কানাডায় বরফের নদীতে বিনোদন
পুরো কানাডা এই বছর শীতে জবুথবু। বড় বড় শহরের তাপমাত্রা চলে গেছে হিমাঙ্কের নিচে ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রিতে। কিন্তু এই ঠান্ডায় থেমে নেই মানুষের ঘোরাঘুরি। চলছে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন। এই দেশে উইন্টার স্পোর্টস খুব জনপ্রিয়। কানাডায় শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় মানুষ উইন্টার স্পোর্টসগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। শীতের ভয়ে কানাডার মানুষ ঘরে বসে থাকে না। এখানকার বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কগুলো মানুষকে শীতের বিনোদন দিতে ব্যস্ত।
এমনকি মানুষ বরফের নদীতে ক্যাম্পেইন করতে বেড়ায়। কয়েক দিন তাঁবু গেড়ে বরফের নদীতে কাটিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, কানাডার অধিকাংশ নদী এখন বরফে ঢাকা। মানুষের বিনোদনের জন্য নদীগুলোকে বিশেষভাবে রোলার করে নিরাপদ করা হয়। শুধু নদীগুলোই না, বিভিন্ন পার্কের লেকগুলোকে স্কেটিং, আইস হকি ও সাইক্লিং করার উপযুক্ত করে তোলা হয়।
কানাডার শীতের খেলাগুলো প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশিদের মাঝে তেমন একটা জনপ্রিয় না হলেও দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিরা এসব গেমের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কারণ তারা স্কুলে এসব খেলা খেলে থাকে এবং আস্তে আস্তে তারা শীতসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।
কানাডার মানুষের কাছে এমন একটি প্রিয় জায়গা ম্যানিটোবা প্রভিন্সের ফরকস। এটি রেড রিভার আর এসিনোবয়েন নদীর মিলনস্থল। রেড রিভার কানাডা ও আমেরিকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। দুই দেশ মিলে নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৮৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে এসিনোবয়েন নদীর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার।
রেড রিভার ও এসিনোবয়েন নদীর মিলনস্থল ফরকস। এখানে এ বছর সাড়ে আট কিলোমিটার স্নো ট্রেইল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা থাকার কারণে নদীর উপরিভাগের পানি বরফ হয়ে যায়। তার ওপর রোলার চালিয়ে স্নো ট্রেইল করা হয়েছে।
প্রচণ্ড ঠান্ডার মাঝে নদীতে মানুষ হাঁটে, দৌড়ায়, সাইকেল চালায়, স্কেটিং, আইস হকি ও কুকুর দিয়ে স্লেজ বানিয়ে ছুটে চলে। অনেকে গাড়ি নদীর মাঝে পার্কিং করে। কেউ বরফের মাঝে গর্ত করে মাছ ধরে। নদীতে অস্থায়ীভাবে বানানো হয়েছে রেস্তোরাঁ। তাঁবু দিয়ে বানানো এই রেস্তোরাঁয় রয়েছে আধুনিক হিটিংয়ের ব্যবস্থা।
কারও ঠান্ডা লাগলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীর গরম করার বিশেষ ঘর রয়েছে। কিছু দূর পরপর বসানো হয়েছে পোর্টেবল ওয়াশ রুম। নদীতে বানানো হয়েছে বরফের ঘর। এমনকি টবে করে লাগানো হয়েছে শীতসহিষ্ণু গাছ। রাতে এই ট্রেইলজুড়ে থাকে নয়নাভিরাম আলোকসজ্জা।
নিরাপত্তাকর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সেই সঙ্গে প্রস্তুত থাকে রেসকিউ টিম। প্রতিবছর এই স্নো ট্রেইল দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন। ফরকস কানাডীয়দের কাছে একটি ঐতিহাসিক জায়গা। আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে এখানকার আদিবাসীদের মিটিংয়ের জায়গা ছিল এটি।
পরে কলোনিয়াল যুগে ব্রিটিশরা এখানে মিটিং করত। ১৯৭৪ সালে কানাডীয় সরকার জায়গাটিকে জাতীয় ঐতিহাসিক জায়গা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
লেখকের ই-মেইল: <[email protected]>