রাকিব ঘড়ি দেখল। সাড়ে এগারোটা বাজে। ঘড়ি দেখতে দেখতে সে রুমের এপাশ-ওপাশ দেখল। রোদের একটা রশ্মি ঠিক তির্যকভাবে নয় আবার খাঁড়াভাবেও নয়, জানালার কাচ গলে লাউঞ্জের ভেতরে এসে পড়েছে। কতগুলো রেণু রোদের সেই রশ্মির ভেতর এলোমেলোভাবে উড়ছে।
রাকিব সেই এলোমেলো রেণুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তার জীবনটাও কী এই রেণুর মতো নয়। নির্দিষ্ট কোনো গতি নেই। এলোমেলো ও বিশৃঙ্খল। অনির্দিষ্টতার ধাপে ধাপে এগোতে এগোতে ক্রমাগত আলোর সন্ধান খুঁজছে।
এক মুহূর্তের জন্য রাকিব কোথায় যেন ক্ষয়ে গেল! ভাবল, ছোট ফুফু তাকে ছোট করার জন্য যত নোংরাভাবেই কথাগুলো বলে থাকেন না কেন, তিনি তো ভুল বলেননি? তার মা ঠিকই চার বছর বয়সে তাকে রেখে চলে গিয়েছিলেন। এমেন্ডাও তো একই অবস্থা করছে। পাঁচ বছর সংসার করার পর তারই বন্ধু সিরাজের হাত ধরে চলে গেছে। ছোট ফুফু খুব স্বার্থপর একজন মহিলা। প্রয়োজনে অনেক নিচেও নামতে পারেন। দেখা যাবে খানিকক্ষণ পরই আবার ফোন দিয়ে কিছু হয়নি এমন একটা ভাব ধরে মধুর করে কথা বলবেন। রাকিবও তা মেনে নেবে। শত হলেও আত্মীয় তো। একই রক্তের। আপন ছোট ফুফু! কিন্তু ছোট ফুফুর কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো তো একেবারে ফেলনার নয়?
রাকিব সোফায় একপাশে কর্ডলেস ফোন সেটটা রেখে আবার রোদের রেণুর দিকে তাকাল। আবারও তার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। সত্যি সে জীবনের অনেক কিছু বুঝতে পারে না। খাপও খাইয়ে নিতে পারে না। আর পারে না বলেই সে চুপচাপ থাকে।
রাকিব জানে, এই যে ছোট ফুফু, এই ছোট ফুফু তার ওপর যতটুকুই অধিকার খাটান, রাকিবের কিন্তু সেই বোধ হয় না। তাই ছোট ফুফুর রাগটাকে যেমন রাকিব অতি সাধারণ ভাবে নেয়, স্নেহ-মমতাকেও তেমনই অতি সাধারণভাবে নেয়। একটা সময় ছিল, যখন মা তাকে চার বছর বয়সে রেখে তাদেরই পশ্চিম কাজীবাড়ির এক লজিং মাস্টারের সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। লজিং মাস্টারের সঙ্গে গিয়ে নতুন করে সংসার পেতেছিলেন, তখন এই ছোট ফুফুই পারতেন রাকিবকে ছায়া দিয়ে, মমতা দিয়ে আগলে রাখতে। কিন্তু তিনি ছায়া দিয়ে আগলে রাখবেন কী, কখনো রাকিবের ছায়াই মাড়াননি! আর রাকিব যখন এই নিউজিল্যান্ডে আসে, প্রথম প্রথম ছোট ফুফু অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে এমন আচরণ করতেন যেন তিনি একজন অচেনা মানুষ!
জানালা গলা রোদের রশ্মিটা আস্তে আস্তে ছোট হতে হতে হঠাৎ করেই একটা ধূসর ছায়ার রেখা করে মিইয়ে গেল। রেণুর অস্তিত্বও ধূসর ছায়ার মিইয়ে যাওয়ার আগেই উবে গেল। রাকিব সেদিকে তাকিয়ে থেকে ভাবল, তার দুঃখগুলো এ রকমই। রেণুর মতো আপেক্ষিক হারিয়ে যায়। সুখগুলোও এ রকমই। একইভাবে রেণুর মতো আপেক্ষিক হারিয়ে যায়!
রাকিব আবার ঘড়ি দেখল। প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। আরেক কাপ কফি হলে ভালো হতো। কিন্তু রাকিবের বসা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না।
আতিক আবার তার রুমে গিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। এখান থেকেও নাক ডাকার শব্দ আসছে। দেয়ালে ঘড়ির কাঁটাটা চলছে আতিকের নাক ডাকার শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। রাকিব জানালা গলে বাইরে তাকাল। বাইরে মেঘের ছায়া।
রাকিব ভাবল, আজ আবার বৃষ্টি নামবে না তো? তাহলে তো মাউন্ট পিরংগিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাটাই বাতিল। এমনিতেই তার মনটা কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠেছে। কাছে কিংবা দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারলে তার ভালো লাগত। নদীর জন্যই তার যত অপেক্ষা।
রাকিব কিছু না ভেবেই টিভি চালু করল। কিন্তু সে টিভি চালু করেই আতিকের কথা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে টিভি বন্ধ করে দিল। টিভি বন্ধ করার পর কেন জানি আতিককে ছাপিয়ে ছোট ফুফুর চেহারাটা ভেসে উঠল। কিন্তু সে ছোট ফুফুকে নিয়ে আর ভাবতে চাচ্ছে না। যদিও সে মাথা থেকে ছোট ফুফুর অশালীন আচরণটা কিছুতেই দূর করতে পারছে না।
রাকিব তখন একটা কবিতা নিয়ে ভাবতে বসল। কবিতার বিষয়বস্তু এ রকম, একটা নিঃসঙ্গ দাঁড়কাক। কোথাও একটা নিঃসঙ্গ খড়ের গাঁদার মাথায় সরু বাঁশটার ওপর বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর কাকটা ডাকছে—কা কা, কঁ কঁ, কা কা। একটা সবুজ শাড়ি পরা নারী সেই অলক্ষুনে দাঁড় কাঁকটাকে তাড়ানোর জন্য বেরিয়ে এলেন। এসেই শব্দ করে তাড়াতে শুরু করলেন, হিস হিস, হিস হিস, দূর হ, অলক্ষুনে কাক। হিস হিস, হিস হিস! রাকিব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল, সেই সবুজ শাড়ি পরা নারী আর কেউ নয়। স্বয়ং ছোট চাচি...!
কিন্তু এটা রাকিবের কবিতার কল্পনা। রাকিব বুঝতে পারল, কবিতার কল্পনা বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া যায় না। সে বাস্তবে ফিরে আসার জন্য জানালা গলে বাইরে তাকাল। বাইরে মেঘের ছায়া হঠাৎ করেই যেন কোথায় উবে গেছে। চারদিকে ঝকঝকে-তকতকে রোদ। কিন্তু এই রোদের ভেতর তার কবিতার কল্পনা আবার জেঁকে ধরল। সে দেখল, সবুজ সালোয়ার-কামিজ পরা নদী জানালা দিয়ে বাসার ভেতরটা দেখছে।
রাকিবের ভেতরটা যেন আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সে ত্বরিত সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে এক গাল হেসে বলল, নদী, তুমি এসেছ!
তাকে আসতে দেখে রাকিবের এই অত উচ্ছ্বসিত হওয়ায় নদী মনে মনে একটু অবাক হলো। কিন্তু মুখে প্রকাশ করল না। বরং রাকিবের এক গাল হাসি দেখে সে নিজেও আন্তরিক হাসল।
রাকিব এমনিই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, দরজায় নক করোনি কেন?
নদী বলল, বাসার ভেতর কোনো সাড়াশব্দ নেই। জানালাটা খোলা। ভাবলাম, দরজা নক করার আগে একবার ভেতরে দেখে নেই। আতিক ভাই না রাতে ট্যাক্সি চালান। যদি তিনি ঘুমান? শুধু শুধু দরজায় নক করে তার ঘুম ভাঙানো।
রাকিব বলল, ভালোই করেছ। আতিক ঘুমাচ্ছে।
নদী বলল, যদি আতিক ভাই লাউঞ্জে সোফায় বসে থাকতেন তাহলেও আপনাকে বাইরে দাঁড়িয়েই ফোন দিতাম। কিন্তু দেখি, আপনি সোফায় বসে আছেন।
: আতিকের প্রতি তোমার এত লজ্জা কেন?
: এখানে লজ্জার কিছু নেই। ব্যাপারটা স্বাচ্ছন্দ্য-অস্বাচ্ছন্দ্যের।
: আচ্ছা, আমি মেনে নিলাম। তুমি আমার বেডরুমে এসে বস। আতিক ঘুমাচ্ছে। ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না।
নদী মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে বলল, ঠিক আছে। অসুবিধা নেই। বরং একটা কাজ করতে পারি, আমি ড্রয়িং রুমেই চুপচাপ বসে থাকি। আপনি ড্রেস-আপ করে আসুন। আমরা বাইরে বের হই।
রাকিব সায় দিয়ে বলল, ভালো আইডিয়া।
নদী আবার আন্তরিক হাসল। মুখে কিছু বলল না।
তারা যখন বাসা থেকে বের হলো তখন সবে সাড়ে বারোটা বাজে। বাইরে শরতের সেই নরম রোদ। আকাশের সাদা মেঘগুলোও খুব দূরে দূরে। দক্ষিণের বাতাসে সকালের মতো তেমন একটা শীতল ভাব নেই। তারপরও রাকিব শার্টের ওপর একটা লেদারের কালো জ্যাকেট পরে নিল। কারণ তারা মাউন্ট পিরংগিয়ায় যাবে। মাউন্ট পিরংগিয়ার পর নারোটো লেকে না গেলেও মাউন্ট পিরংগিয়া থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবেই।
নদী আজ সবুজ সালোয়ার-কামিজ পরেছে। সালোয়ার-কামিজটা ঠিক গাঢ় সবুজ নয়, টিয়ে রঙের সবুজ। ওড়নাটাও টিয়ে সবুজ রঙের। হাতে অবশ্য একটা হলুদ রঙের কার্ডিগান। এই টিয়ে সবুজ রঙের সালোয়ার-কামিজটা রাকিব নদীর পরনে আগেও দেখেছে।
রাকিব অবাক হয়ে ভাবল, নদীর মনের সঙ্গে কী তার মনের সংযোগ আছে? সে যখনই টিয়ে সবুজ রংটার প্রতি মনে মনে দুর্বল হয়ে ওঠে, নদী তখনই বলা নেই-কওয়া নেই সবুজ সালোয়ার–কামিজ পরে আসে। কী অদ্ভুত ব্যাপার...!
