জাগ্রত জীবন
শিবেন দৃষ্টিশক্তি প্রায় হারিয়েছে। ঝাপসা দেখলেও তার অতি সতর্ক অনুভূতি তাকে কখনোই স্বস্তি দেয় না। সারা দিন জানালার পাশে বসে জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজায় সে। বহু চেষ্টা করেও ঘটনা পরম্পরায় কোনো সামঞ্জস্য তৈরি করতে পারে না। এসব গরমিল আর কার্যকারণ নির্ণয়ে সে সারাক্ষণ খুব অস্থির থাকে। প্রতিবেশী বা পরিচিতজনদের আগমন টের পেলে তার অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়।
এমনই এক সময়ে হঠাৎ কার যেন আগমন টের পেয়ে শিবেন বলে, কে আসছ গো?
: আমি স্বপ্না।
: তুমি কার খোঁজে আসছ?
: ভাই, আমি স্বপ্না। নীরেনের বান্ধবী। আমরা একই সাথে পড়তাম। লেকের পাড়ে আপনার দোকানে প্রায়ই যেতাম।
শিবেন হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। আজ ভাইয়ের কথা স্মরণ হতেই বলে, নীরেনের বান্ধবী তুমি। আমার ভাইয়ের খোঁজে আসছ?
: জি, আমি ইংল্যান্ডে থাকি। গত সপ্তায় দেশে আসছি। ওই দোকানে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি অন্য লোকজন। অনেক চেষ্টার পর আপনার ঠিকানা বের করেছি।
: নীরেনকে তোমার কী দরকার গো?
: দুই মাসের ছুটিতে দেশে এসেছি। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে যতটুকু সম্ভব দেখা করতে চাই।
কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে শিবেন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে, তুমি এখন যাও। আমার ভাই মরে গেছে। ক্রসফায়ারে পড়ে মরে গেছে। আবার বলে বসো না, নীরেনের কবর কই। এমন একদিন আসবে যখন আমাদের দুই ভাইকে স্মরণ করার মতো কেউ থাকবে না। তুমি যাও।
শিবেনের স্ত্রী সবিতা রান্নায় ব্যস্ত। উঠোনে হইচই শুনে বাইরে আসে। দেখে, স্বপ্না চলে যাচ্ছে। সবিতা এক দৌড়ে আঙিনায় এসে ডেকে বলে, স্বপ্না, তুমি চলে যাচ্ছ বুঝি?
: হ্যাঁ, চলে যাচ্ছি।
: একটু বসবেও না?
স্বপ্না ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক তাকায় শুধু। ওই তাকানোর মাঝে অনেক ঝরঝরে স্নিগ্ধ স্মৃতি কিছুক্ষণের জন্য সবিতার চোখের ওপর দিয়ে খেলা করে যায়। কত সুন্দর ছিল সব! হাসি, আনন্দ, আত্মীয়স্বজনের আসা-যাওয়া। নীরেন নেই। ঢাকার বাসাটিও নেই। আজ আর নেই কেউ।
: আপনি আমায় চেনেন?
: হ, চিনি। ভালো করেই চিনি।
: কীভাবে?
: নীরেনের সাথেই হয়তো কোথাও দেখেছি তোমায়।
: ও, তাই!
: স্বপ্না, কীসের এত তাড়া। এসো দুটো কথা বলি। প্রায়ই তোমার কথা ভাবি। বসো, ওই কথাগুলো বলতে আজ আর কোনো বাধা নেই। তোমার প্রতি আমার বিশ্বাসও আছে। বন্ধুর খোঁজে এসেছ। তার পারিবারিক কিছু কথা তোমার জানা থাকা ভালো।
স্বপ্না থমকে দাঁড়ায়। বাড়ির ছোট্ট আঙিনায় দুটো মোড়া এনে দুজন বসে।
: তুমি করে বললাম। কিছু মনে করনি তো?
