প্রবাসে দেশ ও মাতৃভাষার জন্য আকুল মায়া

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোলিশ নাগরিকেরা
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পোলিশ নাগরিকেরা

প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি থেকে ৬ হাজার ৬৮১ কিলোমিটার দূরে এসে এই প্রথমবারের মতো খুবই বিমর্ষ ছিলাম। এই ভেবে ১১ বছরের বাচ্চাটাকে নিয়ে এবার হয়তো আর মহান ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ হয়ে উঠবে না। আদরের মেয়েটা আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলল, বাবা মন খারাপ কোরো না। আমরা অনলাইনে শহীদ মিনার দেখব আর একসঙ্গে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গান গেয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাব।

দেশ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে, মায়ের ভাষার মর্যাদার জন্য, ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগটা হঠাৎ করেই পেয়ে গেলাম ওয়ারশের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে। প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান অনির্বাণ নিয়োগী কর্তৃক এক ই–মেইল হঠাৎ করেই আমার ইনবক্সে এসে হাজির। যেখানে সপরিবারে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সমবেত স্বরে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গান গেয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য।

আলোচনা সভায় উপস্থিতি
আলোচনা সভায় উপস্থিতি

দেশের জন্য, ভাষার জন্য কী আকুল মায়া থাকতে পারে তা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি ভাই আর বোনদের বিভিন্ন স্বতঃস্ফূর্ত কর্মকাণ্ড না দেখলে বোঝা যেত না। এক ভাই কোনো দিন কবিতা আবৃত্তি করেননি। তাঁর আবেগময় কবিতা পাঠ শুনে মনে হলো, আসাদুজ্জামান নূরও হয়তো এত ভালো আবৃত্তি করতে পারতেন না। অনেক দিন পর একজন সুবক্তার মুগ্ধ করার মতো বক্তব্য শুনলাম পোল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব রহমানের কাছ থেকে। গঠনমূলক, তথ্যবহুল আর শরীরের লোম দাঁড়া করিয়ে দেওয়ার মতো কথা তিনি সমবেত বাংলাদেশি আর ভিনদেশিদের শোনালেন, বাংলা ভাষা আর এর মর্যাদা নিয়ে।

মনে রাখার মতো করে পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অনির্বাণ নিয়োগী। কর্মসূচিতে ছিল অমর একুশের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে থেকে কয়েকজনের কবিতা আবৃত্তি। মোমবাতি প্রজ্বালন। এ ছাড়া সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গান গেয়ে দূতাবাসে অস্থায়ী শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন দূতাবাসের কর্মকর্তা, প্রবাসী বাঙালি ও পোলিশ নাগরিকেরা। পোল্যান্ডের হিমাঙ্কের নিচে ঠান্ডার মধ্যে কিছু সময়ের জন্য উষ্ণতা এনে দেয় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আর সবার একসঙ্গে গেয়ে ওঠা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান।

শহীদ মিনারে লেখকের মেয়ে
শহীদ মিনারে লেখকের মেয়ে

প্রবাসজীবনে পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো যথাযথভাবে পালন করতে, মায়ের ভাষার প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা প্রকাশে, ভাষাশহীদদের প্রতি মর্যাদা আর শ্রদ্ধা প্রকাশ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতার পক্ষের বর্তমান সরকার আর দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ।