বেচারা স্বামী-চার

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢুকতেই বউ আদুরে গলায় বলল, কেমন আছ জান?

—আমি তো ভালো আছি। কিন্তু তোমার শরীর ঠিক আছ তো? বউয়ের মিষ্টি কথা শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম।
—আমার আবার কি হবে? আচ্ছা তুমি এই প্রশ্ন করলে কেন?
—না এমনি।
—নো, তুমি এমনি এমনি কিছু করো না। সত্যি করো বলো তুমি এ প্রশ্ন কেন করেছ?
—না আসলে এমন আদুরে গলায় মিষ্টি করে জান কেমন আছ জিজ্ঞেস করলে তো, তাই ভাবলাম তোমার শরীর ভালো আছে কিনা জানা দরকার।
—তার মানে কি? তুমি বলতে চাও, আমি তোমার সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বলি না!
—দেখো আমি কিন্তু এ কথা একবারও বলিনি।
—না বললেও তুমি তাই মিন করেছ।
—প্লিজ পরিবেশটা গরম করো না। আমি প্রচণ্ড টায়ার্ড। এখন খামাখা ঝগড়া করো না।
—তার মানে তুমি বলতে চাও আমি খামাখা ঝগড়া করি! আমি ঝগড়াটে!
—মারে আমার ভুল হইছে, আমি মাফ চাই। এই বিষয়টা এখন বাদ দাও।
—আচ্ছা, এখন না হয় বাদ দিলাম। তবে এটা নিয়ে তোমার সাথে পরে হবে। এখন তুমি আমার সামনে বসো, জরুরি কথা আছে।
—আচ্ছা, আমি পোশাকটা পরিবর্তন করে, গোসল করে একটু ফ্রেশ হই। তারপর তোমার জরুরি কথাটা শুনি।
—না, এখনই শুনতে হবে। কোনো কথা না বলে সামনে চুপ করে বসো।
—আচ্ছা বসলাম, বলো কি বলবে।
—দাও তোমার হাতটা একটু দেখি। ঋতু খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল।
—কি ব্যাপার, আজ এত রোমান্টিকতা কেন!
—এখানে রোমান্টিকতার কিছু নেই। তোমার হাতের রেখা দেখব। তাই হাত বাড়াতে বলেছি।
—এটা তোমার জরুরি কথা! আর তুমি হাত দেখবে মানে? তুমি কি হাত দেখতে পার?
—না, তবে আজ সকালে মার্কেটে গিয়েছিলাম। তখন একটা হস্তরেখার বই কিনে এনেছি।
—হঠাৎ হস্তরেখার বই কেনার কারণ কি?
—পাশের বাসার শিরিন ভাবি বুদ্ধিটা দিলেন।
—তুমি কি হস্তরেখা বিশ্বাস করো? আমি কিন্তু বিশ্বাস করি না।
—আমিও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু আজ শিরিন ভাবি বলল এটা হলো একটা পরীক্ষিত বিজ্ঞান। উনি নাকি ওনার স্বামীর জালিয়াতি হস্তরেখার বই দিয়া হাতে নাতে ধরেছেন।
—তোমারে না বলেছি ওই পাগল মহিলার সাথে মিশবে না। সে প্রত্যেকবার তোমারে একটা করে কু-বুদ্ধি দেয় আর তুমি সে বুদ্ধি ধরে বাসায় গ্যাঞ্জাম করো। ওই মহিলা তো পুরাই অসুস্থ।
—খবরদার ভদ্র ভাষায় কথা বলবে। উনি আমার বান্ধবী।
—মাশ আল্লাহ নিজে এক পাগল, বন্ধু বানাইছে আরেক পাগলরে।
কথাটা মিনমিন করে বললাম।
—কি বললে বুঝিনি। মিনমিন করবে না। সাহস থাকলে যা বলবে জোরে বলবে।
