লন্ডনে হলিক্রসের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিজয় দিবস

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

প্রায় দুই মাস জল্পনাকল্পনা, প্ল্যান ও তারিখ ঠিক করে আমাদের গেট টুগেদারের আয়োজন। কবে হবে, কোথায় হবে, অনেক আলোচনার পর তারিখ ঠিক হলো ১৫ ডিসেম্বর শনিবার। কিন্তু কোথায় করা যায়? এই সময় এগিয়ে এল রিংকি—ফারজানা আফরোজ। ওর বাসায় অনুষ্ঠান করা সম্ভব বলে আমাদের আশ্বস্ত করল।

তারপর শুরু হলো জল্পনা কল্পনা। কে কী রান্না করবে। কী রঙের ড্রেস পরা হবে। কী কী করা হবে। গান-কবিতা কে কী করবে। সবার সে কী উত্তেজনা। এর মধ্যে কয়েকজনের আসা অনিশ্চিত। আসতে পারবে কিনা বলতে পারছে না। কত যে কথা। শেষ পর্যন্ত সিবাত কনর্ফাম করল ও আসবে। সেই নটিংহাম থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ড্রাইভ করে আসবে সিবাত। আগের দিন থেকে তানিয়ার জ্বর। কী করবে। কেমন করে আসবে। কত চিন্তা! সাম্পানের ছেলে অসুস্থ। মুনিয়ার মেয়ের জ্বর।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

সবাই খুব চিন্তায় পরে গেল। আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম সবাই যেন শেষ পর্যন্ত সুস্থ থাকে আর আসতে পারে। অবশেষে ১৫ ডিসেম্বর এল ঠিকই কিন্তু সঙ্গে নিয়ে এল ঝুম বৃষ্টি। কী বাজে আবহাওয়া। মনে হচ্ছে আমাদের অনুষ্ঠান বানচাল করার ষড়যন্ত্র যেন করছে লন্ডনের ওয়েদার। কিন্তু আমরাও হলিক্রসের ছাত্রী যেন—‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে! লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার’। আমাদের জন্যই লেখা।

সব রকম বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সবাই ঠিক পৌঁছে গেলাম রিংকির বাসায়। বেচারা সারা দিন কাজ করে এসে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল মেহমানদারিতে। সঙ্গে ছিল ওর স্বামী। লন্ডনের বাইরে থেকে এল আমাদের বন্ধু নাইমা ও ছোট বোন শাতিলা। সুদূর বাংলাদেশ থেকে তিন দিনের জন্য বেড়াতে এসে যোগ দিল বন্ধু কোয়েলও। এ যেন আমাদের বিদ্যাপীঠেই বিজয় দিবসের উৎসব হচ্ছে। খুব সুন্দর একটা সন্ধ্যা কাটল সবার সঙ্গে। এদের কারও সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই। নেই কোনো স্বার্থের সম্পর্ক। কিন্তু হয়েছে আত্মার সম্পর্ক। সবাই এত আন্তরিক। তাই ভালো লাগে সবার সঙ্গে আড্ডা দিতে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

প্রত্যেকেই মজার মজার সব রান্না করে নিয়ে এসেছিল। কোনটা রেখে কোনটা খাব। এটাই ছিল মহাচিন্তা। যা হোক, খাওয়াদাওয়া আর ঘরোয়া আড্ডার পরে ছিল গান ও কবিতার আসর।

বন্ধু নাইমা পারভীন কবি কেতন শেখের কবিতা আবৃত্তি দিয়ে শুরু করে অনুষ্ঠান। এরপর একটি রবীন্দ্রসংগীত করেন শাখেনাবাত কাসানা সাম্পান। এরপর দুটি দেশাত্মবোধক গান করেন সাম্পান, মুনিয়া ও সিবাত। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল মুনিয়ার পাঁচ বছরের মেয়ের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান—‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, ও আমার বাংলাদেশ প্রিয় জন্মভূমি’।

বিজয় দিবসের কেক
বিজয় দিবসের কেক

দেশ থেকে হাজার মাইল দুরে থেকেও এই প্রজন্ম তাদের সন্তানদের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য যে ভালোবাসা তৈরির চেষ্টা করছে তা দেখে আমি অভিভূত। বিদেশের মাটিতেও হলিক্রস পরিবারের এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে আশা করি।

অনুষ্ঠানে যারা ছিল সবার সঙ্গে অনেক মজা করেছি। যারা আসোনি তাদের ভীষণ মিস করেছি। বিশেষ করে তাজ। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আর ধন্যবাদ জানাই সবার স্বামীদের, যারা কষ্ট করে বউদের নিয়ে এসেছেন।

আবারও এমন আড্ডা ঘন ঘন হবে সেই আশায়।

বিভিন্নজনের রান্না করে নিয়ে আসা মজার মজার সব খাবার
বিভিন্নজনের রান্না করে নিয়ে আসা মজার মজার সব খাবার