রাকিব বাসার ড্রাইভওয়ে থেকে নেমে ওয়েলিংটন স্ট্রিটের অভিমুখে ম্যাকফার্লেন স্ট্রিটের ফুটপাত ধরে নদীর পাশাপাশি গিয়ে একটু হেসে বলল, তুমি যে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে ভাবিনি। নয়তো রেডি হয়েই বসে থাকতাম। আমি ভেবেছিলাম, তুমি আড়াইটা-তিনটার দিকে আসবে।
নদী বলল, আমারও সে রকম পরিকল্পনাই ছিল। আপনি তো জানেন, শনিবারে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি পুরো সপ্তাহের জন্য রান্না করে রাখি। কিন্তু গতকাল করতে পারিনি। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার বাসায় আসার আগে পুরো সপ্তাহের রান্না করার পরিকল্পনাই ছিল। কিন্তু আজও কেন জানি রান্না করতে ইচ্ছে হলো না।
: অসুবিধা নেই। সন্ধ্যা ফিরে রান্না করে ফেল।
: হ্যাঁ, তাই করতে হবে। এ ছাড়া উপায় নেই। আগামীকাল থেকে ক্লাস।
: তুমি অবশ্য রান্নাবান্না ভালোই শিখেছ।
: ওটা তো আমি আপনার কাছ থেকেই শিখেছি।
রাকিব সায় দিয়ে বলল, হ্যাঁ, তবে কেন তোমাকে শিখিয়েছি জানো, রজারসন স্যার আমাকে অনুরোধ করেছেন বলে।
নদী অবাক হয়ে বলল, তিনি আপনাকে অনুরোধ করেছেন! কবে?
: আমার বাসায় ছয়-সাত সপ্তাহ আগে এলেন না? সেই বৃষ্টির দিনে? তোমার মনে নেই? তিনি আমার বাসায় দুপুরে খেয়েছিলেনও।
: ও হ্যাঁ, মনে আছে। গরুর মাংস, ক্যাসোবার ডাল, আরও কী যেন?
: বাঁধাকপির ভাজি।
: হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনার সঙ্গে আমার অভিমান পর্ব চলছিল।
: ভালোই বলেছ, অভিমান পর্ব!
: সত্যি তো বলেছি। আপনাকে আমি এখনো ভয় পাই। যদি আবার অভিমান করে ফেলেন?
রাকিব মৃদু হাসল। কিছু বলল না।
নদী বলল, আপনি এত দিন বলেননি?
রাকিব জিজ্ঞেস করল, কোনটা?
: ওই যে বললেন, আমাকে রান্না শেখাতে রজারসন স্যার আপনাকে অনুরোধ করেছেন?
: মনে ছিল না।
: তিনি আর কী বলেছেন?
: আসলে তিনি সেদিন তোমাকে রান্না শেখানোর ব্যাপারে অনুরোধ করেননি। এমনিই কথার কথা বলেছিলেন। তুমি আবার রজারসন স্যারকে গিয়ে বলো না।
: আমি তো স্যারকে গিয়ে বলবই। প্রয়োজনে চার্জ করব।
: কী বলছ!
: আপনি মনে হয় ভয় পেয়ে গেছেন!
: নাহ, ভয় পাব কেন। তিনি কী আমার স্যার যে ভয় পাব! তিনি তোমার স্যার।
: আরে আপনি এমনি কথার কথা বললাম। তিনি আপনাকে বলে উপকারই করেছেন।
রাকিব মাথা ঝাঁকাল। কিছু বলল না।
নদী কী ভেবে বলল, এখন কিন্তু আমরা কারি পটে গিয়ে ঢুকব। মনে আছে তো?
রাকিব বলল, অসুবিধা নেই। তুমি বাসায় বলেছ, মনে আছে। তবে আমি দুপুরে কখনো কারি পটে খাইনি। যতবার খেয়েছি, রাতেই খেয়েছি। তোমার সঙ্গেই তো অনেকবার ডিনার করলাম, তাই না?
: হ্যাঁ, তবে দুপুরে খেয়ে এক্সপেরিয়েন্স নেই। একটা এক্সপেরিমেন্টও হয়ে গেল।
: এক্সপেরিমেন্ট?
: ওই তো, খাবারের এক্সপেরিমেন্ট। রাতের খাবার আর দুপুরের খাবারের মধ্যে পার্থক্য কী, ওটা দেখব।
: ওটা তো দেখার কিছু নেই। একই রেস্টুরেন্ট। শেফ একই। খাবার তো একই রকম হবে।
: আমার মনে হয় না।
: আচ্ছা, ঠিক আছে, রেস্টুরেন্টে গিয়েই দেখি।
নদী বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ। তবে আমার এ মুহূর্তে নান রুটি আর তন্দুরি চিকেন বেশ ভালো লাগবে। পেটের ভেতর এখন রাক্ষস ঘুরছে।
রাকিব চোখ বড় করে বলল, পেটের ভেতর রাক্ষস? নদী, কী উপমাটা দিলে! তুমি কবিতা লিখলে কিন্তু তোমার মাকে ছাড়িয়ে যাবে।
নদী বলল, মাকে ছাড়িয়ে যেতে পারব কিনা জানি না। তবে আপনাকে কিন্তু ছাড়িয়ে যাব।
: তাই নাকি? বেশ তো। আমাকে টার্গেট হিসেবে ধরে কোনো লাভ হবে না। আমি তেমন কোনো কবি নই। বরং তুমি কবিতা লিখতে গিয়ে তোমার মাকে টার্গেট হিসেবে ধর।
: এ জন্য আমি কবিতাই লিখব না।
: ওমা, কী বলো! আচ্ছা, ঠিক আছে, আমাকে টার্গেট হিসেবে ধরেই কবিতা লেখ।
: আপনি তো আমার মার মতো কথা বলছেন।
: ভুল তো বলিনি।
নদী হেসে ফেলল, হি–হি, হি–হি। আপনি তো দেখি সিরিয়াসলি নিচ্ছেন? আমি লিখব কবিতা?
রাকিব জিজ্ঞেস করল, লিখলে অসুবিধা কী?
; তাহলে আমি কার কবিতা হব?
: তুমি আবার কার কবিতা হবে?
: কেন আপনার?
: আমার কবিতা?
: হ্যাঁ, আপনি আমাকে উপলক্ষ করে কবিতা লিখছেন যে...!
রাকিব আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, তোমাকে উপলক্ষ করে কে কবিতা লেখে?
নদী চোখ বড় বড় করে বলল, দেখুন, ন্যাকামো করবেন না।
রাকিব চুপ হয়ে গেল।
নদীও চুপ হতে গিয়ে কী ভেবে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, রাকিব ভাই, আমি ভুলেই গেছি। একটা সুখবর আছে।
রাকিব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী সুখবর?
: আমার মা একটা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। এক লাখ টাকা পুরস্কার ও একটা গোল্ড ক্রেস্ট।
: কী বলো! এ তো দারুণ খবর। তিনি কোথায় থেকে এই পুরস্কারটা পেয়েছেন?
: কুমিল্লা থেকে। কুমিল্লার গোমতী সাহিত্য একাডেমি থেকে। আগামী মাসে ডিসি হলে বিশাল আয়োজন করে মাকে সংবর্ধনা ও পুরস্কার দেওয়া হবে। খবরটা শোনার পর থেকে আমার কী যে আনন্দ লাগছে!
: খবরটা কখন শুনেছ?
: গতরাতেই। রাত দেড়টা-দুইটার দিকে। মনে করেছিলাম, সকালে উঠে ফোনে আপনাকে জানাব। পরে ভাবলাম, আপনার এখানে আসছিই তো। সাক্ষাতেই বলব। কিন্তু দেখেন, এতক্ষণ কথায় কথায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, তোমার মা পুরস্কার পাওয়ার মতোই একজন কবি। অবশ্য শুধু পুরস্কার দিয়ে তাকে যাচাই করলে ভুল হবে। তিনি অনেক মহান কবি।
নদী আবেগের গলায় বলল, রাকিব ভাই, আপনি এভাবে কবিতা লিখতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি আপনিও এমন বড় বড় পুরস্কার পাবেন। আমার বিশ্বাস।
রাকিব মুগ্ধ হয়ে নদীর দিকে তাকাল।
নদী আরও মুগ্ধ গলায় বলল, আমার মার মতো আপনিও যখন কোনো পুরস্কার পাবেন, আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না! (ক্রমশ)
মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>
ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: