রাকিব কোথাও গেলে নিরিবিলি থাকতেই পছন্দ করে। দু-একজন আপনজন পাশে থাকবে, ব্যস এটুকুই সে চায়। বেশি মানুষের ভিড় বা কোলাহল সে কখনই পছন্দ করে না। ভিড়ভাট্টা দেখলে তার মনে হয়, তার একান্ত নিজস্ব সময়টা যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে এসেছে।
কিন্তু নদীর দিকে তাকিয়ে রাকিব মনে মনে একটু নরম হয়ে এসেছিল। যদিও নদী যাবে না বলে, না করেছে। কিন্তু সে জানে, নদী একটু ভিড়ভাট্টা ও কোলাহল পছন্দ করে। তাই বাপ্পি নামে এক ভদ্রলোক এসে যখন তাদের যেতে অনুরোধ করলেন, রাকিব তখন না করতে পারেনি। নদীও একটা দিঘল হাসি দিয়ে তাকে অনুসরণ করে।
সূর্যটা ততক্ষণে অনেকটাই পশ্চিমে হেলে পড়েছে। মূলত এখন বিকেলের শেষ লগ্ন না হলেও দীর্ঘ বিকেলের তেরসা রোদ ঘাসের ওপর সর্বত্র বিছিয়ে রয়েছে। মানুষজনের ছায়াগুলো বেশ দীর্ঘ। এমন কী ছোট্ট খুঁটিটার ছায়াও দ্বিগুণ দীর্ঘ হয়ে পড়েছে।
রাকিব চুপচাপ কখনো সবার দিকে তাকাচ্ছে, কখনো সবার দীর্ঘ ছায়াগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। ঘাসের লনের ওপর বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে আসা তাদের বাচ্চাগুলো এখনো দৌড়াদৌড়ি করছে। বাঙালি স্বামীরা কখনো বসা থেকে উঠে তাদের বাচ্চাদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। স্ত্রীরা অবশ্য কোনো কিছুতেই ব্যস্ত হচ্ছেন না। ঘাসের লনে মাদুর পেতে বসে নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন।
রাকিব জানে, এসব পিকনিক বা পট লাকে দূরে কোথাও এলে স্বামীদেরই বেশি কাজ করতে হয়। এটা সে কয়েক বছর আগে অকল্যান্ডে থাকাকালে মতি ভাই ও মিনু ভাবির সঙ্গে কয়েকটা পটলাক ও পিকনিকে গিয়েই দেখেছে। এ দেশে বাঙালি স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে প্রথাটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছে, ঘরের ভেতরের কাজ স্ত্রীরা করবেন আর বাইরের সমস্ত কাজ স্বামীরা করবেন। যদিও স্বামীদের ঘরের ভেতরের অনেক কাজই করে দিতে হয়।
রাকিব এখানেও তাই দেখছে। স্বামীরা বাচ্চাদের তো সামলাচ্ছেনই, পাশাপাশি ঘাসের ওপর মাদুর বিছানো, মাদুরের ওপর চাদর বিছিয়ে দেওয়া, খাবারের কন্টেইনারগুলো চাদরের ওপর সাজানো, ওয়ান টাইম প্লেট, বাটি, চামচ ও কাপগুলো সাজিয়ে দেওয়া-সবই করছেন। তারা মোট ছয়টা পরিবার এসেছে। নারী ছয়জন হলেও পুরুষ অবশ্য পাঁচজন। নিশ্চয়ই কোনো নারীর স্বামী সঙ্গে আসেননি।
নদীও নারীদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠেছে।
নদীর দিকে তাকিয়ে রাকিবের বেশ ভালো লাগল। নদী মানুষের সঙ্গ পেলে যে কী খুশি হয়! হয়তো সারাটা জীবন মা বাদে তেমন কোনো পরিবারের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়নি, তাই। মা-মেয়ের সংসারে পারিবারিক বৃত্তটাও মা-মেয়ের মধ্যেই ছিল।
পাশে বসা এক ভদ্রলোক কিছুক্ষণ আগে তার মেয়েকে সামলে এসে রাকিব পাশে বসতে বসতে হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি নাবিদ চৌধুরী।
রাকিব বলল, জি, আমি রাকিব। রাকিবুল আলম।
: ভাই কি হ্যামিল্টনে নতুন এসেছেন?