: না, মনে করিনি। আপনি তো আমাকে তুমি করেই বলবেন।
: কোথায় থাক, কী কর?
: লন্ডনে আছি আজ দুই বছর।
: ও আচ্ছা। তোমার আর নীরেনের ঘটনা আমি জানতাম।
: জানতেন! কীভাবে?
: খেলায় হেরে গেছি। খেলা মাত্রই হারজিত আছে। তাই না?
স্বপ্নার অনুভূতির সর্বত্র এক অচেনা স্ফুলিঙ্গ নাড়া দিয়ে ওঠে। সবিতার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলে, খেলা মাত্রই হারজিত আছে। কথা সত্য। তবে আমি বুঝতে পারছি না এ খেলার দরকার কী ছিল।
কিছুক্ষণ স্বপ্নার দিকে অপলক চেয়ে থেকে সবিতা বলে, বুঝতে পারছ না বলেই তো তুমি এ দেশে থাকতে পারনি। পরদেশে করছ বসতি। তোমার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছি দেশে ফেরার ইচ্ছে তোমার নেই। তুমি খুব ভালো করেছ। কারণ, এই বাংলাদেশ বোকাদের জন্য নয়।
স্বপ্নার চোখ-কান হঠাৎ শিরশির করে ওঠে। উত্তর দেয়, বোকা! আপনি আসলে কী বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি না।
: না বোন, রাগ করো না। নীরেনকে ভালোবাসতে তুমি। ভালো করেই জানতাম।
: তাই তো বলছি। কীভাবে জানতেন?
সবিতার উদাস দৃষ্টি তখন ঘরের চালের ওপর দিয়ে আকাশ পানে। ছুটে চলার আনন্দে বিভোর সাদা ওই মেঘ। কখনো থামতে জানে না। বহমান নদীর মতো জীবন তার। কোথায় যেন ক্ষণিক থেমেছিল। তার আজ অনেক কিছু মনে পড়ছে। স্বপ্নার আগমনেই কী ওই ঘ্রাণ পাওয়া?
: স্বপ্না।
: জি, বলেন।
: বলব, তবে কিছু মনে করবে না তো?
: না। অবশ্যই না।
: নারী হয়ে জন্মেছ। গতানুগতিক কিছু বিশ্বাস-রীতিনীতি মেনে চলবে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমার মাঝে ওসব নেই। তাই আমি মানুষের আসল রূপটা দেখতে পাই। নীরেন খুব ভালো ছেলে। একান্ত মুহূর্তে সে বলেছিল, তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
: ও আচ্ছা, তাই বুঝি!
: একটা নারীর সাময়িক আস্বাদ পেতে পুরুষেরা নিজের ভালোবাসাকে আড়াল করে। আমার মনে হয়, কামনার কুহকে অন্ধ ওরা ভালোবাসা কী তা জানেই না। ওই অন্ধদের মাঝে একমাত্র নীরেনই আমার মনে গেঁথে আছে।
সবিতার কথাই হয়তো সত্যি। স্বপ্না গতানুগতিক নারীদেরই একজন। তবে সে প্রথা, রীতি আর বিশ্বাসের দ্বন্দ্বে জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়। আজ সে শুনছে তেমনই কিছু কথা।
: জি, এখনো বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না।
: বিবাহিত মেয়ে তুমি। না বোঝার কী আছে।
: না, মানে এমন করে ভাবিনি কখনো।
গভীর মগ্নতায় কিছুক্ষণ ভেবে সবিতা বলে, একটা মেয়ের ক্ষমতা যে কত, তা চোখে দেখার ইচ্ছা ছিল।
: আচ্ছা, দেখেছেন?
: হ, দেখেছি। রাতের বেলায় কেরোসিনের শিখায় পোকা পুড়ে মরতে দেখেছ?
: দেখেছি।
: ঘটনা আমি নিজেই ঘটিয়েছি।
কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে স্বপ্না বলে, ছোটবেলায় মা-বাবা হারানো দুই ভাই। ওদের নিয়ে আপনার খেলা তবে ভালোই জমেছিল।
সবিতার বুকটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে ওঠে। কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ পায় না। সহজভাবেই সে বলে, যেভাবেই দেখ না কেন, যা করে মানুষ আনন্দ পায়, সুযোগ পেলেই সে কাজটা করে।
: হ্যাঁ, করে। তবে আমি জানতে চাই, নীরেন কী করেছিল? জীবনের এই বহমান নদীতে নানান ঘাটে আপনি নোঙর গেড়েছেন। মনে ধরেছে কেবল নীরেনকে। তা যদি সত্যি হয়, তবে এত কুৎসা রটিয়ে ওকে বিপদে ফেলে দিলেন যে!
সবিতা ভ্রু টান টান করে বলে, বিপদ? কী বলছ! ওসব আমি কেন করব? শিবেন ঢাকায় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ফাস্ট ফুডের একটা দোকান চালাত। প্রায়ই ফুচকা খেতে যেতাম। তুমিও যেতে। ওকে দেখেই টার্গেট করি। বেশ স্মার্ট ছেলে। আমার ইঙ্গিত পেয়ে সে মোমের মতো গলে যায়। বিয়ে করে আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে দেখি, ওর ছোট ভাই নীরেন ওর চেয়েও স্মার্ট। মাসখানেক পর সম্পর্কটা সহজ হয়ে আসে। শিবেনও চলে যায় ঢাকায়। একদিন শিবেন কিছু টাকা আর নতুন কাপড় দিয়ে নীরেনকে বাড়িতে পাঠায়। সুযোগ বুঝে ওই দিন গভীর রাতে নীরেনকে আমিই ডেকেছিলাম। ভালো লেগেছিল তাই। সে এসেছিল। নিবিড় সুখ বিনিময়কালে সে অনেক কথা বলেছিল। এভাবেই তোমার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পাই। বড় অবাক হয়েছিলাম। সব সময় পুরুষেরা অনেক মিথ্যা কথা বলে। নীরেন কিন্তু পুরোটাই আলাদা। তোমার কথা বলতে গিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই সে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। এ জীবনে আর কাউকে এমনটি দেখিনি। অবাক হয়েছিলাম এই কারণে যে রূপ তোমার চেয়ে আমার কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি।
শিবেন একসময় গোড়ানে বাসা নেয়। সেখানে একদিন একান্ত মুহূর্তে নীরেনের সাথে রাত কাটানোর ঘটনাটা শিবেনকে বলি। তারপর যা হওয়ার ওদের দুই ভাইয়ের মধ্যে হয়েছে। আমি শুধু খেলা দেখেছি। নির্বোধ পুরুষের খেলা।
রাগে ক্ষোভে স্বপ্নার চোখ দুটো অস্থির হয়ে ওঠে। বলে, কী বললেন, নির্বোধ পুরুষের খেলা!
: ঠিক তাই। আমি আমার খেয়ালের জগতে মনের আনন্দে বিহার করি। এদিকে খুনোখুনি শুরু হয়ে যায় আপন দুই ভাইয়ে। শিবেন আদালতে গেলে উকিল কঠিন কঠিন সব ধারা যুক্ত করে মামলা ঠুকে দেয়। উকিল, পুলিশ, পেশকার জলের মতো টাকা হাতিয়ে নিতে থাকে। ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। শিবেন বলে সে আমাকে ভালোবাসে। মোটেই তা নয়। সে কামনার মোহে দিশেহারা। তাই একদিন ওকে বললাম, কী শুরু করলে এসব। নীরেন তোমার ছোট ভাই। ওর প্রতি যত কঠিনই হও, হতে পার। ওকে যদি খুনও করে ফেল বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কিন্তু ওর সাথে যে তোমার রক্তের বন্ধন। ওই বন্ধনের মাঝে আমি কে, একবার ভেবে দেখেছ?
