জেনেভায় প্রবাসীদের বিজয় দিবস উদ্যাপন

পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা
পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা

আমাদের বিশেষ দিবস বা ঐতিহ্যবাহী দিনগুলো উদ্‌যাপনের ক্ষেত্রে দেশের সঙ্গে প্রবাসের সংহতি পূর্ণ মিল থাকলেও অনেকখানি সীমাবদ্ধতাও কিন্তু থাকে। দেশে সবকিছুই থাকে অবারিত আর প্রবাসে যখন-তখন কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ এখানে অনেক নিয়ম, নীতিমালা, সেই সঙ্গে জায়গার প্রশ্নটিও চলে আসে। আর আমার কাছে মনে হয় প্রবাসে যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে একটা প্ল্যাটফর্মের দরকার হয়। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বাংলা পাঠশালা বা সুইস বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন তেমনি একটি প্ল্যাটফর্ম। এ সংগঠন জেনেভায় দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। তাদের মাধ্যমে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশ সম্পর্কে জানতে পারছে।

পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা
পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা

এ বছর ১৬ ডিসেম্বর রোববার হওয়ায় জেনেভাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বিজয়ের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে আসে। লাল সবুজের সাজে জেনেভা বাংলা পাঠশালার ছোট ছোট শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের নিয়ে অত্যন্ত বর্ণিল ও আনন্দ উৎসবের পরিবেশে মহান বিজয় দিবস উদ্‌যাপিত হয়। জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান ও আবৃত্তি দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রিয়াজুল হক ফরহাদ। আর তার দায়িত্বেই শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তবলা ও বেহালায় ছিলেন আরিনুল হক ও ফারানা হক।

পাঠশালার সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা
পাঠশালার সদস্য, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা

আমন্ত্রিত প্রবাসী ছাড়াও পাঠশালার শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি এক ভিন্ন মাত্রা পায়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাদাত হোসেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর জেনেভা বাংলা পাঠশালা তাদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত পাঁচ বছর ধরে দেশীয় পিঠা পুলির উৎসবের আয়োজন করে আসছে। সংগঠনের সকল সদস্য ও শিক্ষার্থীদের মায়েদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়া দেশীয় কিছু আঞ্চলিক পিঠার সঙ্গে পরিচিত হয়। উৎসবে ছিল প্রায় পনেরো রকমের দেশীয় পিঠা, পুলি ও পায়েসের সমারোহ। আর খাওয়ার জন্য তা উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য।

পিঠা উৎসব
পিঠা উৎসব

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। উনিশ শতকের নবজাগরণের ‘শিখা’ পত্রিকায় এই কথাটি তাদের প্রতিটি প্রকাশনায় লেখা থাকত। সেই কথার প্রেক্ষিতে বলতে ইচ্ছে করে, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা যেন সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে অগ্রসর না হয়। নিভু নিভু আলোয় নয় সাঁঝ বাতির আলোয় দেশ ও মাটির প্রকৃত ইতিহাস জেনে তারা আলোকিত মানুষ হোক।

ঔপনিবেশিক শোষণ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে আমরাই একমাত্র জাতি, যাদের অস্তিত্ব প্রকাশ, অধিকার আদায়ের সর্বক্ষেত্রে রক্তপাত ও ত্যাগ তিতিক্ষার আত্মদানের মতো বীরত্বগাথার ইতিহাস হয়ে আছে। ঠাকুমার ঝুলি নয়, আর নয় কোনো কল্পকাহিনির চরিত্র। আমাদের শিশুরা তাদের দেশের আত্মদানকারী প্রকৃত বীরসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ গল্প শুনেই বেড়ে উঠুক। বেড়ে উঠুক নির্ভার, নির্ভেজাল মুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম নাগরিক হিসেবে।

পিঠা উৎসবে আমন্ত্রিতরা
পিঠা উৎসবে আমন্ত্রিতরা

নাম না জানা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা দল মত নির্বিশেষে লাল সবুজের পতাকার নিচে দাঁড়াতে পারব। দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখব, প্রকৃত দেশপ্রেমিকেরা যেমন দেশের স্বার্থের কাছে নিজেদের জীবনকে বলি দিয়েছিলেন। বিজয় এসেছে সকল মানুষের অংশগ্রহণে। বিজয় ধরে রাখব সকল মানুষের একতাবদ্ধতায়। কারণ, বিজয় অর্জনের চেয়ে বিজয়ের সুফল ধরে রাখা অনেক কঠিন।