: না, আমি অনেক বছর ধরেই হ্যামিল্টনে থাকি। প্রায় সাড়ে পাঁচ-ছয় বছর হয়ে যাচ্ছে।
: বলেন কী, এত দিন ধরে হ্যামিল্টনে থাকেন, অথচ কখনো পরিচয় হয়নি?
: একা থাকি তো, তাই। হয়তো ফ্যামিলি নিয়ে থাকলে অনেক আগেই পরিচয় হতো।
: জি, আমারও মনে হয়। তবে ব্যস্ততাও একটা কারণ। ব্যস্ততার কারণেও অনেকের সঙ্গে অনেকের পরিচয় হয় না। এই দেখুন, আমার একটা দোকান আছে। ডেইরি শপ। সপ্তাহের ছয় দিন ব্যস্ত থাকি। শনিবারে কমিউনিটির কোনো প্রোগ্রাম থাকলে বা কারও বাসায় দাওয়াত থাকলে যেতে পারি না। রোববারে শুধু ফ্রি থাকি। তাই কোথাও গেলে রোববারে যাই। আজ রোববার। তাই সুযোগ পেয়ে মাউন্ট পিরংগিয়াতে এসেছি। বাপ্পি আর আমি মিলেই আজকের প্রোগ্রামটা সাজিয়েছি।
রাকিব জিজ্ঞেস করল, আপনার দোকান কোথায়?
নাবিদ বললেন, তিরাপাতে। তিরাপা মিনিমার্ট।
রাকিব মৃদু হেসে বলল, অকল্যান্ড আসা-যাওয়ার পথে আমি আপনার দোকানে দু-একবার সফট ড্রিংকস কিনতে গিয়েছি তো। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, আপনার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। আমি ভেবেছি, আপনি হয়তো ফিজি-ইন্ডিয়ান বা ইন্ডিয়ার কোথাও থেকে এসেছেন।
নাবিদও হাসল। বললেন, আপনার এমনটা মনে হওয়ারই কথা। এসব ডেইরি শপ বা কর্নার শপগুলোর প্রায় সবই ভারতের গুজরাটিদের দখলে। পুরো নিউজিল্যান্ডে এই স্মল বিজনেসটা গুজরাটিরা দখল করে রেখেছে। ওরা ব্যবসাটা বোঝেও ভালো। ফিজি বা আমাদের বাঙালিরা খুবই হাতেগোনা যে এই বিজনেসটা করে।
রাকিব মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। একটু থেমে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি অনেক বছর ধরে হ্যামিল্টনে?
নাবিদ বললেন, জি, প্রায় চৌদ্দ বছর হয়ে গেছে। ওই যে ওপাশে বসে আছে, উনি আমার মিসেস। আর আমার মেয়েটা ওখানে খেলছে।
রাকিব স্মিত হেসে বলল, বেশ। আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে বেশ ভালো লাগল।
নাবিদ কিছু বলতে যাবেন ঠিক তখনই তার মেয়ে দৌড়াতে গিয়ে ধপাস করে ঘাসের লনে পড়ল। নাবিদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাকিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখুন দেখুন, মেয়েটা কী চঞ্চল হয়েছে, একটুও স্থির থাকেন না। বলেই তিনি মেয়ের দিকে দৌড়ে গেলেন।
নদী ও রাকিবের সঙ্গে সবারই পরিচয় হয়েছে। কেউ কেউ আবার নিজ থেকে দ্বিতীয়বার পরিচিত হয়েছে। এদের কারও সঙ্গে রাকিবের আগে থেকে পরিচয় না থাকলেও তিনটা পরিবারের সঙ্গে নদীর আগে থেকেই পরিচয় ছিল। একটা পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল শিমুল ভাবিদের বাসায়। আর বাকি দুটো পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কারাপিরো লেকে কমিউনিটির পিকনিকে।
