মেঘে মেঘে রংধনু-সাত

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

টেম্পল ভিউ থেকে টুহিকারামিয়া রোডটা কারামিয়া রোডের পেট বরাবর গিয়ে মিশেছে। কারামিয়া রোডটাই মাউন্ট পিরংগিয়ার অভিমুখে চলে গেছে। মাঝখানে নাহিনাপুরী নামে একটা ছোট গ্রাম পড়ে।

রাকিব গাড়ি চালাতে চালাতে নদীকে বলল, নদী, নাহিনাপুরী গ্রামে কি একটু থামব?

নদী জিজ্ঞেস করল, নাহিনাপুরী?

রাকিব বলল, হ্যাঁ, নাহিনাপুরী। চারপাশে ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়। মাঝখানের ভ্যালিতে সুন্দর একটা গ্রাম গড়ে উঠেছে। মূলত ইউরোপিয়ান সাদা কৃষকেরা ওখানে বসবাস করে।

: হ্যাঁ, থামালে ভালো হয়। আমি বাংলাদেশেই কখনো সত্যিকারের গ্রাম দেখিনি। ঢাকার আশপাশে বড়জোর পুবাইল গিয়েছি। ওটা তো গ্রাম নয়, বলা যায় শহরতলী। ঢাকারই একটা অংশ। এই নিউজিল্যান্ডে এসে গ্রাম দেখব...!

: এখানকার গ্রামগুলো ঠিক গ্রাম নয়। গ্রামের মানুষগুলো শহরের মানুষের চেয়ে ধনী। মূলত কৃষকেরা এ সব গ্রামে বিশাল-বিস্তৃত বাংলো নিয়ে বসবাস করেন।

: হ্যাঁ, আমি শুনেছি। আপনিই তো বলেছিলেন মনে হয়।

: হয়তো।

: আচ্ছা রাকিব ভাই, একটা কথা। এখানকার কোনো গ্রাম বা শহরের নামের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো গ্রাম বা শহরের নামের মিল কেন?

: সেটা কেমন?

: এই ধরুন, নাহিনাপুরী। নামটা শুনলেই মনে হয় বাংলাদেশেরই কোনো গ্রামের নাম।

: নিউজিল্যান্ডের মাউরি আদিবাসীদের ভাষা অনেকটা আর্য ভাষার সঙ্গে মিল আছে। তবে মাউরি আদিবাসীরা দীর্ঘদিন বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল বলে ওদের একটা নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের ভাষায় সেই আর্য ভাষার দখল আছে।

: ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং না? কোথায় বাংলাদেশ আর কোথায় নিউজিল্যান্ড।

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ।

নদী জিজ্ঞেস করল, ওটাই কি মাউন্ট পিরংগিয়া?

রাকিব দিঘল দৃষ্টি মেলে দূরে তাকাল। বলল, হ্যাঁ।

: আমরা তো তাহলে এসে পড়েছি।

: আরে না, এখনো পনেরো মিনিটের পথ বাকি আছে। আমরা তো নাহিনাপুরী গ্রামেই আসিনি। নাহিনাপুরী গ্রামের পর পিরংগিয়া উপশহর। তারপর মাউন্ট পিরংগিয়া।

: ও, মনে হচ্ছে মাউন্ট পিরংগিয়া কত কাছে, তাই না?

: আমরা আগে নাহিনাপুরী গ্রামে যাই না, দেখবে, মাউন্ট পিরংগিয়া যেন গ্রামটার একেবারেই পাশেই। কিন্তু তারপরও গাড়ি ড্রাইভ করে সাত-আট মিনিট যেতে হয়।

: তাই, দারুণ তো! আপনি মাউন্ট পিরংগিয়াতে অনেকবার এসেছেন?

: নাহ, একবারই।

: একা এসেছেন?

: হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?

নদী মৃদু হেসে বলল, না, এমনিই জিজ্ঞেস করলাম।

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ, একাই। বছর তিনেক আগে একবার এসেছিলাম।

রাস্তার দুই পাশে দুটো পাহাড় দিয়ে নাহিনাপুরী গ্রামের শুরু। কিন্তু পাহাড় দুটো পেরোতেই শুরু হয়েছে প্রায় সমতল উপত্যকা। কিন্তু যেটা সবচেয়ে ভালো লাগা হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ধরা দিল, রাস্তার দুই পাশে সমান্তরালে অনেকটা পথ অবধি সারি সারি কাশবন চলে গেছে। শরতের নতুন কাশফুল ফুটেছে সেই কাশবনে। কাশবনের ওপর অদ্ভুত সুন্দর ঢেউখেলানো বাতাস বইছে। প্রতিটা কাশফুল যেন মাথা নেড়ে মধুর আহ্বান জানাচ্ছে। রাকিব দেখল, নদীও মুগ্ধ হয়ে সেই কাশবনের দিকে তাকিয়ে আছে।

রাকিব বলল, নদী, দেখেছ, কী সুন্দর কাশবন?

নদী বলল, হ্যাঁ, রাকিব ভাই। অসাধারণ সুন্দর।

: বাংলাদেশে কোথাও কাশবন দেখেছ?

: অবশ্যই দেখেছি।

: না মানে, তুমি তো কখনো গ্রামে যাওনি, এ জন্যই জিজ্ঞেস করেছি।

: গ্রামে যেতে হবে কেন? আশুলিয়া গেলেই তো অনেক কাশবন দেখা যায়। এ ছাড়া বসুন্ধরার যে আবাসিক প্রজেক্ট হয়েছে। যেখানে প্লট বিক্রি করে। ওখানে গেলে সারি সারি কাশবন দেখা যায়। মা আমাকে একবার ওখানে নিয়ে গিয়েছিলেন।

: কেন, প্লট কিনতে?

: কী যে বলেন না! আমাদের অত টাকাপয়সা কোথায়? আমরা কাশবন দেখতে গিয়েছিলাম। আশুলিয়ায় অবশ্য মার সঙ্গে দুই-তিন বার গিয়েছিলাম। তবে শুধু কাশবন দেখতে যে গিয়েছিলাম, তা নয়। ঘুরতে গিয়েছিলাম।

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হুম। তারপর কী ভেবে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা নদী, তুমি কি কাশবনের কন্যা উপন্যাসটা পড়েছ?

নদী হেসে বলল, আমি গল্প উপন্যাস খুব একটা পড়তাম না। যদিও বাসায় অনেক বই ছিল। মা কবি। বুঝতেই পারছেন। আমরা বইয়ের রাজ্যে বাস করতাম। তবে হ্যাঁ, কাশবনের কন্যা আমার হাতে পড়েছিল। কিন্তু পড়া হয়নি। তবে আমি জানি, ওটা একটা বিখ্যাত উপন্যাস। শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা।

: বাংলাদেশে গেলে পড়। খুব ভালো লাগবে।

: আচ্ছা, পড়ব।

: শামসুদ্দীন আবুল কালামের সঙ্গে কিন্তু কবি কাজী নজরুল ইসলামের খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কাজী নজরুল ইসলামকে তিনি চিনতেন সেই বাল্যকাল থেকে। যখন কবি নজরুল ময়মনসিংহের দরিরামপুর বসবাস করতেন।

: তাই নাকি? আমি অবশ্য ওটা শুনিনি।

: হ্যাঁ, আর শামসুদ্দীন আবুল কালামের উপন্যাসের একটা বৈশিষ্ট্য, তিনি খুব সাহসের সঙ্গে মুসলমান বৈষ্ণব নিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন। তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় মুসলমান বৈষ্ণব নিয়ে উপন্যাস লেখা দুঃসাহসের কাজ ছিল। কাশবনের কন্যা উপন্যাসটা তেমনই এক মুসলমান বৈষ্ণব দম্পতির কাহিনি নিয়ে লেখা। তিনি বাংলার নদী, বাংলার গ্রামকে অনেক ভালোবাসতেন। অথচ সেই তিনি দেশের প্রতি অভিমান করে দীর্ঘ জীবন ইতালিতে কাটিয়েছেন। ইতালিতেই তিনি মারা যান।

নদী কথাটা টেনে নিয়ে বলল, রাকিব ভাই, শামসুদ্দীন আবুল কালাম দেশের প্রতি অভিমান করে নয়, স্ত্রীর প্রতি অভিমান করে ইতালিতে পাড়ি দিয়েছিলেন।

রাকিব অবাক হলো। জিজ্ঞেস করল, তুমি জানলে কীভাবে?

নদী হাসল। বলল, মার কাছে শুনেছি। মা বলেছেন।

: তোমার মা তার সম্বন্ধে কী বলেছেন?

: মা বলেছেন, তার স্ত্রী তারই ভাগনের সঙ্গে প্রেম করে চলে যাওয়াতে লজ্জায় ও অভিমানে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। আর কখনো দেশমুখো হননি। মা বলতেন, কী একটা সাধারণ কারণে বাংলাসাহিত্যে আমরা শামসুদ্দীন আবুল কালামের মতো একজন সাহিত্যিক হারিয়েছিলাম।

: তোমার মা ঠিকই বলেছেন।

: তবে মার মুখে এ কাহিনি শোনার পর একজনের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক বেশি গিয়েছিল।

: কার প্রতি?

: গোলাম মুস্তাফার প্রতি। তিনিই যে শামসুদ্দীন আবুল কালামের সেই ভাগনে ছিলেন! হি হি হি! আরও একজনের প্রতি। ক্যামিলিয়া মুস্তাফা। যে ছিল গোলাম মুস্তফার মামাতো বোন। কিন্তু পরে সে গোলাম মুস্তফার মেয়ে হয়ে যায়। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?

রাকিব মৃদু হেসে বলল, হ্যাঁ। তবে রাকিব মৃদু হাসলেও তার ভেতর সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাবনা এসে জড়ো হলো, নদী বা নদীর মা সাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের স্ত্রী হারানোর ব্যাপারটা যতই সাধারণ কারণ হিসেবে ধরুক, ওটাও মোটেও সাধারণ কারণ নয়। রাকিব তার বাবার মধ্যে স্ত্রী হারানোর কষ্ট দেখেছে। তার বাবা গোমতী নদীর পাড়ে গিয়ে প্রতি সন্ধ্যায় স্ত্রী হারানোর কান্না কাঁদতেন—ইঁ ইঁ ইঁ, ইঁ ইঁ ইঁ! সে নিজেও পাঁচ বছর সংসার করার পর স্ত্রী হারিয়েছে। তার স্ত্রী এমেন্ডা তারই মুখোশধারী বন্ধু সিরাজের সঙ্গে চলে গেছে। সে নিজের ভেতর দেখেছে, স্ত্রী হারানোর যন্ত্রণা কী!

রাকিব জানে, জীবনের সবচেয়ে বড় ছন্দপতন হলো স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ।

রাকিবকে চুপ দেখে নদী নিজ থেকেই কথা বাড়াল, আমি অবশ্যই বাংলাদেশ গেলে সাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের কাশবনের কন্যা পড়ব। মায়ের নিজস্ব লাইব্রেরিতে নিশ্চয়ই বইটা এখনো আছে।

রাকিব সায় দিয়ে হাসল। বলল, তোমার মাও তো কাশবন-কাশফুল খুব পছন্দ করতেন।

: কীভাবে জানলেন?

: তার কবিতায় পড়েছি।

: জি, মার অনেক কবিতাতেই কাশবন, কাশফুল, নদীর কথা উঠে আসত। মার একটা কবিতা আবৃত্তি করি?

রাকিব আগ্রহ নিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, কর। কাশফুল বা কাশবন নিয়ে নিশ্চয়ই?

নদী বলল, হ্যাঁ। তবে কবিতা আবৃত্তি আমার গলায় আসে না। আমার গলা ফ্যাসফেসে।

রাকিব বলল, তারপরও একটা কবিতা আবৃত্তি কর, শুনি।

নদী একটা লাজুক হাসি দিয়ে কবিতা আবৃত্তি শুরু করল।

‘বিবাগি বাতাস আর কোনো নদীর উদাসী হাওয়ায়
যৈবতী নারীর বুকের মতন ঢেউ খেলে কাশবন।
কোনো নদী উজানে যায় উদোম চাতাল।
একটি কাশবন, অজস্র কাশফুল-
শরৎ দুপুরে যুবতীর বুক কাঁপে-না না, না না...!

কবিতাটা আবৃত্তি শেষ করে নদী একটা লাজুক হাসি দিল। বলল, মা এই কাশবন দেখলে এখানেই গাড়ি থামাতে বলতেন। তিনি নদী, কাশবন ও কাশফুল যে কী পছন্দ করতেন!

রাকিব বলল, আমিও নদী, কাশবন ও কাশফুল খুব পছন্দ করি। এ জন্যই তো সময় পেলে ওয়াইকাটো নদীর পাড়ে গিয়ে বসে থাকি।

নদী মাথা ঝাঁকাল। বলল, হ্যাঁ, রাকিব ভাই, আপনার যতগুলো কবিতা আমি পড়েছি, সেগুলোতে কাশফুল বা কাশবনের বর্ণনা তেমন একটা না পেলেও নদীর বর্ণনা বেশ পেয়েছি। বিশেষ করে গোমতী নদীটা আপনার কবিতায় বেশ প্রাধান্য পায়।

রাকিব একটু কাব্যিক সুর করে বলল, আমি গোমতী পাড়ের ছেলে যে!

রাকিবের এই কাব্যিক সুর শুনে নদী একটু হাসল। বলল, আপনি আপনাদের গোমতি নদীকে খুব বেশি ভালোবাসেন, তাই না?

: আমি সব নদীকেই ভালোবাসি।

: সব নদী?

: হ্যাঁ, সব নদী।

: মানুষ নদীও?

নদীর এই প্রশ্ন শুনে রাকিব একটু চুপ হয়ে গেল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল, শোনো নদী, নদী নামক শব্দটাই আমার সবচেয়ে ভালোবাসার শব্দ।

নাহিনাপুরী গ্রামে ঢুকে রাকিব রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামাল। রোববার বলে রাস্তায় গাড়ি খুব কম। এ ছাড়া কান্ট্রি সাইডের রাস্তা বলে গাড়ি এমনিতেই কম থাকে। গ্রামের এক শৌখিন যুবতী রাস্তার পাশে ঠক ঠক শব্দ করে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াচ্ছে। কাছে কোথাও গরুর খামার থেকে গরুর ডাক আসছে-হাম্বা-ও-ও। রাস্তায় ঝুঁকে থাকা গাছগুলো থেকে অসংখ্য পাখি ডাকছে।

রাকিব নদীকে জিজ্ঞেস করল, নদী, নামবে না?

নদী বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, এখানেই নামব?

রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ঠিক আছে।

রাকিবের পাশাপাশি নদীও গাড়ি থেকে নামল।

রাকিব পথটা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, নদী, গোমতী নদী সঙ্গে আমার অনেক সুখ-দুঃখ জড়িত। ছোটবেলায় গোমতীর সঙ্গে একা একা বসে কথা বলতাম। নিজের অভিযোগগুলো জানাতাম। তাই একসময় গোমতী নদীই হয়ে উঠেছিল আমার ভালোবাসা। তাই নদী শব্দটাই আমাকে দুর্বল করে দেয়।

নদী স্মিত হাসল। কিছু বলল না।

তিন বছর আগে যখন রাকিব নাহিনাপুরী গ্রাম ধরে মাউন্ট পিরংগিয়াতে গিয়েছিল। তখন সে এখানটায় গাড়ি থামায়নি। আজ থামিয়ে তার ভালোই লাগল। যদিও এ সব গ্রামে ধনিক শ্রেণির কৃষকেরা বসবাস করে, তারপরও নাহিনাপুরী গ্রামটাকে রাকিবের কাছে নিটোল গ্রামই মনে হলো। যেন বাংলাদেশের কোনো একটা গ্রাম। রাস্তার পাশে একটা স্কুল। স্কুলের দীর্ঘ টিনের ঘর। স্কুলের পাশে একটা দোকান। বাংলাদেশের গ্রামের বড় আলপথের মোড়ের যেমন দোকান থাকে, নাহিনাপুরীর দোকানটা ঠিক সে রকমই একটা দোকান মনে হচ্ছে। কৃষকদের অভিজাত বাংলোগুলোই যা একটু ব্যতিক্রম।

রাকিবের তখন তার বড় ফুফুর কথা মনে পড়ে গেল। বড় ফুফু তার বড় চাচারও বড় ছিলেন। বড় ফুফুর বিয়ে হয়েছিল এক স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে। কী এক কারণে যেন বড় ফুফুর সঙ্গে বড় চাচার বিবাদ ছিল। আর এ জন্যই বড় ফুফু কখনো বাপের বাড়িতে আসতেন না।

রাকিব জীবনে দুবার তার বড় ফুফুকে দেখেছে। প্রথমবার যখন সে দেখে, তখন তার বয়স ছিল নয় কী দশ বছর। সে তার ছোট চাচার সঙ্গে বড় ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। দুই দিন ছিল। তখন বড় ফুফু কী আদরটাই না করেছিলেন। সারাক্ষণ তাকে কোলে করে রেখেছিলেন।

বড় ফুফুর কোনো ছেলেমেয়ে ছিল না।

বড় ফুফুর সঙ্গে বড় চাচার ঝগড়ার কারণটা রাকিব আজও জানতে পারেনি। এমন কী বড় ফুফুর মৃত্যুর কারণটাও না। রাকিব দ্বিতীয়বার যখন বড় ফুফুকে দেখতে যায়, তখন তার বয়স ছিল এগারো বছর। সেদিনও সে ছোট চাচার সঙ্গে বড় ফুফুর বাড়িতে গিয়েছিল। তবে সেদিন সে গিয়েছিল বড় ফুফুর লাশ দেখতে। বড় ফুফু এর আগের দিন রাতেই বাড়ির পাশের জামগাছে রশি ঝুলিয়ে ফাঁসি দিয়েছিলেন!

সেই গ্রাম! গ্রামটার নাম আজ রাকিবের মনে নেই। কিন্তু গ্রামটার চেহারাটা আজও তার চোখে ভাসে। একটা টিনের বড় স্কুলঘর ছিল। মাটির মেঝে। দিঘল বারান্দার খুঁটিগুলো ছিল বাঁশের। সেই স্কুলেই বড় ফুপা পড়াতেন। স্কুলের মোড়েই ছিল একটা দোকান।

রাকিবকে চুপ দেখে নদী জিজ্ঞেস করল, রাকিব ভাই, কী ভাবছেন?

রাকিব বলল, না, তেমন কিছু না। কিছু অতীত স্মৃতি নিয়ে ভাবছিলাম।

: কী অতীত স্মৃতি, বলা যায়?

: বাদ দাও। সে রকম কিছু না। আরে, ওই দেখ মাউন্ট পিরংগিয়া। মনে হয় না খুব কাছে?

নদী উৎফুল্ল হয়ে বলল, হ্যাঁ, একেবারেই তো কাছে।

রাকিব বলল, কিন্তু গাড়ি দিয়ে ঘুরে যেতে হবে, তাই এখনো অনেকটা পথ বাকি। (ক্রমশ)

মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>

ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1563009