নবীনদের আগমন ও স্বপ্ন অর্পণ

আলোকচিত্র প্রদর্শনী
আলোকচিত্র প্রদর্শনী

এস্তোনিয়ার তালিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে যখন ইন্টারভিউ দিই, তখনো এস্তোনিয়া সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। আমাদের দেশে এখনো এস্তোনিয়া খুব একটা পরিচিত নয়। এখানে আসার পর দেখলাম, বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বসবাস করছেন। অনেকেই অনেক বছর ধরে আছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন আয়োজনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার সুবাদে আরও অনেকের সঙ্গে পরিচিতি হতে থাকলাম।

আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ
আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ

পরিচয় হওয়ার পর দেখা গেল, এখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক মেধাবী গায়ক, গায়িকা, আবৃত্তিকার ও আলোকচিত্রশিল্পী আছেন। আমার সঙ্গে পরিচয় হলো শুভ নামে একটি ছেলের। খুব ভালো আলোকচিত্রশিল্পী। বিভিন্ন ইভেন্টে শুভকেই আমরা পেতাম আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে। খুব ইচ্ছা করত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেশকে পরিচিত করবার জন্য কিছু একটা করি।

আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ
আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ

এদিকে নবীন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা আসা শুরু করল ক্যাম্পাসে। আমার মাঝে মাঝে মনে হতো, দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বছর শিক্ষকতা করলাম, যদি আমার কোনো প্রাক্তন ছাত্র চলে আসে! হঠাৎ একদিন একটা মেসেজ পেলাম, স্বরূপ সাহা নামে আমার এক প্রাক্তন ছাত্র তালিনে আসছে। আসার পর জানতে পারলাম, ও একজন ভালো আলোকচিত্রশিল্পী। বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতে, সে অনেক সফলতার সঙ্গে এর আগে অংশ নিয়েছে।

স্বরূপ আমাকে বলল, এই ক্যাম্পাসে একটা চিত্র প্রদর্শনী হলে কেমন হয়! সবার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতি বিষয়ক নিজেদের তোলা কিছু ছবি চাওয়া হবে। পরে বাছাই করা ছবিগুলো ক্যাম্পাসে কোথাও টানানো হবে। আমার মনে তখন কিছু একটা করবার ঘণ্টাটি বাজা শুরু করল। দ্রুত যোগাযোগ করলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে। তারা রাজি হলো, কিন্তু ছবি গুলো দেখতে চাইল। আমি ছবিগুলো দেখালাম। তারা বলল, বাহ। কী সুন্দর! পেয়ে গেলাম ক্যাম্পাসের ভেতরের একটা করিডরে চিত্র প্রদর্শনীর সুযোগ।

আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ
আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আগত বাংলাদেশিদের একাংশ

স্বরূপ নবীন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করল সেই স্বপ্ন যাত্রা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল মুজাহিদ। সব সময় সঙ্গে থেকে, অনেক পরিশ্রম করে এই চিত্র প্রদর্শনীর জন্য কাজ করে যায়। গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৪৭তম বিজয় দিবসকে উপলক্ষ করে অবশেষে সফলতার সঙ্গে আমাদের চিত্র প্রদর্শনীটি সম্পন্ন হয়।

চিত্র প্রদর্শনীটিতে যারা ছবি দিয়ে অংশ নিয়েছেন তাঁরা হচ্ছেন; শুভ, জুবাইন, দিন আল হোসেন, অর্ণব চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ আল সাবির, মুজাহিদ, সায়েম, মাসুদ, পার্থ সারথি কর, লেখক ও স্বরূপ। চিত্র প্রদর্শনীর জন্য ছবি বাছাই করে দেন নারায়ণগঞ্জ ফটোগ্রাফিক ক্লাবের সেক্রেটারি জেনারেল ইউসুফ শাহরিয়ার মুন্তাকিম।

প্রদর্শনীর দুই দিন বিদেশিদের পাশাপাশি এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই আসেন ছবিগুলো দেখতে। তাদের অংশগ্রহণে দুটি দিন আমরা যেন দেশকে খুঁজে পাই এই সুদূর প্রবাসে। সফল প্রদর্শনী শেষে শুভ, রায়হানা ও ওমর ফারুক আয়োজন করেন একটি সামাজিক আড্ডা।

স্বরূপ সাহা ও মুজাহিদ
স্বরূপ সাহা ও মুজাহিদ

এ রকম প্রদর্শনী আমাদের অনেক উৎসাহিত করেছে দেশের জন্য কিছু একটা করার জন্য, দেশকে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করার জন্য। তালিনে বাংলাদেশিদের এই সংস্কৃতি চর্চা, এখানে একটি মজবুত সাংস্কৃতিক দলের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। নতুনদের আগমনে দিন দিন তা সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখন আমরা সহজেই নবীনদের হাতে করতে পারি স্বপ্ন অর্পণ।
...

ড. মুহিদুল ইসলাম খান: সিনিয়র লেকচারার, তালিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, তালিন, এস্তোনিয়া।