প্রিয় শিক্ষক

জাফর আহমেদ
জাফর আহমেদ

তোমার প্রিয় ব্যক্তি ও বস্তু কী জিজ্ঞেস করলে আমি কখনোই বলতে পারি না। মনে হয় কাকে বা কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? কিন্তু কেউ যদি বলেন প্রিয় শিক্ষক কে? প্রথমেই কোনো দ্বিধা ছাড়া আমার যার কথা মনে হবে তিনি হলেন জাফর আহমেদ স্যার। প্রিয় হতে হলে একজন ব্যক্তির যতগুলো গুণ থাকা লাগে তার সবগুলো গুণই আমি ওনার মধ্যে দেখেছি।

আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। স্যার আমাদের নিশ্চিন্তপুর স্কুলে যোগ দিলেন। সদ্য অনার্স পাস করা স্যারের প্রথম শিক্ষকতা আমাদের বিদ্যালয় দিয়ে শুরু। স্যার আমাদের বাংলা ও পরে ব্যবসায় শিক্ষা পড়াতেন। ধৈর্য নিয়ে, কোমলভাবে, অসম্ভব সহজ করে তিনি আমাদের যেকোনো কিছু বোঝাতেন। রাগ বা বিরক্ত হতে দেখিনি কখনো।

গণিতে আমি সম্ভবত স্কুলে থাকাকালে কখনো পাস করতে পারিনি। গণিত মানেই আতঙ্ক। তো একদিন এক গণিত ক্লাসে স্যার বোঝানোর পর বললেন, কেউ যদি না বোঝ তাহলে অবশ্যই আমাকে বলবে। স্যারের এই আশ্বাসে আমি দাঁড়িয়ে বললাম আমাকে আরেকটু বুঝিয়ে বলতে। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে ক্লাস ভরা ছাত্রছাত্রীর সামনে বললেন, মাঝখানে কি তোমার জন্য আলাদা একটা দেয়াল ছিল। সবাই বুঝল আর তুমি বুঝলে না!

লজ্জায় আমি আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনি। জীবনে আর কখনো কোনো স্যারের কথ্ না বুঝলেও প্রশ্ন করিনি। আমার এই ভীতি জাফর স্যার দূর করে দিয়েছিলেন।

শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রী সম্পর্ক মানেই ভয় আর শাসনের সম্পর্ক। কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, তিনি গতানুগতিক শিক্ষকদের মতো নন। বরং বন্ধু বা বড় ভাইয়ের মতো। মাঝে মাঝে তিনি পাঠ রিলেটেড গল্প করে পড়াটা উপভোগ্য করে তুলতেন। আমরা আনন্দ নিয়ে পড়তাম।

‘ব্যক্তিত্ব’—এই শব্দটার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচর স্যারকে দেখে। অসম্ভব ব্যক্তিত্ববান মানুষ স্যার। ইয়ং আর দারুণ সুদর্শন একজন মানুষ। স্বভাবতই সবাই ভেবেছিল দুই দিন পরই হয়তো ক্লাসে সুন্দরী মেয়ে খুঁজে বেড়াবে! খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোমল চরিত্রের কঠিন ব্যক্তিত্ব সবার ধারণাকে মিথ্যে করে দিল। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল যখন দেখলাম স্যার সুন্দরী মেয়ে না খুঁজে বরং কোনো মেয়ে অশালীনভাবে চললে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে শালীনতার শিক্ষা দিতেন। অথচ অনেক শিক্ষককেই দেখেছি কারণে–অকারণে, নানা অজুহাতে মেয়েদের গায়ে হাত দিতেন!

শুধুমাত্র এমন একজন ব্যক্তিত্ববান মানুষের ছায়ায় থেকে শিক্ষা নেওয়ার লোভে আমি ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়াশোনা করেছিলাম।

লেখিকা
লেখিকা



কোনো বিষয় সহজ সুন্দর করে বোঝাবার অসাধারণ ক্ষমতা আর কোনো বিষয় সম্পর্কে তিনি না জানলে সহজভাবে তা স্বীকার, নিজের অজ্ঞতার ভার ছাত্রছাত্রীর ওপর চাপাতে রাগ না করা বা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ স্যারকে সবার কাছেই অতি প্রিয় করে তোলে খুব অল্প সময়ে।

খুব ভালো লাগে স্যার যখন হ্যালো শব্দটা শুনেই বলে দেন—কি শারমিন বলছ?

মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, সম্মান আর সফলতায় কাটুক আপনার জীবন। আপনার জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক এই সমাজ।
...
শারমিন আকতার: ইউনিভার্সিটি অব গিজেন, গিজেন, জার্মানি।