নেদারল্যান্ডসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্যচিত্র প্রদর্শন

তথ্যচিত্র দেখছেন দর্শক
তথ্যচিত্র দেখছেন দর্শক

বিজয়ের মাস উপলক্ষে নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। গত রোববার (২৫ নভেম্বর) দ্য হেগে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিলনায়তনে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ব্লকেড’ দেখার জন্য দূতাবাসের মিলনায়তন ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত প্রতিবাদের কাহিনি অবলম্বনে তথ্যচিত্রটি নির্মিত। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধের জন্য একদল আমেরিকান ও প্রবাসী বাংলাদেশি জনগণ কীভাবে পূর্ব উপকূলীয় বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন তথ্যচিত্রে তা তুলে ধরা হয়েছে। ব্লকেড তথ্যচিত্রটি দুর্লভ তথ্যপ্রমাণ এবং সেই প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী শীর্ষ ব্যক্তিবর্গের সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশে দেশে সাধারণ মানুষও যে কতটা প্রতিবাদী হতে পারে তা তুলে ধরার মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল
বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ মুহম্মদ বেলাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তী সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জনগণ যখন স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলে, তারই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো তা ধীরে ধীরে জানতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাসরত বাংলাদেশি আইটি বিশেষজ্ঞ আরিফ ইউসুফ নিজ প্রণোদনাতেই তথ্যচিত্রটি পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন। প্রামাণ্যচিত্র ক্যাটাগরিতে ব্লকেড ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রানসিস্কোতে ২০১৭ সালের ওয়ার্ল্ডস ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (TWIFF) পুরস্কার পেয়েছে।

তথ্যচিত্রে ১৯৭১ সালে ফিলাডেলফিয়াতে বসবাসকারী শান্তিবাদী রিচার্ড কে টেইলর, ফিলিস টেইলর, স্যালি উইলবি, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ক্লাউস ক্রিপেনডরফ, ড. চার্লস খান এবং ফিলাডেলফিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশি ড. সুলতানা আলম, ড. মোনায়েম চৌধুরী ও মাজহারুল হক প্রমুখের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। তাদের অহিংস আন্দোলনের কারণেই পাকিস্তানি কিছু জাহাজকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শূন্য ফিরতে হয়েছিল। আমেরিকান সরকারের অস্বীকারের প্রেক্ষিতে তারা সাধারণ মানুষের এবং সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রতীকী অবরোধ হিসেবে অস্ত্রবাহী পাকিস্তানগামী জাহাজের সামনে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিলেন। দলটি সাফল্যজনকভাবে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা অন্য সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আমেরিকায় এবং অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠনে সক্ষম হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ, টিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রামাণ্যচিত্রটি তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভুল পররাষ্ট্র নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে তুলে ধরেছে।

স্থানীয় দর্শকেরা তথ্যচিত্রটির বিষয়ে মতামত জানাচ্ছেন
স্থানীয় দর্শকেরা তথ্যচিত্রটির বিষয়ে মতামত জানাচ্ছেন

৮৫ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শনের পর এর পরিচালক ও প্রযোজক আরিফ ইউসুফ স্কাইপ-এর মাধ্যমে দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি আট বছরের বেশি সময় নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্র নির্মাণে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে তিনি আরও তথ্যচিত্র নির্মাণে আগ্রহী যেগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অথবা বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে হতে পারে। উৎসাহী দর্শকেরা তথ্যচিত্রটির বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ এবং অন্য স্থানেও এটি প্রদর্শন ও এ ধরনের তথ্যচিত্র আরও নির্মাণে তাদের সহায়তার মনোভাবও ব্যক্ত করেন।

নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল পরিচালক আরিফ ইউসুফকে তথ্যচিত্রটি তৈরির জন্য অভিনন্দন এবং এটি দূতাবাসে প্রদর্শনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বেলাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদক্ষেপের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দুর্দশার কথা স্মরণ করেই প্রধানমন্ত্রী দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশিদের তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের অর্জনকে তুলে ধরার আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি