নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্যাপন

বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল
বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল

নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দ্য হেগে বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্‌যাপন করা হয়েছে। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিদেশিদের সামনে তুলে ধরার জন্য গতকাল শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এ উপলক্ষে এক মেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের সদ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত লিওনি কুলেনিয়ার, ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক সিনিয়র পলিসি কর্মকর্তা ইয়ান দে বোর, নাফিক-এর (নেদারল্যান্ডসে বিদেশিদের পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ ও বৃত্তি ইত্যাদি বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান) কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ট্রিক্স ভান হফ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় দূতাবাসের পক্ষে কাউন্সেলর কাজী রাসেল পারভেজ ‘Bangladesh: a success story for MDGs and dreamer for SDGs’ শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। ওয়াখেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ক্যাথরিন টারভাইস্কা ভান স্কেলটিঙ্গা বাংলাদেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর, বাংলাদেশি একজন আইটি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে এবং ওয়াখেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অধ্যয়নরত একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মৎস্যচাষ ও অ্যাকুয়াকালচার বিষয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বিষয়ে প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন। এ ছাড়া নাফিক বাংলাদেশে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করে।

বক্তব্য দিচ্ছেন লিওনি কুলেনিয়ার (ছবিতে ওপরে)
বক্তব্য দিচ্ছেন লিওনি কুলেনিয়ার (ছবিতে ওপরে)

বিশেষ অতিথি লিওনি কুলেনিয়ার তার বক্তব্যে বাংলাদেশে তার দায়িত্ব পালনকালে দেশটির প্রতিটি সেক্টরে অতি দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বিশেষ করে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের কর্মঠ জনগণ, উদ্ভাবনাময়ী তরুণ প্রজন্ম এবং সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও গৃহীত পদক্ষেপের সমন্বয়ই এই উন্নতির কারণ। বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০-কে একটি যুগান্তকারী প্রকল্প উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত লিওনি বাংলাদেশের অন্যান্য সেক্টরেও ডাচ সরকারের নানাবিধ সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার কথা তুলে ধরেন।

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশের কাতারে বাংলাদেশ পৌঁছার লক্ষ্য স্থির করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্রিয় রয়েছে। রাষ্ট্রদূত উন্নয়নের কোনো শেষ নেই উল্লেখ করে একটি দায়িত্বশীল জাতি হিসেবে দেশকে উন্নয়নের নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ থেকে এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের দলে অবস্থান করছে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

শেখ মুহম্মদ বেলাল নেদারল্যান্ডসের সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেক দেশ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যা দিয়েছিল, কিন্তু সেই বাংলাদেশ তার সকল সীমাবদ্ধতা নিয়েও দশ লাখের ওপর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করে এখন সারা বিশ্বে একটি মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে, নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বহুমুখী অর্জনের কথা তুলে ধরেন।

রাষ্ট্রদূত বেলাল ডাচ-বাংলা ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য নেদারল্যান্ডস সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন,১০০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে ডাচদের কারিগরি সহায়তা বাংলাদেশের বদ্বীপ ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা এবং টেকসই উন্নয়নে প্রশ্নাতীত ভূমিকা রাখবে।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

আলোচনায় বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া ও ড. নাহিদ হাসান। তারা কমিউনিটি সকলকে নিজ নিজ অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশীদার হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। উন্মুক্ত আলোচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি তা কীভাবে আরও এগিয়ে নেওয়া যায় সে বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

মেলায় বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সংগীতশিল্পী প্রজ্ঞা ভট্টাচার্য ও বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিরা সংগীত পরিবেশন করেন। বিজ্ঞপ্তি