রক্তের সীমাহীন সোপান পেরিয়ে এসেছে মুক্তি, স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালির গৌরবময় উত্তরাধিকার। নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধদিনের বীরত্বগাথা, ত্যাগ ও নিপীড়নের গল্প তুলে আনতে মাঠঘাট ও গ্রামগঞ্জ চষে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা নেহাত কম। তাদেরই এক তাজুল মোহম্মদ। কানাডার মন্ট্রিয়েলপ্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ টরন্টোয় আসছেন পাঠশালার বিজয় দিবসের আসরে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর শনিবার পাঠশালার বিজয় দিবসের আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন লেখক ও গবেষক তাজুল মোহাম্মদ। আসরে তিনি শোনাবেন তাঁর জীবন ও মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে অভিজ্ঞতার কথা। এ আসর আয়োজন করা হয়েছে এগলিনটন স্কয়ারে টরন্টো পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে। শুরু হবে দুপুর ২টায়। চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য ক্যাটাগরিতে ২০১৫ সালের বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন তাজুল মোহাম্মদ। আশির দশকের শুরুর দিক থেকে আজ অবধি লিখে চলেছেন তিনি। চার দশক ধরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাশাপাশি ঘুরেছেন নানা দেশ। রচনা করেছেন ৫৫টি গ্রন্থ।
তিনি লিখেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, গবেষক হিসেবে তথ্য সংগ্রহের অভিজ্ঞতা, আলবদর-রাজাকার-আল শামসের নারকীয় কর্মকাণ্ড, নিজে দেখা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নিয়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেন সিলেটের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘সিলেটে গণহত্যা’। পরবর্তীতে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে তার সিলেটে গণহত্যা বইটি। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে ব্যাপক পরিচিত পান লেখক তাজুল মোহাম্মদ।
মুক্তিসংগ্রামে যেমন ছিল দৃঢ় সংবদ্ধ ঐক্য ও মিল, তেমনি ছিল একেক অঞ্চলের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য। খণ্ডের পরিচয় ছাড়া সম্ভব নয় সমগ্রের ধারণা লাভ। আবার সমগ্রের ধারণা ছাড়া সম্ভব নয় খণ্ডের পরিচয় গ্রহণ। বাংলার মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে তাই আঞ্চলিক ঘটনাধারার রয়েছে নিবিড় ও অবিচ্ছেদ্য যোগ। যে যোগ-সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধানে ব্রতী তাজুল মোহাম্মদের বিভিন্ন গ্রন্থে নানাভাবে ফুটে উঠেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সন্ধানে নিভৃতচারী গবেষক তাজুল মোহাম্মদের কাছ থেকে তাঁর এক জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প শোনার জন্য পাঠশালার বিজয় দিবসের বিশেষ আসরে উপস্থিতির জন্য প্রবাসী বিশেষত নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।