অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল ট্যালেন্ট নামে নতুন কর্ম ভিসা

গ্লোবাল ট্যালেন্ট নামে নতুন কর্ম ভিসা চালুকরেছে অস্ট্রেলিয়া
গ্লোবাল ট্যালেন্ট নামে নতুন কর্ম ভিসা চালুকরেছে অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বাসযোগ্য দেশগুলোর একটি। শিক্ষা, কর্ম ও উন্নত ভবিষ্যতের আশায় প্রতিবছর লাখ লাখ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাতে চান। তবে অভিবাসী খ্যাত দেশ হয়েও অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া দিনকে দিন জটিল হচ্ছে। গত বছরই সবচেয়ে জনপ্রিয় সাবক্লাস ৪৫৭ কর্ম ভিসা বাতিল করে দেয় দেশটির অভিবাসন বিভাগ। এরপরও দেশটির বিভিন্ন পেশার দক্ষ কর্মীর সাময়িক অভাব দূর করতে এবং প্রগতি ও উন্নয়নে অংশ নিতে বিভিন্ন শর্তাবলির ভিসা চালু করে অভিবাসন বিভাগ।

অস্ট্রেলিয়ার তেমনই একটি নতুন ভিসা গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম (জিটিএস)। দেশটির বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত খাতে উচ্চতর দক্ষ পেশাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে এ ভিসা চালু করা হয়েছে। এ ভিসায় মনোনীত হয়ে চার বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এ চার বছরের মধ্যে তিন বছর অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার পর দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করা যাবে। ভিসাটি আপাতত পরবর্তী ১২ মাসের জন্য চালু করেছে। এখন থেকে আগামী জুন ২০১৯ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।

গ্লোবাল ট্যালেন্ট নামে নতুন কর্ম ভিসা চালুকরেছে অস্ট্রেলিয়া
গ্লোবাল ট্যালেন্ট নামে নতুন কর্ম ভিসা চালুকরেছে অস্ট্রেলিয়া

গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম একটি স্পনসরভিত্তিক কর্ম ভিসা

অনুমোদিত কোনো অস্ট্রেলীয় প্রতিষ্ঠানই যোগ্য ভিসা প্রত্যাশীকে গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম (জিটিএস) ভিসায় মনোনীত করে ভিসার জন্য আবেদন করার আমন্ত্রণ জানালেই এ ভিসায় আবেদন করা যাবে। ভিসা প্রত্যাশীকে দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান মনোনীত করতে পারবে। এক. ইতিমধ্যে দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যার গত দুই অর্থ বছরেই ৪ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার করে বাৎসরিক আয় রয়েছে। দুই. বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত খাতের স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের নতুন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক সফলতা পাবে তার একটি আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনার প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। এ ছাড়া দুই ধরনের স্পনসরের জন্যই নির্ধারিত পদের অস্ট্রেলিয়ার শ্রম বাজারের দক্ষ কর্মীর শূন্যতা রয়েছে তাও প্রমাণ করতে হবে। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু আবশ্যিক শর্ত রয়েছে।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

আবেদনকারীর যোগ্যতা

অনুমোদিত স্পনসর কর্তৃক মনোনয়ন পেতে ভিসা আবেদনকারীকে টেম্পোর‍্যারি স্কিল শর্টেজ (টিএসএস) ভিসার আবশ্যিক শর্তগুলো পূরণ করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। ভিসা প্রত্যাশীকে অবশ্যই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত হতে হবে। সংশ্লিষ্ট পেশায় অন্তত সরাসরি তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশাপাশি একই পেশায় একজন দক্ষ অস্ট্রেলীয় নাগরিকের সমান দক্ষতা থাকতে হবে। স্পনসর যদি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হয় তবে মনোনীত পেশার বাৎসরিক বেতন কমপক্ষে ১ লাখ ৮০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার হতে হবে। আর স্পনসর স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান হলে বাৎসরিক বেতন ৫৩ হাজার ৯০০ ডলারের কম হওয়া যাবে না। সাধারণ আবশ্যিক শর্ত হিসেবে আবেদনকারীর স্বাস্থ্য, চরিত্র ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। স্পনসর প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও অংশীদারদের সঙ্গে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে এমন কেউই এ ভিসায় আবেদন করতে পারবেন না।

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

নতুন গ্লোবাল ট্যালেন্ট স্কিম ভিসার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো উদ্ভাবনী খাতে দক্ষ পেশাদার নিয়োগ করা। এ নিয়ে দেশটির নাগরিকত্ব ও বহু সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী অ্যালান টিউজ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসাগুলো বিশ্বের সেরা প্রতিভা ব্যবহার করতে পারে। এতে ব্যবসা বৃদ্ধি, দক্ষতা স্থানান্তর ও চাকরি সৃষ্টির নানাবিদ সুযোগ তৈরি করে দেবে।’
এ ভিসায় সত্যিকার অর্থে দক্ষ ও প্রতিভাবান না হলে অস্ট্রেলিয়ায় আসার ভিসা প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই। আর যোগ্যতা ও সকল প্রমাণাদি সঠিক থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় কর্ম ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

কাউসার খান: অভিবাসন আইনজীবী, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>