উৎসবের মাস

সমুদ্র তীরে আতশবাজি
সমুদ্র তীরে আতশবাজি

অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর হচ্ছে উৎসবের মাস। এই উৎসব যেমন লেগে থাকে মানুষের চোখে-মুখে, তেমনি বোঝা যায় প্রকৃতিতে। উল্লেখযোগ্য উৎসবের মধ্যে আছে বড়দিন, বক্সিং ডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও থার্টি ফার্স্ট নাইট। তাই এ মাসের শুরুতেই সবাই বলতে চান আমি কিন্তু অফিসে থাকব না। দরকার হলে যোগাযোগ করতে পার ইমেইলে। এভাবে ছুটিতে তারা ছুটে যান বিভিন্ন দেশে। আর আবহাওয়ার মেজাজও থাকে গরম। তেমনি এর বিপরীত মেরুর দেশগুলোতে দেখা যায় শীতের কনকনে কাঁপুনি। এখানে যখন দেখি ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সে সময় কোরিয়াতে শুনলাম -সাত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

এ দেশকে অবলীলায় বলা যায় বড় শহরের শান্ত গ্রাম। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে থাকে বড়দিন। বড়দিন এ দেশের সব থেকে বড় উৎসব। এ জন্য শহরে সব জায়গায় দেখা যায় ক্রিসমাস ট্রি। কিছু ক্রিসমাস ট্রি তৈরি করা হয় কৃত্রিমভাবে। আবার কিছু গাছ বেড়ে উঠেছে প্রকৃতিগতভাবে। তবে সব গাছই ছোট ছোট মিটির মিটি বাতি দিয়ে আলোকোজ্জ্বল করা হয়। আর উৎসব উপলক্ষে বেশির ভাগ বাড়িতেই রংবেরঙের বাতি জ্বালানো হয় সন্ধ্যার পর। চলে নানা ধরনের খাওয়া দাওয়া আর উপহার বিনিময়। বড়দিনের উৎসবের শুরুর দিনে সকালেই চার্চ যায় বেশির ভাগ। গান আর প্রার্থনায় সময়গুলো তারা পার করেন।

বড়দিনের ছুটিতে ভিক্টর হারবারে ভ্রমণ
বড়দিনের ছুটিতে ভিক্টর হারবারে ভ্রমণ

এ মাসে কিছু তরুণ বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গান বাজনায় মেতে ওঠে। এই বড়দিনের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সান্তা ক্লজ সাজা। মাথায় থাকে লাল রঙের টুপি আর থাকে সাদা দাঁড়ি। মাঝে মাঝে তারা বসে সময় কাটান কিছু ক্রিসমাস গাছের চারদিকে।

অ্যাডিলেড শহরের কেন্দ্র হচ্ছে ভিক্টোরিয়া স্কয়ার। জায়গাটা বেশ গোলাকৃতির। এখানে বসে ছোটখাটো মেলা। নতুন বাতি, আলোকসজ্জা ও নাগরদোলা দেখা যায়। দিনগুলো থাকে সরকারি ছুটি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। এদের কাছে উৎসব মানে কাজহীন সময় কাটানো।

খ্রিষ্ট রীতি অনুসারে ক্রিসমাস মানে হচ্ছে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। আর এই দিন থেকেই গণনা করা হয় খ্রিষ্টীয় সাল। এর মানে হচ্ছে ২০১৮ বছর আগে যিশুখ্রিষ্ট এই পৃথিবীতে আসেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত কিছু দেশে বড়দিনের পরের দিনটিকে পালন করে বক্সিং ডে। এ দিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সকল পণ্যে একটা বিশেষ ছাড়। যাকে উৎসব না বলে আর কীই বা বলা যায়। এ জন্যই দোকানগুলোতে দেখা যায় বাড়তি ভিড়। শোনা যায় মানুষের সরগরম ধ্বনি। যা অনেকটা আমাদের দেশের ঈদের আগে দিনের সরগরম বাজার। আর শহরের বাস–ট্রামে চলাচলের জন্য ফ্রি করে দেয় সরকার।

সূর্য ডোবার দৃশ্য
সূর্য ডোবার দৃশ্য

এ মাসের শেষের দিকে আছে থার্টি ফাস্ট নাইট। এই বিশেষ দিনে সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ উৎসব। গভীর রাত পর্যন্ত আয়োজন করা হয় আলোকসজ্জা উৎসব। যা দেখার জন্য বিকেল থেকেই ভিড় জমান সকল শ্রেণি পেশার লোকজন। কিছু কিছু সি বিচে আয়োজন করে কনসার্ট। মানুষের যাতায়াত সহজ করার জন্য থাকে বাড়তি যানবাহনের ব্যবস্থা। কিছু কিছু বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে আয়োজন করে ঘরোয়া অনুষ্ঠান আর আলোকসজ্জা।

সমুদ্রতীরেও জমে ওঠে আতশবাজি (ফায়ার ওয়ার্কস)। এই অনুষ্ঠানগুলো অনেকটা একই ধরনের। একই সঙ্গে দেখা যায় শেষ সূর্য ডোবার দৃশ্য আর আতশবাজি শব্দ। এরা নিজেদের সংস্কৃতি ধারণ করে রেখেছে নিজেদের মতো করে। যেখানে আছে নানান ধরনের উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনা। কিন্তু নেই কোনো সাংস্কৃতিক অসুস্থতা। এই উৎসবের সময়টা হয়তো বেশ অল্প তবুও মানুষ চায় তাদের মনকে রাঙাতে। দোষ তো কিছু নেই। হোক মুখর আমাদের সবার মন ও মনন এই উৎসবে। আর ভালো থাক তার মন আর তাদের মনের রঙিন ভালোবাসা। জয় হোক উৎসবের এবং ভালো থাকুক মানুষের ভালো মন।