ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বাংলাদেশিরাও

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

সরকারের সীমিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের কথা ভাবছে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন বিভাগ। নতুন উদ্যোগে দেশটির ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকেরা।

এ ছাড়া, ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের ফলে দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে এবং করণীয় নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্তে বলেছেন দেশটির জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কমিউনিটি অ্যান্ড পাবলিক সেক্টর ইউনিয়নের সহসভাপতি লিসা নিউম্যানসহ আরও অনেকে।

লিসা নিউম্যান
লিসা নিউম্যান

লিসা নিউম্যান

অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিটি অ্যান্ড পাবলিক সেক্টর ইউনিয়নের সহসভাপতি লিসা নিউম্যান বলেন, লিবারেল সরকার আমাদের ভিসা পদ্ধতিকে বিক্রি করে দিচ্ছে। যেখানে আমাদের সীমান্ত মুনাফার জন্য ক্ষুধার্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অর্থ উপার্জনকারী একটি মেশিন হয়ে দাঁড়াবে। আর এতে ভিসার গুণমান আর মূল্যায়ন করাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে অনেক দেশই ভিসা বেসরকারীকরণের পথে হেঁটেছে। আর তাদের যে কী দুর্দশা হচ্ছে সেটা বর্তমান মরিসন সরকার আমলেই নিচ্ছে না। আর আসন্ন বিপত্তির সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা। যুক্তরাজ্য ২০১৪ সালে ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের পর থেকে নির্ভরশীল আত্মীয়ের ভিসার খরচ বেড়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। একই দৃশ্য অস্ট্রেলিয়ায় হলে বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশির ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে পরিবারকে স্পনসর করা। তবে নিঃসন্দেহে আমাদের ভিসা পদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন। সবার পাশাপাশি বাংলাদেশি অভিবাসীদের উচিত সরকারকে বোঝানো, এই সংস্কার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় হতে পারে, বেসরকারীকরণের মাধ্যমে নয়।

সুমন সাহা
সুমন সাহা

সুমন সাহা

সিডনির কাম্বারল্যান্ড কাউন্সিলের কাউন্সিলর সুমন সাহা বলেন, বর্তমান লিবারেল সরকারের হাতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জয়ের একটা বড় হাতিয়ার অভিবাসন নীতি। দেশটির মোট ভোটারের একটা বড় অংশই যেখানে অভিবাসী, সেখানে তাদের ভয় দেখিয়ে জয় পেতে চাইছে এই সরকার। বহু সংস্কৃতির দেশ অস্ট্রেলিয়ায় সম্পূর্ণ বিপরীত এই ভিসা বেসরকারীকরণ। অভিবাসী বাংলাদেশিদের এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। প্রথম করণীয় হওয়া উচিত সবাইকে সরকারের এই ভীতিকর পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত করা। সবকিছু ভালো করে না জেনে প্রতিবাদ কিংবা একমত কোনোটাই কাম্য নয়। বিভিন্ন বাংলাদেশি সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।

ওয়াজীহ রাজীব
ওয়াজীহ রাজীব

ওয়াজীহ রাজীব

মেলবোর্নের অভিবাসন ভাষা শিক্ষা সমন্বয়কারী ওয়াজীহ রাজীব বলেন, কোনো সুবিধা যখন সরকার দেয় তখন সেটা সেবা। সেই একই সুবিধা যখন কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দেওয়া হবে তখন সেটা আর সেবা থাকবে না, ব্যবসা হয়ে যায়। তাই ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারিকরণকে আমার কাছে বাণিজ্যিককরণ বলেই বেশি মনে হচ্ছে। বাণিজ্য বলতেই বিষয়টা কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জনের নীতি চলে আসে। এর মানে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়ার বিষয়টিও সেবার থেকে মুনাফা অর্জনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়বে। এমনটা আমাদের অভিবাসীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে যারা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে পরিবারের সদস্যদের একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চান, তাদের সরাসরি একটা চাপ প্রয়োগ করা হবে। আমরা যারা বাংলাদেশি রয়েছি, আমাদের সকলেরই যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এ বিষয়ে সোচ্চার করা দরকার।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা প্রক্রিয়া বেসরকারীকরণের সরকারি পরিকল্পনার কথা প্রথম আসে এ বছরে ফেব্রুয়ারিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের সরকার এই পরিকল্পনা করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সরকারও নতুন করে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। নতুন উদ্যোগে ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভিসা প্রক্রিয়ার প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারবে। সরকার পক্ষ বলছে, ভিসার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারীর যোগ্যতা যাচাই করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তবে ভিসা দেবে সরকার। ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ইজারা গ্রহণের ইচ্ছা জানিয়ে আবেদনও করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাপ্তরিক কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন দেশটির কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রধান মাইকেল পেজ্জুলো।

আরও পড়ুন: