এথেন্সে নির্মিত হবে স্থায়ী শহীদ মিনার

অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ
অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুমুদ্রু পার্কে অচিরেই নির্মিত হবে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার। এথেন্স মিউনিসিপ্যালের কর্তৃপক্ষ কুমুদ্রু পার্কে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। এথেন্সে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সমবেত প্রবাসীদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন।

অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ
অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ

গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসীদের উদ্যোগে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন এথেন্স শহরের কুমুদ্রু পার্কে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমবেত কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সমগ্র কুমুদ্রু পার্কে অনুরণিত হয়। এরপর গ্রিসের বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জেলাভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। কুমুদ্রু পার্কে রাত ১২টার সময় শত শত বাংলাদেশির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পার্কে বয়ে আনে এক প্রাণচঞ্চল পরিবেশ।

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এথেন্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার পর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের উত্তরোত্তর উন্নয়ন কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই মহান ভাষা আন্দোলনবিষয়ক ও দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশিত হয়।

আলোচনা সভা
আলোচনা সভা

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রেরিত বাণী যথাক্রমে পাঠ করেন রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন, কাউন্সেলর মো. খালেদ, কাউন্সেলর ড. সৈয়দা ফারহানা নুর চৌধুরী ও প্রথম সচিব সুজন দেবনাথ।

এ বছর এথেন্সে প্রবাসীদের অনুরোধে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাপ্তাহিক ছুটির দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার আয়োজন করা হয়। এ দিন বিকেলে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে দূতাবাসের আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রথমে ভাষাশহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর অমর একুশের তাৎপর্যের ওপর একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।

বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জসীম উদ্দিন
বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জসীম উদ্দিন

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা মহান একুশের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার কাজে একযোগে কাজ করার ওপর জোর দেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অমূল্য ভূমিকা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির উদ্যোগে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ ও ঐকান্তিক উদ্যোগের ফসল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর শতাধিক দেশ পালন করছে। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যের ওপর জোর দেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

এরপর বাংলাদেশ দূতাবাস পরিবার, এথেন্সের দোয়েল একাডেমি, বাংলা-গ্রিক শিক্ষাকেন্দ্র ও দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একুশের কবিতা, ছড়া, আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত পরিবেশিত হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দূতাবাস কর্তৃক গত বছর নির্মিত ইংরেজি গান ‘It’s Mother Language Day’-এর ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। গানটির গীতিকার ও সমন্বয়কারী সুজন দেবনাথ। সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন গ্রিক শিল্পী স্টার পাপাচারে। গ্রিক শিল্পীর সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন নিবেদিতা নাথ, ক্রিস মারাগোডাকিস ও জো মাইলোগ। গানটির পৃষ্ঠপোষকতা করেন রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন। মহান একুশের অনুষ্ঠানে দূতাবাসে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি এথেন্স মিউনিসিপ্যালের এক সভায় কুমুদ্রু পার্কে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এথেন্সে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে দূতাবাসের একটি দল এথেন্সের মেয়র জর্জিয়াস কামিনিসের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রদূত এথেন্সে একটি শহীদ মিনার স্থাপনের প্রস্তাব করেন। বৈঠকে রাষ্ট্রদূত মেয়রকে শহীদ মিনারের একটি প্রতিকৃতি উপহার দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন। এরপর দূতাবাস থেকে এথেন্সের কুমুদ্রু পার্কে একটি শহীদ মিনার স্থাপনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবসংবলিত একটি পত্র প্রেরণ করা হয়। অবশেষে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এথেন্স মিউনিসিপ্যালটি দূতাবাসের প্রস্তাব অনুমোদন করে। বিজ্ঞপ্তি

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান