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর চালু হলে সবাই শান্ত হয়ে বসে। যতক্ষণ না চালু হলো কিন্তু আমাদের দেশে হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতো মনে হয়। Big thunder mountain rail চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাল। splash mountain ডিঙি নৌকার মতো চড়ে উঁচু থেকে খাড়াভাবে পড়ে মনে হলো প্রাণটা বের হয়ে যাবে।

পুরো পার্কটি যেন মায়াপুরী। সবার দৃষ্টি সিনড্রেলা প্রাসাদের ওপর আটকে রইল। পার্কের স্লোগান হলো the happiest place on earth। সবার মুখে শিশুসুলভ হাসি চোখে মুখে প্রশান্তির চাপ, যা দেখে থিমের সার্থকতা প্রমাণিত হয়। এদিকে আংকেল আমাকে নেওয়ার জন্য গেটে অপেক্ষা করছিলেন। তখনো হাজারো লোক এদিন সেদিকে ছুটছে। সবাই যেন খুশিতে মেতেছে। আমি সব মায়া ফেলে ছুটলাম। আমার গন্তব্যের দিকে আর মন পড়ে রইল বাস্তব হতে অনেক দূরে স্বপ্নের রাজ্যে।