প্রবাসের অপূর্ণ ঈদের পূর্ণতা!

ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়
ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। এই ঈদকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের রয়েছে বিভিন্ন আশা আকাঙ্ক্ষা। প্রস্তুতির কমতি থাকে না কারও। আর বাঙালি যেহেতু উৎসব প্রিয় জাতি, তাই আমাদের ঈদ প্রস্তুতিটাও হয়তো সবার থেকে অনেক বেশি। আর তাইতো ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছিল প্রবাসের ঈদ প্রাণহীন ঈদ। নেই কোনো প্রস্তুতি। থাকবে না কোনো আমেজ। আর তাইতো ভেবেছিলাম ঈদটি হবে আমার প্রবাস জীবনের অপূর্ণ ঈদ। তবে আমার এ ধারণা পাল্টে যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সবার একসঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন দেখে।

গত রোজার ঈদ ছিল জার্মানিতে আমার প্রথম ঈদ। ঈদের আগের কয়েকটা দিন একধরনের শূন্যতা কাজ করেছিল নিজের ভেতর। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল প্রিয় মানুষদের মুখ। তাদের সঙ্গে কাটানো ঈদের স্মৃতি। কতই না মধুর ছিল ঈদের সেই দিনগুলো। আমার মতো হয়তো প্রবাসে সবাই তাদের প্রিয়জনদের এভাবেই মনে করেন আর নীরবে চোখের পানি ফেলেন। ঈদ ও উৎসবের দিনে যেন প্রবাসীদের দেহ থাকে প্রবাসে আর মনটা দেশে।
দেশে ঈদ মানে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই একত্রিত হওয়া। দিনটি প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো। কিন্তু বিদেশে আমরা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তবে এখানে গড়ে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অন্য রকম পরিবার। যে পরিবারের সদস্য আমরা এখানে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি। আর আমাদের ঈদ উদ্‌যাপনটাও হয় সকলে মিলেমিশে একসঙ্গে।
বাংলাদেশের ঈদের আমেজ অনেকটাই অনুপস্থিত আমাদের প্রবাসজীবনে। এখানে সবাই ব্যস্ত যার যার মতো। তারপরও এত যান্ত্রিকতার মাঝে ঈদ কিছুটা হলেও প্রবাসীদের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সবাই চেষ্টা করেন দিনটি একটু ফ্রি রাখার।

ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়
ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়

আমার ঈদ আনন্দ বহুগুন বেড়ে যায় চাঁদরাতে দিলশাদ ভাবির (জার্মানির একজন নারী উদ্যোক্তা) কাছ থেকে শাড়ি উপহার পেয়ে। বাঙালি নারীর সবচেয়ে পছন্দের উপহার। তারপর বিদেশে এ যেন এক অন্য রকম পাওয়া। আগের দিন রাতেই সেমাই ও পায়েস রান্না করে ফ্রিজে রাখি। খুব ভোরে জীবনসঙ্গীর ডাকে ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠেই ফোন দিই আম্মুকে। আম্মু ও ছোট বোনের সঙ্গে কথা বলে শুরু হয় আমার ঈদ। নতুন জামা পরে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সেমাই খাওয়া, ঈদ সালামি পাওয়া, ঈদের নামাজ পড়া আমার অপূর্ণ ঈদে কিছুটা পরিপূর্ণতা আনে। আর আপনজনদের শূন্যতা ভুলে থাকার চেষ্টা করি সবার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। এরপর পূর্বপরিকল্পনা মতো সকলে মিলে একসঙ্গে বাজার করা, ভাগাভাগি করে রান্না করা, পার্কে খোলা আকাশের নিচে সবাই একসঙ্গে খাওয়া, আমার ঈদ উদ্‌যাপনের এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিকেলে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া, গল্প, হাসি-আড্ডা আমাদের ঈদকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত আনন্দময়।

ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়
ঈদের দিন সবাই মিলে গল্প আর হই হুল্লোড়

ঈদের পরে সেলিম ভাইয়া, ইউনুস খান ভাইয়া, রবি ভাইয়া ও মালেক ভাইয়াসহ বিভিন্ন বাসায় একের পর এক দাওয়াত, ভাবি ও আপুদের সঙ্গে পরিচয়, ঘোরাঘুরি সবকিছু আমার প্রবাস জীবনের প্রথম ঈদটিকে অনেকাংশে পরিপূর্ণ করে তোলে। প্রিয়জনদের অভাব থাকা সত্ত্বেও প্রবাসে সকলে মিলে ঈদ উদ্‌যাপন, দেশীয় আমেজে আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, গল্প আর হই হুল্লোড় আমার অপূর্ণ ঈদে আনে কিছুটা পূর্ণতা। ঈদ আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক দেশে-বিদেশে সকলের মাঝে।

তামান্না ফেরদৌস: প্রবাসী শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব সিগেন, জার্মানি। প্রাক্তন শিক্ষার্থী, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।