ফিরে যাওয়া

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

উফ আস্তে, ব্যথা লাগছে তো।

: সরি, আর একটু, এই তো হয়ে গেল।

: এই ছোট একটা ব্যান্ডেজ করতে আপনার এই অবস্থা? আসলে এখানে আপনার মনোযোগ নেই। বলল লুবানা, কঠিন দৃষ্টিতে সোহানের দিকে তাকিয়ে।

লুবানা আপেল কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে ফেলেছে, একটু বেশিই কেটেছে।

: তোমার কি মনোযোগ ছিল কাজে? থাকলে এভাবে কেউ আঙুল কাটে। বলল সোহান, লুবানার আঙুল ব্যান্ডেজ করতে করতে।

: আমার মন কোথায় ছিল তা নিয়ে আপনার গবেষণা না করলেও চলবে।

সোহান প্রবাসে থাকে। এক মাসের ছুটিতে দেশে এসেছে। উঠেছে লুবানাদের বাসায়। আপন বলতে তেমন কেউ নেই। দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয় লুবানার মা। সেই সূত্রে একটা সময় লুবানাদের বাসায় থেকেই লেখাপড়া করেছে সে। পরবর্তীতে বিদেশ পাড়ি দেওয়া। দীর্ঘদিন পর দেশে আসা। লুবানার মা বেঁচে নেই। বাড়িতে শুধু কাজের ছেলে জামাল, লুবানা আর ওর অসুস্থ বাবা।

: আফা, আপনারে কঠিন করে এক কাপ চা বানাইয়া দেই। বলল কাজের ছেলে জামাল।

: না সহজ হলেই হবে। আজ আর অফিসে যাব না। শোন তোর ভাইজানের জন্য কফি।

জামাল চা বানাতে চলে যায় রান্না ঘরে।

: আচ্ছা লুবানা আজ কত তারিখ? প্রশ্ন সোহানের।

: ১০ তারিখ।

: মিথ্যে বলছ কেন? আজ ৮ তারিখ।

: আপনি জানেন তাহলে আবার প্রশ্ন কেন।

: তুমি অনেক বদলে গেছ লুবানা, আগে তো এভাবে কথা বলতে না?

: মানুষ নিজ থেকে বদলায় না। সময়, পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দেয়। আপনি কি আগের মতো আছেন?

সোহান কী বলবে উত্তর খুঁজে পায় না। শুধু মনে পড়ে সেই আট তারিখের কথা। যেদিন এই বাসা ছেড়ে গিয়েছিল আর যোগাযোগ হয়নি লুবানাদের সঙ্গে। ভাবতেই লজ্জা লাগছে। নিজেকে স্বার্থপর মনে হচ্ছে। যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছিল একসময়। একটি বারের জন্য খোঁজ নেয়নি তাদের! এত দিন পর এই মানুষগুলোকেই কেমন যেন অপরিচিত মনে হচ্ছে। দীর্ঘদিন যোগাযোগ না থাকলে হয়তো এমনি হয়। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। মানুষ সবচেয়ে বেশি একা হয় যখন সে নিজের বিবেকের কাছে হেরে যায়। সোহানও আজ নিজের বিবেকের কাছে পরাজিত।

জামাল চা নিয়ে আসে। আফা, এই নেন চা, আর ভাইজানের জন্য কফি।

: তোর কঠিন চায়ে তো চিনি হয় নাই। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল লুবানা।

: আফা আমি তো গুনে গুনে তিন চামচ চিনি দিছি। মনে হয় চিনি দুই নম্বর, ভেজাল। আজকাল তো সবকিছুতেই ভেজাল। সবচেয়ে বেশি ভেজাল মাইনসের মধ্যেই। কি আফা ঠিক বলি নাই?

: চুপ কর। এত কথা বলস কেন!