—সরি আমার এত সাহস নাই।
—তাহলে চুপ থাকবে, কথা বলবে না। এখন হাত বাড়াও, হাত দেখি।
—আচ্ছা আগে গোসল করি, ভাতটা খাই, তারপর হাত দেখাই। বিশ্বাস করো প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে।
—না, এখনই হাত দেখব। আর যদি হাতের রেখা ঠিক থাকে তবেই ভাত পাবে, না হলে খবর আছে।
মনে মনে শঙ্কিত হলাম। কারণ ঋতুর মাথায় কিছু একটা ঢুকলেই হলো। আমি সিয়োর আজ একটা ভেজাল সে ঠিকই করবে। তাই বোঝানোর সুরে বললাম, শোনো সবকিছুরই তো একটা সিস্টেম আছে। হস্তরেখা একটা জটিল বিষয়, এটা শুধু ফুটপাতের বই পড়ে শিখে ফেলার বিষয় না। আর তুমি তো মাত্র একবেলা পড়েছ। একবেলা পড়েই কি পুরো হাতের রেখা শিখে ফেলা সম্ভব? তুমিই বলো।
—আমার তো পুরো শেখার কোনো দরকার নাই। শুধুমাত্র একটা আইটেম শিখেছি। ওই একটা আইটেম দেখার জন্যই বইটি কিনেছি। আর তুমি এত কথা বলছ কেন? চুপচাপ হাত বাড়াও।
ভয়ে ভয়ে হাত বাড়লাম। জানি না আজ কপালে কী আছে। হাতটা মনোযোগ দিয়ে অনেকক্ষণ দেখল। তারপর কিছু না বলে বেডরুমে চলে গেল। একটু পর আবার ফিরে এল। হাতে ম্যাগনিফাইন গ্লাস।
—মাই গড! তুমি এইটাও কিনে এনেছ?
—অবশ্যই। আমি কোনো কাঁচা কাজ করি না।
মনোযোগ সহকারে ম্যাগনিফাইন গ্লাস দিয়ে হাত দেখা শুরু করল। খেয়াল করলাম, পুরো হাত দেখছে না। হাতের একটা নির্দিষ্ট অংশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে হস্তরেখায় নোবেল বিজয়ী। হাত দেখতে দেখতে হঠাৎ করে কী হলো জানি না, আমার হাত ঝাড়া দিয়ে চিৎকার করে উঠল।
—হারামজাদা তুই এখনই আমার বাসা থেকে বাইর হ।
—মানে কি! বুঝলাম না।
—মানে বোঝার দরকার নাই। তুই বাইর হ। তোর মতো লুইচ্চার সাথে আমি সংসার করব না।
—কি হয়েছে বলবে তো। এতদিন সংসার করলে অথচ বুঝলে না আমি লুচ্চা। আর এক মিনিটে আমার হাত দেখেই বলে দিলে আমি লুচ্চা।
—এতদিন আমি অন্ধ ছিলাম, তাই বুঝিনি। আজ শিরিন ভাবি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। অত কথা বুঝি না, তুই বাসা থেকে বাইর হ। ব্যাটা লু-ই-চ্চা।
—ঠিক আছে বের হচ্ছি। তুই তোকারি করো না।
—তোর মতো লুইচ্চা ব্যাটারে আমার কি আপনি করে বলতে হবে?
—আচ্ছা আপনি বলতে হবে না। অন্তত কি দেখে বুঝলে আমি লুচ্চা, সেটা তো বলবে। আমারও তো জানা থাকা দরকার আমি কত বড় লুচ্চা। আর আমিও দেখি আমার হাতের কোথায় এবং কোন ভাষায় লেখা আছে আমি লুচ্চা।
নিজের হাত আমার চোখের সামনে ধরে বলল, এই দেখ হাতের এই রেখাগুলো হচ্ছে বিয়ের রেখা। আর ভালো করে দেখ আমার হাতে এখানে একটা মাত্র রেখা। কারণ আমি ভালো বংশের মেয়ে, তাই আমার বিয়েও একটা। আর তুই দেখ তোর হাতে কয়টা রেখা?
নিজের হাত ভালো করে দেখে ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম।
—দুটো।
—দুইটা না আড়াইটা। দুইটা পুরা আর একটা অর্ধেক।
—শোনো রেখা যতটাই থাক, সেটা কোনো বিষয় না। তুমি সিয়োর থাকো আমি জীবনে আর কখনো বিয়ে করব না। তোমারে বিয়ে করেই আমার বিয়ের স্বাদ মিটে গেছে।
—তুই করবি আবার বিয়া! তোরে আমি একেবারে কুইট্টা লামু না।
—তাহলে সমস্যা কোথায়?
—সমস্যা হলো ওই অর্ধেক রেখাটা নিয়ে।
—কেন, ওই অর্ধেক রেখা আবার তোমারে কি করল?
—বিয়ে তো আর অর্ধেক হয় না। তাই ওই রেখায় বিয়ে হবে না। ওইটায় হবে পরকীয়া প্রেম। মানে লুইচ্চামি। ওইটা হলো লুইচ্চামি রেখা।
—মাই গড! এ কথাও কি তোমার বইয়ে লেখা আছে!
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
—না বইয়ে লেখা নাই। এটা শিরিন ভাবি বলেছেন।
—মাঝে মাঝে মনটায় চায় তোমার এই শিরিন ভাবিরে...।
—খবরদার বাজে কথা বলবি না। সে আমার চোখ খুলে দিয়েছে। না হলে তো আমি সারা জীবন তোরে দেবতাই ভাবতাম। কিন্তু তুইতো তা না। তুই হলি ইতর-লুইচ্চা শ্রেণির একজন মানুষ।
—বারবার লুচ্চা বলবে নাতো। গায়ে লাগে।
—এক শ বার বলব। তুই লুইচ্চা, তুই লুইচ্চা, তুই লুইচ্চা। তুই দুনিয়ার এক নম্বর লুইচ্চা। তুই হলি লুইচ্চার সর্দার।
—আচ্ছা আমিই দুনিয়ার এক নম্বর লুচ্চা, আমিই লুচ্চার সর্দার। এতবার বলার কোনো দরকার নাই। এখন খাবার রেডি করো, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
—খাবার দেব তোরে! তুই বাইর হ আমার বাসা থেকে। না হলে আমি ঘরে আগুন লাগায়ে দেব।
—আচ্ছা সত্যি করে বলতো তুমি কখনো নিজেকে সাইক্রিয়াটিক দেখিয়েছ? আমার মনে হয়, তোমার একবার হলেও সেখানে যাওয়া উচিত।
—আমার দেখাতে হবে না, আমি জানি আমার মাথায় সমস্যা আছে। না হলে কি তোর মতো ব্যাটারে আমি বিয়ে করি। কত ডাক্তার–ইঞ্জিনিয়ার আমারে বিয়ের জন্য লাইন দিচ্ছিল। তাদের বিয়ে করি নাই। নিশ্চয় ওই লোকগুলোর অভিশাপ লেগেছে, তাই তোর মতো বদ ব্যাটা আমার কপালে জুটছে।
—ওই লোকগুলোতো আর জানেন না তারা কী বাঁচা বাঁচছে। জানলে মিলাদ পড়াত, ফকির খাওয়াত।
—তাই? এই তোর না খিদে লেগেছে? যা তুই ওই লোকগুলারে খুঁজে বের কর, ওদের সাথে মিলাদ পড়। তারপর ওই মিলাদের তবারক খা। তোর খাবার এ বাসায় হবে না।
—পাগলামি করো না। আচ্ছা তুমিই বলো এই রাতে আমি এখন কোথায় যাব।
—কেন? যার সাথে লুইচ্চামী করবি, যে তোর পরকীয়া প্রেমিকা তার বাসায় যা।
—আমি কীভাবে জানব কে আমার পরকীয়া প্রেমিকা। আচ্ছা দেখতো হাতে তার নাম ঠিকানা লেখা আছে কিনা।
—তুই আমার সাথে ফাজলামি করছ? তোর প্রেমিকার ঠিকানা তুই খুঁজে বের কর। শা-লা লুইচ্চা।
তারপর বউ প্রায় ধাক্কা মেরে ঘর থেকে আমাকে বের করে দিল।
মেজাজটাই বিগড়ে গেল। মনে হচ্ছে জীবনে বড় ভুল করেছি বিয়ে করে। আর তার চেয়ে বড় ভুল করেছি বিয়ের আগে মেয়ের মানসিক অবস্থা চেকআপ না করে।
বাসা থেকে বের হয়ে সামনের চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছি এই রাতে কোথায় যাওয়া যায়। ঠিক করলাম শ্বশুরের বাসায় গিয়ে রাতটা কাটাব। রওনা দিতে যাব ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল। দেখি শ্যালিকা ফোন করেছে।
—হ্যালো, কি শ্যালিকা কেমন আছ?
—রাখেন আপনার কেমন আছ। আপনি নাকি পরকীয়া করছেন। ছি, দুলাভাই আপনার চরিত্র এত খারাপ!
—মাশ আল্লাহ এই খবর অলরেডি পেয়ে গেছ? তা শুধু তুমিই জেনেছ, নাকি বাসার সবাই এর মধ্যেই জেনে গেছে।
—এটা কি লুকানোর মতো খবর। সবাই জেনেছে। আপু বাসার সবাইকে ফোন করে বলছে আর কাঁদছে। আচ্ছা দুলাভাই আপনি এমন কাজ করতে পারলেন?
—শোনো প্রেম তো আর বলে কয়ে আসে না, হয়ে যায়। ওই গানটা শোননি? আমিতো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপরে পড়েছে। যাক ভেবেছিলাম তোমাদের বাসায় গিয়ে রাতটা কাটাব। কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে সেটা আর সম্ভব না।
—অবশ্যই না। আমাদের বাসায় কোনো লুইচ্চার জায়গা নাই। আর শোনেন আপনাকে শুধু আমাদের বাসায় না, এলাকাতেও যেন না দেখি। তাহলে ঠ্যাং ভেঙে দেব।
—আচ্ছা, কোথায় যাওয়া যায় বলতো?
—কোথায় আবার? আপনার মতো লুইচ্চা লোকের জায়গা হলো রাস্তায়। এক কাজ করেন ফুটপাতে, না হয় কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ঘুমান।
—না, ওখানে যাব না। ভাবছি যার সাথে পরকীয়া প্রেম তার বাসায় যাব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওই মহিলার স্বামী তো মনে হয় এখন বাসায়। আচ্ছা তোমার কী মনে হয়, এখন যাওয়াটা কি ঠিক হবে? দুর যা হওয়ার হবে, বিসমিল্লাহ বলে রওনা দেই, কি বলো?
—ও তুই তাহলে বিবাহিত মহিলার সাথে প্রেম করিছ! তুই এখন তার বাসায় রাত কাটাবি! ছি। দাঁড়া আমি এখনই আপাকে ফোন করে বলছি।
—কি ব্যাপার, তুমি আমাকে তুই তোকারি করছ কেন?
—চুপ কর লুইচ্চা।
বলেই লাইন কেটে দিল। শ্যালিকা ফোন কাটার কয়েক মিনিটের মধ্যে শ্বশুর মশাই ফোন দিলেন।
—আসসালামু আলাইকুম, আব্বা কেমন আছেন?
—খবরদার তুমি আমারে আব্বা ডাকবা না।
—জি আচ্ছা ডাকব না। তা চাচা কেমন আছেন?
—তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করছ? আমি কি তোমার চাচা লাগি?
—জি না, খালু।
—এক থাপ্পড়ে তোর সব দাঁত ফেলাই দেব। ব্যাটা বদমাশ।
—সরি তাহলে আপনিই বলে দেন আমি আপনাকে কি বলে ডাকব।
—তুই আমারে কিছুই ডাকবি না। চরিত্রহীন। তোর সম্পর্কে এগুলো কি শুনছি।
—কি শুনছেন?
—তুই নাকি...? ছি, ছি।
—আপনি তো জানেন, ঋতুর মাথা একটু গরম। সবকিছু নিয়েই সমস্যা বাঁধানো ওর স্বভাব। আমার ধারণা ওর মাথায় কিঞ্চিৎ গন্ডগোল আছে। আপনারা বিষয়টা জানতেন। কিন্তু বিয়ের আগে আমাকে তা বলেননি। বিষয়টা আমাকে না জানিয়ে ঠিক করেননি। ওকে ডাক্তার দেখানো উচিত।
—গন্ডগোল ওর মাথায় না, গন্ডগোল তোর মাথায়। তুই ডাক্তার দেখা, ফিস আমি দেব। ব্যাটা ফাজিল।
বলেই লাইন কেটে দিলেন। ও মাই গড। এ ফ্যামিলির সবারই দেখি মাথায় সমস্যা। আর একটা জিনিস খেয়াল করলাম, এরা রেগে গেলে সবাইকে তুই তোকারি করে। আমার ধারণা এখন শাশুড়ি ফোন করবেন এবং তুই তোকারি করবেন। কিন্তু আর গালাগাল, তুই তোকারি শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তাই ফোনের পাওয়ার অফ করে দিলাম।
কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে রাতটা কোথায় কাটাব। অনেক চিন্তা করে বন্ধু সেলিমের বাসায় গেলাম। কলিং বেল বাজাতেই কাজের মেয়েটি দরজা খুলে দিল।
—কি রহিমা, কেমন আছ?
—কেমুন আছি সেইটা আমনের জানোনের কুনো দরকার নাই। কি কামে আইছেন, সেইটা কন।
—তুমি এভাবে কথা বলছ কেন!
—ক্যারে, আমনের লগে কি আমার মিষ্টি কইরে কথা কওন লাগব?
—না, তা লাগবে না। কিন্তু তুমি তো কখনো এভাবে কথা বলো না, তাই বলছিলাম। আচ্ছা বাদ দাও। এখন দরজা থেকে সরে দাঁড়াও ভেতরে ঢুকতে দাও।
—জি না। আমনে বাসায় ঢুকতে পারবেন না।
—মানে কি?
—মানে মুনে বুঝি না। একটু আগে খালাম্মা মাইনে আপনার বউ আমাগো খালাম্মারে ফোন কইরা কইসে আমনের নাকি চরিত্রে দোষ আছে। আমনেরে যেন ঘরে ঢুকতে না দেই। হুনেন বাসায় শুধু আমনের বন্ধুই থাহে না। আমরা ভদ্র মহিলারাও থাহি।
—সেটা তো ঠিকই বলেছ। তাহলে তো ঘরে ঢুকাটা ঠিক হবে না। তা সেলিমকে কি একটু ডাকা যাবে?
—না, আমাগো খালু ভালা মানুষ। হে আর আমনের লগে মিশত না।
—সেলিম কি এ কথা বলেছে!
—আমনের লগে অত কথা কইতে পারতাম না। আমনে অহন যানতো।
বলেই দরজা বন্ধ করে দিল। বুঝলাম আজ রাতে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন কারও বাসায় গিয়ে লাভ নাই। আমার ধারণা এতক্ষণে পুরো বাংলাদেশ জেনে গেছে যে, আমি লুচ্চা ও চরিত্রহীন। আমি চরিত্রহীন সেটা এই মুহূর্তে আমার কাছে বড় সমস্যা না। বড় সমস্যা হলো এই রাতে আমি কোথায় যাব। রাতটা অবশ্য কোনো একটা হোটেলে থাকা যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হোটেলে রাত কাটিয়েছি জানলে আরেক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। বলা যায় না, বউ হয়তো বলবে কলগার্ল নিয়ে হোটেলে ছিলাম। না যাই তার চেয়ে বরং আজ রাতটা কমলাপুরেই কাটিয়ে দেই। কী আর করা। সবই কপালের দোষ।

বি. দ্রষ্টব্য: মেয়েরা বিয়ের আগে কত মিষ্টি, কত রোমান্টিক থাকে। বিয়ের পরে কেমন জানি হয়ে যায়। বুঝি না কেন এমন হয়। নাকি শুধু আমার বউই এমন? বড়ই বিপদে আছি।
...

ইমদাদ বাবু: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।