স্বপ্না চোখ দুটো কপালে তুলে বলে, তারপর?
: তারপর আর কী। কিছুক্ষণ কী যেন ভেবে শিবেন হাউমাউ করে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। ছোট ভাইয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটি গেছে। ব্যবসা গেছে। ঢাকার বাসাও গেছে। ওই কান্না আজও থামেনি। এখন দুবেলা খাবার জোটে না। গোড়ানের ওই বাসায় শিবেনের ব্যবসার এক পার্টনার প্রায়ই আসত। বেশ সুন্দর ছেলেটা। আমার মনে ধরেছিল। রেস্টুরেন্টের বাজার করত সে। দুপুরে ঘণ্টাখানেক আমার সাথে সুখ বিনিময় করত। এ কথাও শিবেন একদিন জানতে পারে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আপন ভাইয়ের প্রতি সে যতটা কঠোর, ওই ছেলেটার প্রতি ঠিক ততটাই নীরব। বড়ই বিচিত্র এ জগতের খেলা!
: কী বলছেন এসব! আপনি কি সুস্থ, নাকি মানসিক রোগী?
স্বপ্নার এ জিজ্ঞাসা আড়াল করে সবিতা বলে, তুমি ভালো মেয়ে। নিজের আনন্দকে গলা টিপে মেরেছ। এরপর এক অচেনা ছেলেকে আপন করে নিয়ে সুখে থাকার ভান করছ। নীরেন ফেরারি। তাই তুমি তোমার ভালোবাসার সাথে আপস করেছ। উন্নত দেশে স্থায়ী হওয়ার লোভে অচেনা ছেলেকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করেছ। চারদিকে তোমার বাহবার সীমা নেই। তোমার মতো অভিনয় করতে পারিনি বলেই আজ আমি গণিকা।
স্বপ্নার মৃদু হাসিতে উপহাস নিংড়ে পড়ে।
: অচেনা ছেলেকে আপন করেছি। সুখের দেখা না পেয়েও সুখের ভান করছি। আপনি কী করে বুঝলেন এসব? আমার তো মনে হয় এমন কিছু একটা ঘটবে নীরেন আগেই টের পেয়েছিল। তাই মামলার আগেই...।
স্বপ্নার কথা শেষ না হতেই সবিতা বলে, আচ্ছা, তুমি তো বেশ শিক্ষিত মেয়ে। কোনো ভণিতা ছাড়া আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেবে?
: যদি জানা থাকে অবশ্যই দেব।
: আচ্ছা বলো তো দেখি, মানুষ কি মানুষের মালিক হতে পারে?
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে স্বপ্না বলে, অতীতে এ রকম একটা প্রথা ছিল। ওই বাস্তবতা তো আর চোখে দেখিনি। তবে আমার অভিজ্ঞতায় যা দেখেছি, তা থেকে বলতে পারি, মানুষ কখনো মানুষের মালিক হতে পারে না। যত শৃঙ্খলের মাঝেই আমরা বসবাস করি না কেন, মানুষের মন সব সময়ই স্বাধীনতা চায়।
: সত্য উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ। ওই যে বললে শৃঙ্খল, ওই শৃঙ্খলই তৈরি করেছে যত বিশৃঙ্খল। শুরু হয়েছে এক ইতর খেলা।
: আপনি বললেই তো আর হবে না। গায়ের জোরে কী আর পাহাড় নড়ে?
: রাগ কোরো না, বোন। এই ইতরপনা যারা প্রতিষ্ঠা করেছে তারাও সুযোগ পেলে আমাদের নিয়ে কম খেলে না। আমার বড় বোন ছিলেন তোমার মতো ভালো মেয়ে। আমার বিয়ের ছয় মাস আগে সে স্বামীর হাতে খুন হয়। দুলাভাই কীভাবে যেন আইনকে পাশ কাটিয়ে বিদেশে চলে যায়। আর এদিকে আমার বাবাও পেয়ে যান বেশ মোটা অঙ্কের টাকা। দুলাভাই এখন বেশ সুখী মানুষ। ইংলিশে অনার্স-মাস্টার্স করা স্ত্রীকে নিয়ে জাপানে স্থায়ী হয়েছেন।
: একজনের পাপের শাস্তি কী আরেকজনকে...।
স্বপ্নাকে থামিয়ে দিয়ে সবিতা বলে, না, না। ওভাবে বল না। পাপ-পুণ্য বিষয়টা বড়ই রহস্যময়। আমি শুধু আমার মনটাকে আনন্দ দিতে চেষ্টা করছি। প্রকৃতির সাথে গোঁজামিলের খেলা আমি খেলি না। এরই মধ্যে দুলাভাই আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। মাস দু-একের মধ্যেই দেশে আসবেন। গায়ের জোর তো আমার এত নেই। ক্ষমতার জোর আর টাকার জোর? বয়েই গেছে। তাই দেহের ফাঁদে ফেলে আমি ওকে দেখে নিতে চাই। তখন আমার শিবেনের পালা শেষ হবে।
স্বপ্না কটু হাসিতে জবাব দেয়, বেশ ভালো। আপনার খেলার কৌশল অতি উত্তম। তবে আমি যতটুকু বুঝি, প্রত্যেক মানুষ তার নিজের মতো। এই মানুষের সাথে আপস করেই সুন্দর স্বপ্ন তৈরি করতে হয়। একরোখা গন্ডার চারদিকে দেখে না।
: হয়তো তোমার কথাই সত্যি। তবে ওই পথ আমার নয়। কারণ আমি জানি, এই আপসের প্রয়োজন একদিন আমারও হতে পারে। তখন এই দরদটুকু আমি কারও কাছেই পাব না।
: পাবেন না, তা কী করে বুঝলেন? এই যে আপনার একটু ইশারায় দুই ভাইয়ে কেমন খুনোখুনি! প্রয়োজনে একটু দরদই শুধু নয়। এর চেয়ে অনেক বড় কিছুও সম্ভব।
এবার সবিতা রহস্যময় ভঙ্গিতে হা হা করে হেসে ওঠে।
: না, এ কথার জবাব আর আমি দেব না। জীবন তোমাকে একদিন দেবে এর জবাব। এই দেখো, কেবল নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। আচ্ছা স্বপ্না, নীরেনের সাথে কি তোমার কোনো যোগাযোগ আছে? পুলিশ তো ওকে খুঁজছে।
স্বপ্নাও হাসতে হাসতে বলে, অনেক বড় মামলা হয়েছে। পুলিশ খুঁজবেই। আর বাংলাদেশের পুলিশ ওকে এ দেশের ভেতরেই তো খুঁজবে। বাইরে গিয়ে তো আর খুঁজবে না। হ্যাঁ, নীরেনের সাথে আমার যোগাযোগ খুব ভালো করেই আছে।
সবিতার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক, ও, তাই বুঝি?
: হ্যাঁ। সত্যি বলতে কী, ওর খুব বড় একটা সংবাদ নিয়েই এসেছিলাম। তবে এখন দেখছি এ বাড়িতে নীরেনের সংবাদটুকু ধারণ করার যোগ্যতা কেউ রাখে না। আজ আসি। শুভকামনা রইল। আপনারা ভালো থাকবেন।
: একি, চলে যাচ্ছ, স্বপ্না?
স্বপ্না কোনো জবাব দেয় না। দ্রুতপদে হেঁটে গিয়ে বটতলার মোড়ে দাঁড়ানো গাড়িতে ওঠে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মেঠো পথে ধুলো উড়িয়ে গাড়িটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
...
ইসহাক হাফিজ: সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
ইমেইল: <[email protected]>, ফেসবুক: <Ishaque Hafiz>