: আফা, গরিব মাইনসের কিছুই নাই কথা ছাড়া। আফনে কাউরে একটা কথা জিগান দেখবেন আপনেরে দশটা কথা শুনাইয়া দিব। আমরা দিন রাইত কথার মধ্যেই ডুইবা থাকি। কথা বইলা শান্তি পাই।

জামাল ছেলেটা কথা বলে বেশি। তবে কাজে ফাঁকি দেয় না। লুবানা অফিসে থাকলে এই ছেলেটাই তার অসুস্থ বাবাকে দেখে। এমন বিশ্বাসী কাজের লোক আজকাল পাওয়া যায় না।

লুবানা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। আজ কাটা আঙুল নিয়েই তাকে অফিস যেতে হচ্ছে। না গেলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। একদিনেই অনেক কাজ জমা পড়ে যাবে হয়তো। আচ্ছা সত্যি কী কাজের জন্য যাচ্ছে নাকি সোহানের কাছ থেকে পালাতে চাইছে। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে। অন্যের কাছ থেকে পালিয়ে মানুষ বাঁচে কিন্তু নিজের কাছ থেকে কী পালানো যায়?

উফ লুবানা এসব আর ভাবতে চায় না। ঢাকা শহরের জ্যামের মতো ভাবনাগুলো মাথায় জ্যাম হয়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে অফিসে গিয়ে কাজের মধ্যে ডুবে গেলে ভালো হবে। লুবানা পা বাড়ায় অফিসের পথে।

দুই.

: লুবানা এই লুবানা।

পেছন ফিরে তাকাল লুবানা, বুঝতে পারল না কে ডাকছে।

: কীরে শুনতে পাস না? বলে মিতু। লুবানার স্কুলজীবনের বান্ধবী মিতু।

: ও তুই! রাস্তায় এত মানুষের ভিড়ে বুঝতে পারিনি।

: কোথায় যাস?

: মঙ্গল গ্রহে।

: রেগে আছিস কেন?

: অবান্তর প্রশ্ন ভালো লাগছে না, দেখতেই পাচ্ছিস অফিস যাচ্ছি।

: অফিসের গাড়ি কোথায়?

: আজ বাসে করেই যাব।

: হুম তোর কোনো কারণে মন খারাপ। দেখে তাই মনে হচ্ছে।

: তুই কোথায় যাচ্ছিস প্রশ্ন লুবানার?

: শামীম ভাইদের বাসায় বলল মিতু।

: কোন শামীম?

: তোর শা-মী-ম, লল।

: সে আবার আমার হলো কবে?

: শোন লুবানা, শামীম ভাই সব সময় তোরই ছিল। তুই না সোহান ভাইকে ধরতে গিয়ে তাকে পাত্তা দিলি না।

: হুম।

: কী হুম?

: সোহান ভাই এখন দেশে, আমাদের বাসায় উঠেছে। থাকবে এক মাস।

: বলিস কী! কবে এল? আমি হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। বিয়ের আসরে তোকে রেখে কীভাবে পালিয়ে গেল তুই ভুলে গেছিস?

: না ভুলিনি।

: তাহলে।

: ক্ষমা করে দিয়েছি।

: ওরে আমার ক্ষমা কন্যারে।

: শোন বাস এসে গেছে। রাতে ফোনে কথা হবে। যাই।

ওকে বলে, মিতু চলে গেল ওর গন্তব্যে।

এ মুহূর্তে লুবানার অফিস যেতে ইচ্ছে করছে না। মনস্থির করেই ফেলল, না আজ আর অফিস যাবে না। আচ্ছা শামীমদের বাসায় গেলে কেমন হয়। মিতু তো ওখানেই গেল। দুজনেই চমকে যাবে অফিস বাদ দিয়ে ওদের বাসায় গেলে। না থাক আজ উদ্দেশ্যহীনভাবে একা একা ঘুরবে।

: এই যে কন্যা। ডাকল শামীম।

আরে শামীম না? শামীমই তো! আশ্চর্য ও এখানে। মিতু তোমাদের বাসায় গেছে বলল লুবানা।

: জানি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী ভাবছ? আসো গাড়িতে ওঠো।

লুবানা বুঝতে পারছিল না যাবে কী যাবে না। দ্বিধান্বিত। অথচ একটু আগে ওর কথাই ভাবছিল।

তিন.

: আচ্ছা, মেয়েদের ঠোঁটে তিল থাকলে কী হয়?

হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যায় লুবানা। বিরক্তির সঙ্গে বলে জানি না।

: তুমি কি ভাবছ আমি তোমাকে kiss করব? বলল শামীম।

: আমি কিছুই ভাবছি না, গাড়ি থামাও।

: কেন? নেমে যাবে?

: হুম।

হো হো করে অট্টহাসি হাসতে থাকে শামীম। প্রাণ খোলা হাসি। অদ্ভুত সুন্দর। লুবানা অপলক তাকিয়ে থাকে। ছেলেদের হাসি এত সুন্দর আগে কখনো খেয়াল করেনি। ওর সঙ্গে আসতে চায়নি। একপ্রকার জোর করেই শামীম তাকে গাড়িতে তুলেছে।

: শোন, মেয়েদের শরীরে কোথায় তিল থাকলে কী হয় ম্যাগাজিনে লিখেছে, নাও পড়ে দেখ।

: এই সব ফালতু বিষয় পড়ার কোনো ইচ্ছা নেই। লুবানা অকপট রাগ দেখাল। তারপর বলল, আমরা কোথায় যাচ্ছি?

: আমাদের বাসায়। মা অপেক্ষা করছে।

সামনে মনে হয় জ্যাম। আজ শামীমের বিরক্ত লাগছে না। অন্যদিন একটু জ্যামে পড়লেই অসহ্য লাগে। এ মুহূর্তে ভালোই লাগছে। প্রিয়জন পাশে থাকলে সবকিছুই ভালো লাগে।

: লুবানা, তুমি কি আমার হাতটা একটু ধরবে?

: না।

: আচ্ছা।

: কী আচ্ছা? দাও, তবে যতক্ষণ জ্যাম শুধু ততক্ষণ।

: সে কী তোমার আঙুল কেটেছে কীভাবে? থাক হাত ধরা লাগবে না। ব্যথা পাবে। তুমি ব্যথা পেলে বরং আমিই কষ্ট পাব বেশি।

জ্যাম শেষে গাড়ি ছুটে চলেছে বেশ স্পিডে। গাড়ির জানালা খোলা। বাতাসে উড়ছে লুবানার চুল। শাড়ির আঁচল খসে গিয়ে খানিকটা খোলা বুক দেখা যাচ্ছে। মায়াবতী এই মেয়েটিকে শামীমের কাছে এই মুহূর্তে রাজকন্যা মনে হচ্ছে। যেন রাজ্য জয়ের শেষে রাজকন্যাকে নিয়ে ছুটে চলেছে অজানা কোনো স্বর্গপুরীতে।

চার.

মায়ের মমতার চেয়ে মূল্যবান আর কিছু নেই। যাদের মা নেই তারা এই বিষয়টা সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করেন। মায়েরা বুঝি এমনি হয়। তাদের সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে সুখে রাখেন। নিজে কষ্টে ডুবলেও সন্তানকে যেন কষ্ট স্পর্শ করতে না পারে সে চেষ্টা করে সর্বক্ষণ। লুবানার তাই মনে হলো।

অসুস্থ শরীর নিয়েও শামীমের মা লুবানার পছন্দের অনেক খাবার রান্না করেছেন। এই বাসায় লুবানা অনেকবার এসেছে। কখনো না খেয়ে যেতে পারেনি। যতক্ষণ খালাম্মার সঙ্গে থাকে মনে হয় এ যেন সুখের রাজ্য।

: অনেক দিন থেকেই তোমাকে একটা কথা বলব ভাবছি। বলা হয়ে ওঠে না। আজ বলব মা। অবশ্য শামীমের বাবা দেশে থাকলে তিনিই তোমার বাবাকে বলতেন।

: জি বলেন খালাম্মা।

: আমি চাই তুমি আমাদের পরিবারের একজন সদস্য হও। আমি মনে হয় বেশি দিন বাঁচব না। অ্যাজমা আমাকে কাবু করে ফেলেছে। এই ভালো এই খারাপ। তুমি কী বল? তুমি চাইলে আগামী সপ্তাহে তোমাদের বাসায় যাব। তোমার বাবাকে বলব।

লুবানা লজ্জা পাচ্ছে, আবার কান্নাও পাচ্ছে নিজের মায়ের কথা মনে করে। মাথা নিচু করে চুপ করে আছে, কিছুই বলছে না।

: কী মা, কিছু বলছ না যে, আচ্ছা মিতু তুমি কী বল?

: খালাম্মা আমার মনে হয় শামীম ভাইয়ের সঙ্গে লুবানার বিয়ে হলে ওরা হবে সবচেয়ে সুখী কাপল হবে।

: আলহামদুলিল্লাহ, শামীম বাবা, আলমিরার ওপরে নীল রঙের প্যাকেটটা আছে নিয়ে আয়তো।

: এখানে তো দুটো প্যাকেট, কোনটার কথা বলছ মা?

: আচ্ছা, দুটোই নিয়ে আয়।

: লুবানা প্যাকেট খুলে দেখো তো তোমার কোনটা পছন্দ।

: আপনার যেটা পছন্দ। বলল লুবানা। আর মনে মনে ভাবছিল এটা তো শুধু একটা রিং নয় এর সঙ্গে একজন মায়ের মমতা, আশীর্বাদও জড়িয়ে আছে।

: তোমরা গল্প কর। আমি আসরের নামাজটা পড়ে আসি।

মিতু খুব খুশি। কী শামীম ভাই, আগে থেকেই কি সব প্ল্যান করে রেখেছিলেন?

: মোটেও না। মা আমাকে কিছুই বলেননি।

: থাক হয়েছে। আমি যাই, কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না।

: আরে থাক না, এক সাথে যাব বলল লুবানা।

: শোন, তোমাদের দুজনকে আজ আমিই বাসায় পৌঁছে দেব। আরেকটু বস আম্মার নামাজ পড়া শেষ হোক।

: থ্যাংকস, না আমি যাই দেরি হয়ে যাবে। এই বলে মিতু চলে গেল।

: লুবানা।

: হুম।

: কাছে এসে বসো, খুব কাছে। এখন তো একটা kiss দিয়েই পারি, তাই না? মাতো আগামী সপ্তাহে তোমাদের বাসায় যাচ্ছেই।

: কী যে কর না, পাগল হলে নাকি।

: শোন, পতঙ্গ যেভাবে আগুনে ঝাঁপ দেয় আমি দিয়েছি তোমার প্রেমে। তোমায় পেলে জীবন সার্থক, না পেলে পুড়ে ছাই হব আমি।

: ওই যে খালাম্মা আসছে, আমি এখন যাব। বলল লুবানা।

: ওকে মা। তোমার বাবার সাথে কাল কথা বলব। শামীম ওকে পৌঁছে দিয়ে আয় বাবা। দেরি করিস না।

পাঁচ.

লুবানাকে গেটে নামিয়ে দেয় শামীম। বাসায় ঢুকতেই কাজের ছেলে জামাল এসে বলল, আফনেরে কতবার ফোন করেছি ধরেন নাই ক্যান আফা?

: কেন কী হয়েছে?

: খালুজান বলছে আপনি আসলেই যেন ওনার রুমে যান।

: ও আচ্ছা, সোহান ভাই কোথায়?

: উনি তো সকালে বাইর হইছেন, দুপুরে বাসায় আইসা খাইয়া আবার বাইর হইছেন।

: বাবা, তোমার কি ওষুধ শেষ হয়ে গেছে? রুমে প্রবেশ করেই লুবানা জিজ্ঞেস করল।

: না, তুই একটু আমার কাছে বস মা।

: কিছু বলবে?

: হুম, সোহান তোর জন্য এই ডায়মন্ডের রিং এনেছে। তোকে বলতে সাহস পায়নি তাই আমাকে দিয়েছে আমি যেন তোকে দেই।

: কিন্তু বাবা, যে আমাকে বিয়ের আসরে রেখে পালিয়ে গেল, এত দিন পর ফিরে এসে বলল বিয়ে করবে সেটা সে কী করে ভাবল! আমার স্বপ্ন, ভালোবাসা, আমার সামাজিক মর্যাদা, আত্মসম্মান যা হারিয়েছি তা কি সে ফেরত দিতে পারবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি তার অর্থ এই নয় সে চাইলেই আমি তাকে বিয়ে করতে রাজি।

: ও তোকে ফেলে পালিয়ে যায়নি। আমিই ওকে চলে যেতে বলেছিলাম। আমার মনে হয়েছিল ও তোর যোগ্য নয়। একটা এতিম, পরের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ছেলেকে আমি মেয়ের জামাই হিসেবে মেনে নিতে পারছিলাম না। তোর মা ব্যাপারটা জানত। আমি বিরাট ভুল করেছি মা। সোহান সত্যি একটা ভালো ছেলে আমি বুঝতে পারিনি। আমিই ওর বিদেশের ঠিকানা সংগ্রহ করে চিঠি লিখে আসতে বলেছি এখানে।

: কী বলছ বাবা! চুপ কর তুমি। এত বড় সত্যটা তুমি গোপন করতে পারলে। উফ আমি ভাবতে পারছি না।

লুবানার বুকে যেন পাথর চেপে বসেছে। মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে। কী শুনছে এসব। এখন সে কী করবে, শামীমকে সে কী বলবে। আর সোহান ভাই তার সামনেই বা কোন মুখে দাঁড়াবে।

লুবানা কাঁদছে। মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। মা থাকলে ভালো হতো। এ মুহূর্তে মাকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছে।

আজ সকালটা অন্যরকম সোহানের কাছে। মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা মানুষ সারা জীবনেও ভুলতে পারে না। এমন একটি সময় আসবে সোহানের জানা ছিল না।

: আমাকে কি এক কাপ কফি দেওয়া যাবে লুবানা?

: হ্যাঁ।

: আচ্ছা, বিয়ের শাড়ির রং লাল না হয়ে নীল হলে কেমন হয়? এবার কিন্তু তোমাকে বিয়ের আসরে রেখে পালিয়ে যাব না।

: হুম।

: তোমার কি রিং পছন্দ হয়েছে?

: হুম।

: কী হুম হুম করছে সেই কখন থেকে।

সোহান দেখছে লুবানার চোখে তার জন্য কোনো আকুতি নেই, দুজন মানুষের এক হওয়ার যে আনন্দ তা তার চোখে নেই বরং সেখানে অন্য কেউ।

: তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ কর?

: জানি না।

: কিন্তু আমি জানি, তুমি শামীমকে ভালোবাস। শামীমের সাথে আমার কথা হয়েছে গতকাল। এতক্ষণ তোমাকে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হলো দেখতে চাইছিলাম আমার জন্য তোমার মনে জায়গা আছে কিনা। দেখলাম নেই।

: আপনি শামীমকে কীভাবে চেনেন। একটু অবাক হয়ে লুবানা প্রশ্ন করে?

: আমার বন্ধু সিফাত আর শামীম একই অফিসে চাকরি করে। সিফাতই আমাকে কিছুটা বলেছে আর গতকাল শামীম যখন তোমাকে নামিয়ে দিতে আসল তখন গেটে ওর সাথে আমার দেখা এবং সব জানলাম। শোনো, মায়াবতী কন্যা, একটু পর আমি সিফাতের বাসায় চলে যাব। কিছু কাজ আছে। শেষ করে দুদিন পর উড়াল দেব প্রবাসে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এক মাসের ছুটিতে এসেছিলাম। সব স্বপ্ন কী পূরণ হয় বল? আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমার বাবার ওপর। রিংটা থাক তোমাদের বিয়ের উপহার হিসেবে।

: আচ্ছা আমার বিয়ে পর্যন্ত থেকে গেলে হয় না সোহান ভাই। কফি বানাতে বানাতে লুবানা বলল?

: না, এতে আমার আরও কষ্ট হবে। বরং চলে যাওয়াটাই ভালো হবে। দাও, চমৎকার হয়েছে। কফি শেষ করেই যাওয়ার পথে পা বাড়ায় সোহান।

সোহান ভাইয়ের জন্য বুকের গভীরে কোথায় যেন টান অনুভব করছে লুবানা। কিছু কথা থাকে একেবারে নিজস্ব, একান্ত যা কাউকে বলা যায় না। যে মানুষটাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেছে এখন যাওয়ার বেলায় তার জন্য মন কেমন করে উঠছে। সে শুধু দিয়ে গেল, নিল না তো কিছুই। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে সেই সঙ্গে লুবানার দুই চোখ থেকেও ঝরছে বৃষ্টি, সোহান ভাইয়ের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে।
...

এম আর ফারজানা: নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।