নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশি শিল্পমালিকদের অংশগ্রহণে আলোচনা
বাংলাদেশ থেকে নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণের জন্য আগত শিল্পমালিকদের অংশগ্রহণে দ্য হেগে এক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলালের সরকারি বাসভবনে গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের নানা সফলতার গল্প।
উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা বাংলাদেশের কয়েকটি পোশাক শিল্পকারখানার তৈরি পোশাকের গুণগত মান বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পরিবেশবান্ধব উপায়ে কীভাবে তাদের পণ্য বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরা যায় তার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক প্রকল্পের আওতায় ১০টি নির্বাচিত শিল্পকারখানাকে এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিবিআই (দ্য সেন্টার ফর দ্য প্রমোশন অব ইমপোর্টস ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ)।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের গুণগত মান থাকার পরেও কেবল সফলভাবে বাজারজাতকরণের অভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের পোশাকশিল্প ব্যবসায়ীরা ভালো ক্রেতা না পাওয়াসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। এসব সমস্যা চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্বাচিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পকারখানাগুলোর স্বত্বাধিকারীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সিবিআই তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি, ম্যাচ মেকিংয়ে অংশগ্রহণ ও ক্রেতাদের সঙ্গে নেগোসিয়েশন কীভাবে সফলভাবে করতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। নির্বাচিত কারখানাগুলো হলো; আল-আমিন এক্সপোর্ট, ক্রিস্টাল কম্পোজিট, কেএডব্লিউ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি (Temakaw), রেজা ফ্যাশনস, সিকোটেক্স ফেব্রিকস, ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যারস লি., উইনটেক্স গার্মেন্টস লি., জিসাস ফ্যাশন, বাংলা পোশাক ও এফজিএস।
সিবিআই একই সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে নিয়ে গিয়ে হাতে-কলমে ক্রেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সুযোগ করে দেয়। ফলে ম্যাচ মেকিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা এখন আন্তর্জাতিক অনেক নামীদামি ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসা করার মতো যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের সফল, সক্ষম ও ভবিষ্যৎমুখী ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
আলোচনায় সিবিআই-এর প্রতিনিধি হুগো ভারহুয়েব বাংলাদেশে তাদের এই প্রকল্পকে সফলতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বাজারজাতকরণে বাংলাদেশের বিশেষ মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। সিবিআই-এর অপর প্রতিনিধি সেরগি লিয়ন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি পোশাকশিল্প কারখানায় বিদেশি ক্রেতা আকর্ষণের জন্য প্রয়োজন একটি রুচি ও গুণগত উৎকর্ষসম্পন্ন শোরুম বা ডিসপ্লে রুম। যা পরিদর্শন করলে বিদেশি ক্রেতারা যেন বুঝতে পারেন, এই শিল্প বিশ্বমানের। সেরগি লিয়ন উদাহরণ হিসেবে চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপোর্ট লিমিটেডের শোরুমের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই শিল্প এখন তাদের উদ্ভাবনী প্রদর্শক। ফলে বিশ্বের যেকোনো ক্রেতাকে আকর্ষণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্প মালিকেরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এ বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হয়ে পোশাকশিল্পের মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত মার্কেটিং প্রশিক্ষণ আয়োজনের জন্য উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করেন। সিবিআই-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিনহাজ এ ব্যাপারে বলেন, ইপিবি যদি চায় তারা সব রকম সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।
আলোচনায় রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদলকে এ প্রকল্প থেকে লব্ধ জ্ঞানকে তাদের সহযোগী অন্যান্য শিল্পের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিজিএমইএর মাধ্যমে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির প্রস্তাব করেন। তিনি একইভাবে সিবিআইকে এই ধরনের প্রকল্প অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক বাংলাদেশের হস্তশিল্প ও হোম ডেকর সেক্টরের উন্নয়নের জন্য যে পঞ্চবার্ষিকী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তার জন্য বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান। বিজ্ঞপ্তি