ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইউকের সাধারণ সভা

হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিমের সঙ্গে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা
হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিমের সঙ্গে নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা

আনন্দঘন পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইউকের প্রথম দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ব্যারিস্টার আনিস রহমান ওবিইকে সভাপতি ও মোহাম্মদ আবদুর রকীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের একটি হলে দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক ব্যারিস্টার আনিস রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মারুফ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিম।

বক্তব্য দিচ্ছেন সাদিয়া মুনা তাসনিম
বক্তব্য দিচ্ছেন সাদিয়া মুনা তাসনিম

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আলোচনা। তানভীর আহমেদ ও কিশোয়ারা মুনিয়ার উপস্থাপনায় আলোচনার শুরুতে ভাষাশহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। একুশের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাবিব রহমান, দেওয়ান গৌস সুলতান, আবু মুসা হাসান ও ড. মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। আলোচকেরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁরা ভাষা দিবসের তাৎপর্য, শোকের একুশ থেকে বর্তমানে অহংকারের একুশে পদার্পণের ইতিহাস এবং ঢাকায় একুশ উদযাপনের স্মৃতি তুলে ধরেন। এখানকার নতুন প্রজন্ম ও কমিউনিটির অন্য ভাষার মানুষের কাছে ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাঁরা প্রভাতফেরি সকালে করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। সংগঠনের সদস্যদের ছেলেমেয়েরা একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গাওয়ার সময় ভাষা দিবসের বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।

সভাপতি আনিস রহমান
সভাপতি আনিস রহমান

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আনিস রহমানের সূচনা বক্তব্যের পর সাধারণ সম্পাদক মারুফ চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আবুল কালাম গত দুই বছরের রিপোর্ট পেশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে এসে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বারবার গর্জে উঠেছেন। পঞ্চাশের দশকে মায়ের ভাষা রক্ষার আন্দোলন আমাদের পূর্বসূরিদের আত্মদান বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষার জন্য প্রেরণা জোগাচ্ছে। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলা নামের একটি আলাদা রাষ্ট্রের যে কোনো বিকল্প নেই, বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই প্রথম তা জানান দেন। ওই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে নিজের স্থান করে নেয়।

সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকীব
সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকীব

সাইদা মুনা তাসনিম আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইয়ের সদস্যরা নিজেদের সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রবাসে বাংলাদেশকে আরও উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। অ্যালামনাইয়ের সৃজনশীল কাজে হাইকমিশন পাশে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আনিস রহমান তাঁর বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে গত দুই বছর অ্যালামনাই ইউকে কী কী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, তা বিস্তারিত তুলে ধরেন।

বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মারুফ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই গঠনের তাগিদ দীর্ঘদিন অনুভূত হচ্ছিল। তারই ফলে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর আমরা প্রথম সভা করি। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে অসাম্প্রদায়িক, অরাজনৈতিক ও অলাভজনক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইউকের সদস্য ২৯২ জন। আমাদের একটিই পরিচয়, আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।’ মারুফ চৌধুরী আরও উল্লেখ করেন, ‘শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধ ও পুনর্মিলনী করাই এই সংগঠনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন বৃত্তি দেব।’

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

এই পর্বে আরও বক্তব্য দেন অ্যালামনাই শাহগীর বখ্ত ফারুক, মুহাম্মদ আবদুর রকীব, সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক, চৌধুরী হাফিজুর রহমান, মাহেরুন আহমেদ মালা প্রমুখ।

আলোচনা শেষে ২০১৯-২১ সালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইউকের ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হাবিব রহমান, মোহাম্মদ আবদুল হান্নান ও আমিরুল ইসলাম চৌধুরী।

নতুন কমিটিতে ব্যারিস্টার আনিস রহমান ওবিইকে সভাপতি ও মুহাম্মদ আবদুর রকীব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান গৌস সুলতান। অপর তিন সহসভাপতি হলেন ইসমাইল হোসাইন, অজয় রায় রতন ও সিরাজুল বাসিত চৌধুরী। যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন বিধান গোস্বামী, সলিসিটার সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল ও ব্যারিস্টার হাফিজুর রহমান। কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ হামিদুল হক। যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ দুজন হলেন ফখরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান। দপ্তর সম্পাদক হলেন ব্যারিস্টার কাজী আশিকুর রহমান। তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন মেজবাহ উদ্দীন, প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ ও আবদুল মুকিত চৌধুরী। তানভীর আহমেদ সাংস্কৃতিক সম্পাদক, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সম্পাদক ও মাহারুন আহম্মেদ শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

ভাষা দিবসের আলোচনা করছেন আবু মুসা হাসান
ভাষা দিবসের আলোচনা করছেন আবু মুসা হাসান

কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন শাহাগীর বখত ফারুক, মারুফ আহমেদ চৌধুরী, সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, রিপা সুলতানা রকীব, সলিসিটার সোহেল আহমেদ, মির্জা আসাব বেগ, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আবুল কালাম, এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, সৈয়দ আনিসুজ্জামান, মোস্তফা কামাল মিলন, প্রদীপ মজুমদার, সলিসিটার মোহাম্মদ কামরুল হাসান, এ্যারিনা সিদ্দিকী, মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম ও ইউসুফ ইকবাল। তিনটি পদ খালি রয়েছে।

মধ্যাহ্নভোজের পর তানভীর আহমেদ ও এ্যারিনা সিদ্দিকী সুপ্রভার উপস্থাপনায় ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না, ওরা আসবে’ নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অধিকাংশ শিল্পীই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের সদস্য। সংগীত পরিবেশন করেন শুভ্রা মুস্তাফা, রিপা রকীব, সুমন শরীফ, নাদিয়া নিহাদ, ড. শ্যামল চৌধুরী, মোস্তফা কামাল মিলন, কে জি বি কনক, কাজী কল্পনা, তামান্না ইকবাল, নওরীন ও আনিকা। তানজিনা নূর ই সিদ্দিকীর কবিতা আবৃত্তি সবাইকে মুগ্ধতায় ভরে তোলে। দুটি নৃত্য পরিবেশন করেন মৌ। শুভ্রা মুস্তাফার গাওয়া ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ ও কে জি বি কনকের ‘দিন যায় কথা থাকে’ গান সবাইকে অতীত স্মৃতি রোমন্থনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ভাষা দিবসের বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড
ভাষা দিবসের বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দিনব্যাপী আনন্দ উল্লাসের মিলনমেলার শেষ পর্বে ছিল মুজাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় র‍্যাফেল ড্র। এতে অনেক আকর্ষণীয় পুরস্কার দেওয়া হয়।