মেঘে মেঘে রংধনু-ছয়

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘ। কিন্তু সেই খণ্ড খণ্ড মেঘের ভেতর নীলের প্রভাব এত বেশি যে, নীল রংটা ঠিক চোখে লাগে। চারদিকে দুপুর ও বিকেলের সন্ধিক্ষণের চকচকে রোদ। শরতের বাতাস বইছে হিন হিন, হিন হিন। বাতাসে শীত ও উষ্ণতার মিশ্রণ। প্রকৃতিতে বিস্তৃত সবুজের ওপর সন্ধিক্ষণের হলুদ রোদটা বিছিয়ে রয়েছে কেমন কাঁচা সোনার রং ধরে। সারি সারি সবুজ পাইন গাছের ডগা নড়ছে তির তির, তির তির। কাছে কোথাও একটা পাখি ডাকছে টুইট টুইট, টুইট, টুইট। এ ছাড়া অসংখ্য চড়ুই পাখির ডাক কিচ কিচ, কিচির কিচির, কিচ কিচ।

পাহাড়ের ঢালে ধাপে ধাপে গড়ে ওঠা বসতি নিয়ে টেম্পল ভিউ শহরটা দেখতে দেখতে রাকিব ও নদী টেম্পলের কমপ্লেক্সের ভেতর ঢুকল। টেম্পল কমপ্লেক্সের ভেতরের পুরোটাই ফাঁকা। এ সময় অবশ্য টেম্পলটা ফাঁকাই থাকে। বড়দিন ও নতুন বছরের সময় টেম্পলে লোকসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহর ও অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চার্চেস অব ক্রাইস্ট লেটার ডে সেন্টের অনুসারীরা এসে বেশ ভিড় জমান। এ ছাড়া, প্রচুর পর্যটকও আসে।

রাকিব টেম্পল কমপ্লেক্সের একপাশে গাড়িটা পার্ক করে নামতেই দেখল, একজন মোমিন টেম্পলের অডিটোরিয়ামের সামনে হাঁটছেন। দুজন পর্যটক ঘাসের ওপর এদিক-ওদিক হাঁটছে।

নদী–রাকিব টেম্পলের সিঁড়ির গোড়ায় এসে দাঁড়াল। একটা পাহাড়ের মাথায় টেম্পলটা। অনেকগুলো সিঁড়ি ভাঙতে হয়। সিঁড়ির দুই পাশে থরে থরে সাজানো ফুলের বাগান। নদী দীর্ঘ উঁচু সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে উঠতে কেমন মুগ্ধ হয়ে গেল। সিঁড়ির কয়েক ধাপ উঠেই সে কয়েক মুহূর্ত জন্য থামছে আর মুগ্ধ হয়ে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া অনেকগুলো পাইন গাছ। মসৃণ ঘাসের লন। টেম্পলের কমপ্লেক্সকে বৃত্ত করে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত খামার ভূমি। দূরের হ্যামিল্টন শহরের উঁচু উঁচু দালানগুলোও দেখা যাচ্ছে।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে নদীকে বারবার থেমে যেতে দেখে রাকিব জিজ্ঞেস করল, কী নদী, সিঁড়ি ভাঙতে সমস্যা হচ্ছে? আসলেই টেম্পলটা অনেক উঁচুতে।

নদী হেসে বলল, না, ঠিক তা নয়।

রাকিব বলল, তাহলে থেমে যাচ্ছ যে? সমস্যা হলে আমার হাতটা ধরতে পার। বলেই সে তার বাম হাতটা বাড়িয়ে দিল।

নদী তাড়াতাড়ি বলল, না না, হাত ধরতে হবে না। টেম্পলের চারপাশটা এত সুন্দর যে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে বারবার থামতে হচ্ছে। আমার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সমস্যা হচ্ছে না।

রাকিব হাতটা গুটিয়ে নিতে নিতে বলল, ও আচ্ছা।

নদী কী ভেবে হঠাৎ অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেল। ভাবল, সে রাকিব ভাইয়ের হাতটা ধরলেই পারত? রাকিব ভাই এভাবে তো কখনো তার হাতটা ধরতে বলেন না। বরং ওয়াইকাটো নদীর তীরে বা কোথাও হাঁটতে গেলে মাঝেমধ্যে সে মনে মনে রাকিব ভাইয়ের হাতটা ধরার কথা ভাবে!

নদীর ইচ্ছে হলো বলতে, রাকিব ভাই, আপনি আরেকবার আপনার হাতটা ধরার কথা বলেন, প্লিজ...! কিন্তু নদী বলতে পারল না। সে এবার তর তর করে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে এল।

রাকিবও নদীর পাশাপাশি উঠে এল।

বেশ বড় একটা পাহাড়ের মাথা সমতল করে বিশাল-বিস্তৃত জায়গা নিয়ে টেম্পলটা গড়ে তোলা হয়েছে। টেম্পলের চারদিকে প্যাভ বসিয়ে পর্যটক ও ধর্মাবলম্বীদের জন্য হাঁটার পথ বানানো হয়েছে। চারপাশে স্টিলের রেলিং দিয়ে পর্যটকদের জন্য বানানো হয়েছে ভিউ পয়েন্ট।

নদী একটা ভিউ পয়েন্টের রেলিং চেপে দাঁড়িয়ে বলল, রাকিব ভাই, চারদিকে দেখেন, এ তো দেখি সীমাহীন সুন্দর।

রাকিবও রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে চারদিক তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ, সুন্দর।

: আপনি শুধুই সুন্দর বলছেন যে?

: হ্যাঁ, কারণ বাকিটা তো তুমি সাহিত্যের ভাষাতেই বলে ফেলেছ, সীমাহীন সুন্দর!

নদী একটা লাজুক হাসি দিল। বলল, সংক্রমিত হচ্ছি যে?

রাকিব বলল, হয়েছে, এত কঠিন করে বলতে হবে না।

নদী এবার শব্দ করে হেসে ফেলল হি হি, হি হি।

রাকিব নদীর হাসির বিনিময়ে স্মিত হেসে পশ্চিম দিকে দূরে তাকাল। বিকেলের সূর্যটা আরেকটু হেলে পড়েছে। এক খণ্ড সাদা মেঘ সূর্যের বুক চিরে চলে যাচ্ছে। তাদের পাশে রোদটা একটু মিইয়ে এসেছে।

নদী হঠাৎ বলে বসল, রাকিব ভাই, আমি আপনার হাতটা ধরি?

রাকিব বুঝতে না পেরে এক মুহূর্তের জন্য হা করে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল। পরক্ষণ মুখ ফসকে বের হয়ে গেল, কেন?

নদী বলল, না না, এমনিই বলেছি। কোনো কারণ নেই। চারদিকের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর তো, তাই! অসুবিধা নেই। শুধু শুধু হাতটা ধরতে হবে কেন...!

রাকিব মৃদু হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ধর।

নদী সঙ্গে সঙ্গেই রাকিবের হাতটা ধরল না। একটু সময় নিয়ে আস্তে করে ডান হাতটা তুলে রাকিবের বাম হাতটা ধরল।

নদীর হাত বেশ উষ্ণ। রাকিব বাইরে প্রকাশ না করলেও ভেতরে সে ঠিক কেঁপে উঠল। শরীরের ভেতরে রক্তের একটা শীর্ণ ধারা পা থেকে মাথা পর্যন্ত প্রবাহিত হলো।

কিন্তু তারা হাত ধরলেও কেউ কারও দিকে তাকাচ্ছে না। উভয়ই মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে দূরে কোথাও মৌনতা খুঁজছে।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, নদী একটু হাঁটবে? টেম্পলের চারদিকই কিন্তু দেখার মতো।

নদী হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল, ঠিক আছে, চলুন।

রাকিব মনে মনে বলল, আহা, হাতটা সরানোর দরকার ছিল কী? হাত ধরেও তো হাঁটা যায়? কিন্তু সে কিছুই বলল না। প্যাভের ওপর তারা পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।

নদী হাঁটতে হাঁটতে দিগন্ত বিস্তৃত খামারভূমি আর দূরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বলল, রাকিব ভাই, নিউজিল্যান্ডটা এত সুন্দর কেন?

রাকিব বলল, আমিও তাই ভাবি। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার ছোট ফুফু ও ছোট ফুপা কত বলেন ওখানে চলে যেতে। আমি এখানে যে জব করি, অস্ট্রেলিয়াতে ডবল বেতন পাওয়া যাবে। কিন্তু তবুও আমি যাই না। আমি বলি, নিউজিল্যান্ড দেশটা একটা স্বর্গ দেশ। এই স্বর্গ দেশটা ছেড়ে আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।

: আমি নিউজিল্যান্ড না এলে বুঝতেই পারতাম না, একটা দেশ এত সুন্দর হয়!

: তুমি ঠিকই বলেছ। তোমাকে একটা কথা বলি, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশেরই নিজস্ব একটা সৌন্দর্য আছে। কিন্তু সেই সৌন্দর্য খুঁজে নিতে হয়। সেই সৌন্দর্য খুঁজতে দূরে যেতে হয়। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে ঘর থেকে পা ফেললেই সৌন্দর্য এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

: আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আহা, মা যদি একবার এই দেশটা দেখে যেতে পারতেন!

: হ্যাঁ, তিনি নিউজিল্যান্ডে এলে খুব মুগ্ধ হতেন। কবি মানুষ!

: তা কী আর বলার অপেক্ষা রাখে? তিনি নিশ্চয়ই বেশ কিছু চমৎকার কবিতা লিখতে পারতেন।

: তুমি কিন্তু তাকে একবার নিউজিল্যান্ডে ঘুরে যেতে অনুরোধ করতে পার।

: তিনি কী আসবেন?

: আসবেন না কেন? কিছুদিনের জন্য হলেও তাঁকে আসতে বল।

: তা না হয় বলতে পারি। কিন্তু তিনি আসবেন না।

: দেখ, একজন মানুষ এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এসব স্থানে না এলে শুধু স্বপ্নেই দেখতে পারেন।

: সেটা কী রকম?

: ব্যাপারটা খুব সাধারণ। একজন মানুষ বাংলাদেশে বসে নিউজিল্যান্ড সম্বন্ধে কল্পনা করে আর কত দূর পৌঁছতে পারবেন? তোমার মা নিশ্চয়ই নিউজিল্যান্ড সম্বন্ধে অনেক কল্পনা করেন? যেহেতু তার একমাত্র মেয়ে নিউজিল্যান্ডে থাকে। এখানে লেখাপড়া করে। আর ইন্টারনেটের যুগে হয়তো অনেক কিছুই সার্চ দিলে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখার চোখ তো অন্য।

নদী বলল, ঠিকই বলেছেন। খুব সুন্দর বলেছেন।

রাকিব স্মিত হাসল। বলল, তোমার মাকে নিয়ে আস। তিনি যত দিনই এখানে থাকবেন, বেশ ভালো থাকবেন। কবি মানুষ। আমরা দুজন প্ল্যান করে তাকে নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে দেখাব। নর্থ আইল্যান্ডের সব জায়গায় তো যাবই। সাউথ আইল্যান্ডেও যাব। প্রয়োজনে আমি অফিস থেকে দুই-তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নেব। আমার অনেক ছুটি জমা আছে।

নদী মাথা নাড়ল। টেম্পলের দক্ষিণে এসে আবার রেলিং ঘেঁষে দাঁড়াল। দক্ষিণে দিগন্ত বিস্তৃত খামার ভূমিই বেশি। এ পাশটায় দূরে কোথাও উঁচুনিচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে না। বিস্তৃত খামারে লাল-সাদা রঙের মিশ্রণে গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে কেমন ছক কাঁটার মতো করে। যেন গরুগুলো ঘাস খাচ্ছে না, ছক কাটার মতো দাঁড়িয়ে বিস্তৃত খামার ভূমিগুলো পাহারা দিচ্ছে।

নদী একটু চুপ থেকে দিগন্ত বিস্তৃত ফার্মল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, মা কী বাংলাদেশ ছেড়ে আসবেন।

রাকিব পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি তাকে তো একেবারের জন্য আসতে বলবে না, ভ্রমণের জন্য আসতে বলবে?

: রাকিব ভাই, তিনি ভ্রমণের জন্যও আসবেন না। তিনি বাংলাদেশ ছাড়া কিছু বোঝেন না। কবিতা যেমন তার ধ্যান, তেমনই বাংলাদেশটাও তার ধ্যান।

: আমি জানি। কবিদের আগে তাদের নিজের দেশকেই ভালোবাসতে। তিনি তাই করেছেন। এ জন্যই তিনি বড় কবি। তিনি শুধু লেখার কারণেই বড় কবি নন, মানুষ হিসেবেও বড় কবি।

: মানুষ হিসেবেও বড় কবি?

: হ্যাঁ, আমাদের দেশে কিছু কবি আছেন তারা লেখেন বেশ ভালো। কিন্তু মানুষ হিসেবে খুবই নিম্ন মনের। যদিও কাউকে হুট করে নিম্ন মনের বলতে নেই। তবুও তাদের বলতে হয়। কবি না হলে হয়তো তাদের এভাবে নিম্ন মনের মানুষ কেউ বলত না।

: মাও মাঝেমধ্যে সে কথা বলতেন। দুঃখ করতেন।

: এ জন্য আমাদের দেশের কবিরা একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে আছে। আর নয়তো আমাদের দেশে যে হারে কবিতা লেখা হয়, এত দিনে আন্তর্জাতিক মানের অনেক কবি বের হয়ে যেত। বরং আমাদের দেশের ঔপন্যাসিকেরা অনেকটা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠছেন। যাক ওসব কথা। তুমি তোমার মাকে একবার নিয়ে আস। তিনি নিশ্চয়ই এ দেশের কোনো কবিতা সম্মেলন থেকে নিমন্ত্রণ পেলে আসতেন? তাকে সেটা ভেবেই আসতে বল। কবিরাই তো পৃথিবী ভ্রমণ করে, তাই না? তিনি তো চিরতরে বসবাসের জন্য আসবেন না। তিনি আসবেন বেড়াতে।

নদী বলল, হুম, আচ্ছা, আমি জোরাজুরি করলে না হয় আসবেন। আমি অনুরোধ করলে তিনি আপত্তি করতে করতে একসময় রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু মা এখানে এসে থাকবেন কোথায়?

রাকিব বলল, কেন, নাজমুল ভাইয়ের বাসায়?

: ওটা কি আমার বাসা?

: তাহলে কার বাসা?

: আমি ওখানে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকি।

: তাতে কী?

: তাতে অনেক কিছু, রাকিব ভাই। তারা আমার কোনো আত্মীয়স্বজন না।

: তুমি ওভাবে না ভাবলেই হলো। ওনারা খুব ভালো মানুষ।

: ওনারা নিঃসন্দেহে ভালো মানুষ। আমার সৌভাগ্য যে বিদেশ বাড়িতে থাকার জন্য তাদের মতো একটা পরিবার পেয়েছি। এ জন্য আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ।

রাকিব মৃদু হাসল। কিছু বলল না।

নদী বলল, তবে কী, ওই বাসায় আমার থাকা আর আমার মার থাকা এক কথা নয়।

রাকিব বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, এক কথা নয় কেন?

: ওটা একটা ফ্যামিলি বাসা।

: ফ্যামিলি বাসা তো কী হয়েছে?

: একটা ফ্যামিলি বাসায় বাড়তি একজন মানুষ।

রাকিব মাথা নেড়ে বলল, আমি তোমার কথার কোনো আগা-মাথা বুঝতে পারছি না। তিনি তো নাজমুল ভাইয়ের বাসায় কিছুদিনের জন্য থাকবেন। পারমানেন্টলি না। তুমি ব্যাপারটা পজিটিভ ভাবে নেও।

নদী কিছু না বলে চুপ হয়ে গেল।

রাকিব কী ভেবে নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নদী, তোমার কি ওই বাসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে? তুমি খোলাখুলি বলতে পার।

নদী বলল, না, মোটেও না। আমি নাজমুল ভাই ও রাকিব ভাইয়ের বাসায় অনেক ভালো আছি।

: তাহলে?

: রাকিব ভাই, আমি আপনাকে খুব বুদ্ধিমান মনে করি। আপনি একই প্রশ্ন বারবার করছেন। আপনাকে কী করে বোঝাব যে, আমি একটা বাসায় থাকা আর আমার মার থাকা এক কথা নয়!

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ও, তাহলে আমার বাসায় থাকবেন। প্রয়োজনে দুই-তিন সপ্তাহের জন্য তুমিও আমার বাসায় চলে আসলে?

নদী হেসে বলল, এক দুই সপ্তাহের জন্য কেন? আপনি বললে পারমানেন্টলি চলে আসব।

: তুমি ঠাট্টা করছ?

: জি, ঠাট্টা করছি। হি হি হি!

রাকিব আবার চুপ হয়ে গেল।

নদী জিজ্ঞেস করল, আপনার ফ্ল্যাটমেট আতিক ভাই?

রাকিব বলল, ও, আতিক মনে হয় বেশি দিন আমার বাসায় থাকবে না। সে তার ওয়াইফের ভিসার জন্য ইমিগ্রেশনে অ্যাপ্লাই করেছে। খুব বেশি সময় হয়তো লাগবে না। তার ওয়াইফ এলে সে তো নিজের বাসা নিয়ে নেবে।

নদী মাথা ঝাঁকাল। বলল, ও আচ্ছা, মা নিউজিল্যান্ডে আসলে না হয় বলা যাবে তিনি কোথায় থাকবেন। গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দিয়ে লাভ নেই।

রাকিব একটু হেসে বলল, মেয়েদের কী গোঁফ আছে নাকি?

: হঠাৎ এ কথা কেন?

: এই যে বললে, গোঁফে তেল দিয়ে লাভ নেই? তোমার গোঁফ কোথায়? আমারও কিন্তু গোঁফ নেই।

নদী জোরে হেসে ফেলল, হু হু, হু হু! আপনিও না। মাঝেমধ্যে বেশ রসিকতা করতে পারেন। কিন্তু আপনাকে দেখলে মনে হয়, ভাজা মাছটা উলটে খেতে পারেন না।

রাকিব জিজ্ঞেস করল, আমার ব্যাপারে তোমার এমনটা মনে হয় কেন?

নদী বলল, সেটা এখন বলা যাবে না। এখন একটা দারুণ সময় কাটাচ্ছি। কী থেকে কী বলে আবার আপনার মুড নষ্ট করে দেই? আমি কিন্তু কথা বলতে গিয়ে মাঝেমধ্যে ভয়ে থাকি।

রাকিব একটু গম্ভীর হয়ে বলল, হুম, একজন মানুষের সম্বন্ধে এমন ভুল ধারণা নিয়ে এত ঘনিষ্ঠভাবে চল কীভাবে?

নদী বলল, সরি, সরি। আপনি কি কথাটা অন্যভাবে নিয়েছেন?

রাকিব বলল, হ্যাঁ।

নদী রাকিবের বাম হাতটা টেনে মুঠো করে ধরে আবার বলল, সরি! (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন