জাপানের দৃষ্টান্ত হোক সবার জন্য শিক্ষণীয়

খেলা শেষে একজন জাপানি দর্শক গ্যালারি পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। ছবি: রয়টার্স
খেলা শেষে একজন জাপানি দর্শক গ্যালারি পরিষ্কার করায় ব্যস্ত। ছবি: রয়টার্স

বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচে হেরে জাপানের বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রা শেষ হলেও বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়ে গেছে সম্ভবত এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ও উপভোগ্য ম্যাচ। বিশ্বকাপে জাপান অতটা শক্তিশালী দল না হলেও শুধুমাত্র পেশাদারি ও খেলোয়াড় সুলভ আচরণের জন্য জাপানের চলে যাওয়ায় অনেকেই মর্মাহত। জাপান চলতি বিশ্বকাপের আসর থেকে বিদায় নিলেও দাগ কেটেছে সবার মনে। আর দল হিসেবে জাপানের জন্য এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

বিশ্বকাপের আসরে খেলা শেষে জাপানি দর্শকদের স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিষ্কার করা এবারই প্রথম নয়। তবে এবার নকআউট পর্বে বেলজিয়ামের সঙ্গে হেরে যাওয়ার পরেও অশ্রুসিক্ত জাপানি ফুটবলার ও দর্শকেরা ড্রেসিং রুম ও স্টেডিয়ামের গ্যালারি পরিষ্কার করে যে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা ফুটবলের ইতিহাসে সত্যিই বিরল। বিষয়টি বিশ্ব গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। খেলায় হেরে গেলেও শোকার্ত জাপানি দর্শকেরা তাদের দায়িত্ব ভুলে যাননি। যথারীতি স্টেডিয়ামের গ্যালারি সুন্দর করে পরিষ্কার করে তবেই তারা স্টেডিয়াম ছেড়েছেন। আর জাপানি খেলোয়াড়েরা ড্রেসিং রুম পরিষ্কার করে পরিপাটি করে রেখে যেতে এতটুকু কুণ্ঠাবোধ করেননি। শুধু কী তাই? রাশিয়ানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ড্রেসিং রুমে রাশিয়ান ভাষায় ‘ধন্যবাদ’ সূচক চিরকুট রেখে জাপানিরা আবারও বিশ্ববাসীর বিবেকে নাড়া দিয়েছেন।
জাপানিরা যে কেবলমাত্র চমক সৃষ্টির জন্যই এমনটা করেছেন তা কিন্তু নয়। এ ধরনের আচরণ জাপানিদের মজ্জাগত। এটা জাপানিদের জাতিগত অভ্যাস। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ অনেকটা জাপানিদের শখও বটে। ভিনদেশি ফুটবল দলকে সমর্থন করতে গিয়েই মানুষ যেখানে চরম অসহিষ্ণু ও মারমুখী, সেখানে জাপানি খেলোয়াড় ও দর্শকদের এই দৃষ্টান্ত সমগ্র বিশ্বের জন্যই শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয়। জাপানিদের এ প্রয়াস আপাতদৃষ্টিতে ক্ষুদ্র মনে হলেও এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। জাপানিদের এ শিক্ষা শুধু খেলার মাঠের জন্যই প্রযোজ্য নয়। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও এ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ জন্যই সুন্দর একটা পৃথিবী গড়ার শুরু হতে পারে এখান থেকেই।

মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ ও শিক্ষার্থী, কিউশু ইউনিভার্সিটি, জাপান।