মধ্যবয়স্কা যে নারী, তার সঙ্গে খানিকক্ষণ আগেই নদীর লনে কথা হয়েছে। যদিও নদীর সরাসরি কোনো কথা হয়নি, তারপরও পরিচয়টা জেনেছে। মধ্যবয়স্কা নারীর নাম নাজমা ভাবি।
নতুন করে আজ যে দুই ভাবির সঙ্গে নদীর পরিচয় হয়েছে, এদের একজন জুঁই ভাবি। অন্যজন মিলি ভাবি।
জুঁই ভাবির মেয়েটাকে নদীর বেশ ভালো লেগেছে। প্রথম দেখার পরই কেমন আপনজন মনে হচ্ছে। এখানে আরও বাচ্চাকাচ্চা আছে। নদীর হঠাৎ জুঁই ভাবির মেয়েটার ওপর বারবার চোখ পড়ছে কেন, সে তা বুঝতে পারছে না। আর এত আপনজনই মনে হচ্ছে কেন? মেয়েটার নামটাও বেশ চমৎকার। মৌনতা।
মৌনতা বেশ চঞ্চল বোঝা যাচ্ছে। তার বাবা বারবার তাকে উঠে গিয়ে সামলাচ্ছেন।
এখানে সবাই পটলাকে বিকেলের নাশতার আয়োজনের কথা বললেও নদী দেখল, তাদের বিকেলের নাশতার আয়োজন বিশাল। ক্রাম্পড চিকেন ড্রামস্টিক। ডিম দিয়ে ভেজে আনা নুডলস। চিকেন ফ্রায়েড রাইস। গরুর কিমার পাস্তা। বিভিন্ন পদের কেক। ভেজিটেবল রোল জাতীয় কিছু একটা। এ ছাড়া চিপস ও বিস্কুট তো আছেই।
সবাই প্লেটে যার যার মতো করে খাবার নিলেন। নদী নিল একটা ড্রামস্টিক ও একটু ফ্রায়েড রাইস। রাকিব ঝাল জাতীয় কিছু না নিয়ে একটা কেকের পিস নিল।
নদী দেখল, মৌনতাকে নিয়ে জুঁই ভাবি প্রথম থেকেই ব্যস্ত। মৌনতা ধরে চেপে এটা-ওটা খাওয়াচ্ছেন। মৌনতা বারবার ছোটার চেষ্টা করছে। কখনো খাবারের এটা ধরছে তো, ওটা নষ্ট করছে।
রাকিবের পাশে বসে নাবিদ আবার গল্প জুড়ে দিয়েছিলেন। বাপ্পিও এতে যোগ হয়েছেন। ওদের গল্প আর কিছু নয়, ওরা ভারতের গুজরাটিদের কিপটেমি নিয়ে কথা বলছে।
কিন্তু মৌনতাকে নাবিদের স্ত্রী জুঁই বারবার খাওয়ার জন্য চেপে ধরতে দেখে নাবিদ বলে উঠলেন, আহা জুঁই, তাকে এত চেপে ধরে রেখেছ কেন? তাকে ছেড়ে দাও। সে গিয়ে বাকি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলুক।
জুঁই গলার স্বরটা একটু উষ্ণ করে বলল, তোমার কথা! বাকি ছেলেমেয়েরা খেলছে ঠিকই, কিন্তু ওরা কোনো অঘটন ঘটাবে না। তোমার মেয়ে যেতে না যেতেই একটা অঘটন ঘটাবে।
নাবিদ বললেন, তুমি তাকে ওদের সঙ্গে আগে খেলতে দাও। আমি দেখব।
জুঁই আর কিছু বললেন না।
মৌনতা বাকি বাচ্চাদের সঙ্গে আবার চলে গেল। কিন্তু সে যেতে না যেতেই হোঁচট খেয়ে পড়ল।
জুঁই বসা ছেড়ে ত্বরিত উঠতে উঠতে নাবিদকে উদ্দেশ করে বললেন, আমি বলেছিলাম। বাপ-মেয়ে একইরকম। ত্যাড়া...!
কিন্তু জুঁই মৌনতাকে ধরার আগেই মৌনতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, মা, আমি ব্যথা পাইনি তো। আমি এমনিই পড়েছি। আমি জাস্ট দেখতে চাইলাম মাটিটা শক্ত না নরম।
জুঁই সবার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললেন, দেখেছেন, কী পাজি মেয়ে?
