পার্থে তিন সপ্তাহজুড়ে দুর্গাপূজা

পূজামণ্ডপে ভক্তরা
পূজামণ্ডপে ভক্তরা

দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব। ধর্মীয় বিবেচনায় এ পূজার মাহাত্ম্য যেমন গভীর, সংস্কৃতির মেলবন্ধনেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর এ জন্যই দেশে-বিদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব ‘সর্বজনীন দুর্গোৎসব’ নামে যুগ যুগ ধরে পরিচিতি পেয়েছে।

যেখানেই বাঙালির বাস, সেখানেই সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ শারদীয় দুর্গোৎসব। অস্ট্রেলিয়ার পার্থও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের মতো এখানেও আয়োজক মূলত বাঙালি হিন্দু জনগোষ্ঠী হলেও অংশগ্রহণকারী সকল ধর্মের মানুষ। ছোট-বড় মিলিয়ে পার্থে এবার সাতটি দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে দুটি বাংলাদেশের বাঙালিদের আয়োজন, বাকি পাঁচটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের।

পূজামণ্ডপ
পূজামণ্ডপ

এ পূজাগুলোর আয়োজনে আয়োজকদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে উৎসব উদ্‌যাপনের মনোভাবের পরিচয় মেলে। প্রবাসের ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বেশির ভাগ পূজার আয়োজন করা হয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে—সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। এখানে তিথি নক্ষত্রের হিসাবের চেয়ে দুর্গাপূজার সর্বজনীনতা রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পুরোহিতেরা ব্যাপারটিকে যেভাবেই দেখুন না কেন, এ দেশের রেজিস্টার্ড পুরোহিতেরা (মূলত ভারতীয়) বিষয়টিকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন। কথায় বলে, এবারে পঞ্জিকার হিসাব মতে দুর্গাপূজা ১৫ অক্টোবর সোমবার শুরু হয়ে ১৯ অক্টোবর শুক্রবার শেষ হয়। এর প্রত্যেকটি দিন ছিল সপ্তাহের কর্মদিবস। তাইতো কেউ আগের সাপ্তাহিক ছুটির দিন আর কেউ পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পূজার আয়োজন করেন।

পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলা
পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলা

পার্থে এবার দুর্গোৎসব শুরু হয় ১২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল থেকে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের দুটি সংগঠন ওই দিন তিন দিনব্যাপী দুর্গোৎসব শুরু করে, যা শেষ হয় রোববারে। এদিকে বাংলাদেশের বাঙালিদের সংগঠন ‘বাঙালি সোসাইটি ফর পূজা অ্যান্ড কালচার’ ১৩ অক্টোবর শনিবার আয়োজন করে দেবী দুর্গার আগমনী ‘মহালয়া’। এই সংগঠনটির মূল পূজার আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিন ২০ অক্টোবর শনিবার। এ অনুষ্ঠানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির নিমন্ত্রণ ছিল। রাতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষে ছিল প্রসাদ বিতরণ। এ সময় ৪০০ জনের মতো বাঙালির সমাগম ঘটে স্থানীয় নর্থ পার্থ হলে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

বাংলাদেশের বাঙালিদের অপর সংগঠন ‘স্বামী বিবেকানন্দ অ্যাসোসিয়েশন’ দুর্গাপূজা আয়োজন করে দশমীর দিন ১৯ অক্টোবর শুক্রবার। যেসব ভক্ত তিথি নক্ষত্র মেনে পূজা করতে আগ্রহী তাদের অনেকেই এই পুজোতে যোগ দেন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের দুটি সংগঠন ২০ অক্টোবর শনিবার দুর্গাপূজা আয়োজন করে। পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের অপর একটি সংগঠন সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিন দিনব্যাপী দুর্গোৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর।

আর এভাবেই পার্থে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপিত হয় তিন সপ্তাহ জুড়ে। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সবকিছুর ওপরে বাঙালির উৎসব প্রিয়তার স্বাক্ষর মেলে প্রতিটি আয়োজনে।