আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে টরন্টোয় কনসার্ট
মাসটা বিজয়ের। এ মাসে পুরো টরন্টোর সংগীতপ্রিয় বাংলাদেশিদের মন জয় করে নিল ‘লিজেন্ডস নেভার ডাই-আ ট্রিবিউট কনসার্ট ফর আইয়ুব বাচ্চু’ শিরোনামে ব্যান্ড শোটি। বিজয় দিবসের ঠিক আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর শনিবার টরন্টোয় বিশাল আয়োজনে হয়ে গেল এই ব্যান্ড শো। এই শোর মূল উদ্দেশ্য ছিল গানে গানে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করা। টরন্টোয় বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠিত দশটি ব্যান্ডদল তাদের গান নিয়ে সাজিয়েছিল সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি। সঙ্গে ছিল আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় সব গানগুলোও।
ব্যান্ড মিউজিশিয়ানদের সম্পূর্ণ নিজস্ব ইচ্ছা ও উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানটির জন্ম। মিউজিশিয়ানদের উদ্যোগে শুধুমাত্র ব্যান্ডদের নিয়ে এটাই প্রথম আয়োজন ছিল টরন্টোতে। প্রায় দুই মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন প্রতিটি ব্যান্ডের মিউজিশিয়ানরা। আসলে এই সবই ছিল আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আর ভালোবাসাযুক্ত সম্মান।
অনুষ্ঠানটি ছিল সম্পূর্ণ ফ্রি এন্ট্রি। কোনো টিকিটের ব্যবস্থা ছিল না। আয়োজকদের উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্মরণ করা। সত্যি বলতে আয়োজকেরা তাদের উদ্দেশ্যে সফল হতে পেরেছেন পূর্ণ মাত্রায়। পুরো অডিটোরিয়াম জুড়ে উপচে পড়া ভিড় ছিল তারই প্রমাণ।
এই উদ্যোগকে সমর্থন করে, আইয়ুব বাচ্চুকে সম্মান দিয়ে, ভালোবেসে বেশ কিছু মানুষ এসে দাঁড়িয়েছিলেন আয়োজকদের পাশে। বিভিন্ন স্পনসরশিপের পাশাপাশি ছিল বেশ কিছু ব্যক্তিগত অনুদান। এ ছাড়া, নানাভাবেও অনেকেই সঙ্গে ছিলেন পুরো অনুষ্ঠানটির।
ব্যান্ড ফোর, চন্দন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, যান্ত্রিক, মানুষ, অবসর, রিফ্লেক্সন, সেক্টর ২.০, শিকড়, সুর আর টুলু অ্যান্ড দ্য লাইটমেন। নামের মতোই দারুণ ভিন্নতা ছিল প্রতিটি ব্যান্ডের গানেও। দশটি ব্যান্ডে যেমন ছিল আশিকুজ্জামান টুলু ও উইনিংয়ের চন্দনের মতো লিজেন্ডারি, ঠিক তেমনি ছিল একেবারে নতুন কিছু প্রতিভা। দর্শক শ্রোতারাও মেতেছিলেন তাদের পছন্দসই গানের সঙ্গে সঙ্গে। তবে আইয়ুব বাচ্চুর ফেরারি এই মনটা আমার, এখন অনেক রাত, এই রুপালি গিটার ফেলে গানগুলির সময় দর্শক-শ্রোতার একাত্মতা ছিল মনে রাখার মতো। গলা ছেড়ে গলা মিলিয়েছিলেন সকলেই।
প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলা এই আয়োজনে একটুও ক্লান্তি আসেনি কারও। মাঝে পনেরো মিনিটের একটি বিরতি অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রাণবন্ত করেছিল। একদম শেষ পর্যায়ে ছিল সব ব্যান্ডের সদস্যসহ আরও অনেকের একসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাচ্চুর ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’ গানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা। হলভর্তি দর্শকেরাও সম্মান জানাতে দাঁড়িয়েছিলেন এক হয়ে। প্রতিটি দর্শক-শ্রোতা যেন শিহরিত হচ্ছিলেন আর তাদের মুখে ছিল, সেই তুমি।
একটা অনুষ্ঠানকে সফল করতে যে শুধুমাত্র ঐকান্তিক ইচ্ছাই মুখ্য তা প্রমাণ করে দিলেন টরন্টোর এই মিউজিশিয়ানেরা। আপনাদের জন্য রইল অনেক শুভকামনা আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা। ভবিষ্যতে আরও এমন অনেক সুস্থ ও সুন্দর উদ্যোগ দেখার অপেক্ষায় রইল টরন্টোবাসী।