মৌনতা বলল, মা, তুমি যাও তো। তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করবে না। আমি এখন খেলব।
জুঁই আর কিছু না বলে তার বসার স্থানে ফিরে এলেন।
নাবিদসহ সবাই হেসে ফেললেন।
নদী ক্রাম্পড ড্রামস্টিকে কামড় বসাতে বসাতে বারবার মৌনতাকে দেখছে আর ভাবছে, মেয়েটাকে এত পরিচিত মনে হচ্ছে কেন? কোথাও কী সে দেখেছে? এমনটা তার অনেকবারই হয়েছে। কোনো মানুষকে হঠাৎ দেখেই কেমন পরিচিত মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, কত আপনজন!
মৌনতার গায়ের রং নদীর মতোই শ্যামলা। কিন্তু চোখ দুটো অদ্ভুত সুন্দর। নদীর মনে হচ্ছে, ইস, সে মৌনতাকে যদি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারত! ঠিক তখনই নতুন পরিচয় হওয়া মিলি ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, নদী, তুমি তো শিমুল ভাবির বাসায় থাক, তাই না?
নদী বলল, জি।
মিলি ভাবি বললেন, শিমুল ভাবির সঙ্গে আমার আগে বেশ কথা হতো, আজকাল আর তেমন কথা হয় না। গত মাসে একবার ফোন দিয়েছিলাম। এমনিই। তখন তিনি কথার কথায় তোমার প্রসঙ্গে বলেছিলেন।
: তাই! তিনি আমার প্রসঙ্গে কী বলেছিলেন?
: তেমন কিছু না। ওই তো, তুমি বোর্ডার থাক, ওটাই বলেছিলেন।
: ও, আচ্ছা।
: তুমি তো মনে হয় বেশ কয়েক মাস ধরে ওনাদের বাসায় আছ, তাই না?
: হ্যাঁ, সাত-আট মাসের মতো হয়ে গেল তো।
: সাত-আট মাস! দেখ, আগে শিমুল ভাবিদের বাসায় কত যেতাম। কোনো সপ্তাহ বাদ যেত না। অথচ এখন যাওয়াই হয় না। তুমি তাদের বাসায় থাক সাত-আট মাস। অথচ তাদের বাসায় সেই সাত-আট মাস একবারও যাওয়া হয়নি। আমরা দুজন এখন ফুল টাইম জব করি তো, তাই সময় পাই না। এ ছাড়া শিমুল ভাবিরা এখন এক গ্রুপে মেশেন, আর আমরা অন্য গ্রুপে মিশি।
নদী মাথা ঝাঁকাল। মুখে কিছু বলল না। নদী জানে, এটা সত্য, হ্যামিল্টনে খুব বেশি বাঙালি না থাকলেও, যতগুলো বাঙালি পরিবার আছে, তারা আবার তিনটা-চারটা গ্রুপ করে আলাদা-আলাদা মেশে। বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রোগ্রাম হলে অন্য কথা। তখন সব গ্রুপের মানুষ যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে এই কমিউনিটির প্রোগ্রাম নিয়েও অনেকের দ্বিমত ও দ্বিধা আছে।
মিলি ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় লেখাপড়া কর? উইনট্যাকে নাকি ওয়াইকাটো ইউনিভার্সিটিতে?
নদী বলল, জি, আমি ওয়াইকাটো ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।
: কোন সাবজেক্টে?
: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
: গ্র্যাজুয়েশন করছ, নাকি আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে পড়ছ?
: জি না, মাস্টার্স করছি।
মিলি ভাবি অবাক হয়ে বললেন, ওমা, তোমাকে দেখে তো মনে হয় না তুমি মাস্টার্স করছ। তোমাকে পিচ্ছি মনে হয়। কথাগুলো বলে মিলি ভাবি হেসে ফেললেন।
নদীও হাসল।
মিলি ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছ, ওটা তো কঠিন সাবজেক্ট। বাংলাদেশে কোথায় লেখাপড়া করেছ?
নদী বলল, জি, বুয়েটে।
মিলি ভাবি বললেন, কঠিন সাবজেক্ট কথাটা ছাত্রজীবনে আমাকেও অনেক শুনতে হয়েছে।
: আপনি কি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিঙে পড়েছেন?
: আরে না। আমি বুয়েট বা কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়িনি। আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে। অ্যাপ্লাইড ফিজিকসে। কিন্তু অনার্স করার পর মাস্টার্স করতে পারিনি। বিয়ে হয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড চলে আসি। ভেবেছিলাম নিউজিল্যান্ড এসে অ্যাপ্লাইড ফিজিকসের ওপর মাস্টার্স করব। কিন্তু বাচ্চাকাচ্চা হয়ে ছ্যাড়াবেড়া লেগে যায়। এখন ফুল টাইম জবে ঢুকে গেছি।
: এখনো আবার লেখাপড়া শুরু করতে পারেন।
: আরে, এখন কী সেই বয়স আছে! আচ্ছা, তুমি কি শুধু মাস্টার্স করবে, নাকি আরও লেখাপড়া করবে?
: হ্যাঁ, আমার খুব ইচ্ছে পিএইচডি করার। আমার মার খুব ইচ্ছে।
: হুম, তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। লেখাপড়ার শেষ দেখে ছাড়বে। কখনো স্টাডি ব্রেক নেবে না। পারলে বিয়েশাদিও কর না।
নদী হেসে ফেলল। একবার রাকিবের দিকেও তাকাল। রাকিব তার পাশে বসা বাপ্পির সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত।
মিলি ভাবি জিজ্ঞেস করলেন, নদী, তোমাদের দেশের বাড়ি কোথায়?
নদী বলল, জি, আমার জন্ম ও বড় হওয়া ঢাকাতেই।
: দাদার বাড়িও কি ঢাকাতেই ছিল?
: জি না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
: আমাদের বাড়িও তো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। ভালোই তো, একই জেলার মানুষ। তোমাদের দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোথায়?
: বাঞ্ছারামপুর থানার মুকিমপুর।
মিলি ভাবি বললেন, আমাদের বাড়ি অবশ্য আখাউড়া থানার শাহবাজপুর।
নদী মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, আমি অবশ্য কখনো আমাদের দাদার বাড়িতে যাইনি। তাই অত চিনি না।
এ সময় জুঁই ভাবি কথাটা টেনে নিয়ে বললেন, আপনি কি জানেন, আপনাদের দাদার বাড়ি মুকিম পুর কোথায়?
নদী হেসে বলল, ভাবি, আপনি আমাকে তুমি করে ডাকবেন। আমি আপনার অনেক ছোট।
জুঁই ভাবি হেসে বললেন, ঠিক আছে। তাই ডাকব। আমার শ্বশুর বাড়ি কিন্তু মুকিমপুর। মুকিমপুর চৌধুরী বাড়ি।
নদী বলল, আমার দাদার বাড়িও তো মুকিমপুর চৌধুরী বাড়ি।
নাবিদ এতক্ষণ খাচ্ছিল আর মনোযোগ দিয়ে নদী, জুঁই ও মিলি ভাবির কথা শুনছিল। এবার সে নদীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, আপনার বাড়ি মুকিমপুর চৌধুরী বাড়ি?
নদী বলল, জি, ভাইয়া। আপনিও আমাকে তুমি করে ডাকবেন।
নাবিদ বললেন, তা না হয় পড়ে ডাকব। আগে জেনে নেই, আপনার বাবার নাম কী?
নদী বলল, রাজীব আহসান চৌধুরী।
: কোন রাজীব আহসান চৌধুরী, যিনি এক সময় চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে বাংলা সাহিত্যে লেখাপড়া করতেন?
: জি, তিনিই।
: আপনার মা-ও তো চিটাগং ইউনিভার্সিটিতে বাংলা সাহিত্যে লেখাপড়া করেছেন?
: জি, আমার মা ও বাবা ক্লাসমেট ছিলেন।
নাবিদ যেন এবার অনেকটা চিৎকার করে উঠল। বলল, এই জুঁই, শুনছ, এ তো আমাদের রাজীব চাচার মেয়ে। ও মাই গড! ও মাই গড!
(পর্ব ছয় সমাপ্ত। এরপর পর্ব সাত সবুজ মেঘের ছায়া)
মহিবুল আলম: গোল্ড কোস্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। ইমেইল: <[email protected]>
ধারাবাহিক এ উপন্যাসের আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন: https://www.prothomalo.com/durporobash/article/1563398