ব্রাসিলিয়ায় দশ দেশের অংশগ্রহণে মাতৃভাষা দিবস

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের একাংশ
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের একাংশ

দক্ষিণ আমেরিকার অধিবাসীদের কাছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পরিচিত করে তোলার প্রয়াসে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় যথাযথ মর্যাদায় মহান ভাষাশহীদ দিবস পালন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন করেছে দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্রাজিল ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনকে সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির জাতীয় পাঠাগারের (Bibliotheca Nacional Brasilia-DF) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ইউনেসকো ব্রাজিল ও ব্রাসিলিয়ার ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টের সাংস্কৃতিক কার্যালয় বাংলাদেশ দূতাবাসে এ আয়োজনের সঙ্গে সহযোগিতা করে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অনুষ্ঠানে প্রায় তিন শ উচ্চপর্যায়ের অতিথি এক অনন্য বহুজাতিক সাংস্কৃতিক সমাবেশ প্রত্যক্ষ ও উপভোগ করেন। দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আরম্ভ হওয়া এ অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষাশহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান ও ইউনেসকো ব্রাজিলের পরিচালক ও প্রতিনিধি মিস মারলোভা জোভচেলোভিচ নোলেতো বক্তব্য দেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে ইউনেসকো ব্রাজিল ও ব্রাসিলিয়ার গভর্নরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। পর্তুগিজ ভাষায় প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের নিগূঢ় সম্পর্ক ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বাঙালি সত্তা ও চেতনার সঙ্গে শহীদ মিনারের আত্মিক সম্পর্কের উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ব্রাসিলিয়ায় একটি স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের এ উদ্যোগে ইতিমধ্যে ব্রাসিলিয়ার গভর্নরের কার্যালয় থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়া গিয়েছে। তিনি ব্রাসিলিয়ার গভর্নর ও ভাইস গভর্নরকে এ সময় তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

উল্লেখ্য, ২২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান ও ব্রাসিলিয়ার ভাইস গভর্নর পাকো ব্রিট্টোর মধ্যে এক বৈঠকে এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকায় সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

ব্রাজিলের রাজনৈতিক রাজধানী ব্রাসিলিয়ার পাশাপাশি দেশটির অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী সাও পাওলোতেও একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান। সাও পাওলোতে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ ব্রাজিলপ্রবাসী বাংলাদেশিদেরও প্রাণের দাবি। শহীদ মিনারটি বাংলাদেশকে ব্রাজিলের গণমানুষের কাছে তুলে ধরতে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে রাষ্ট্রদূত তাঁর বক্তব্যে আশা প্রকাশ করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন মারলোভা জোভচেলোভিচ নোলেতো
বক্তব্য দিচ্ছেন মারলোভা জোভচেলোভিচ নোলেতো

মারলোভা জোভচেলোভিচ নোলেতো তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ইউনেসকোর দীর্ঘ সুসম্পর্কের উল্লেখ করে পৃথিবীব্যাপী মাতৃভাষার গুরুত্ব ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ব্রাসিলিয়ায় প্রথমবারের মতো বহুজাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহান ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিস মারলোভা ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে একত্রে এই দিবস উদ্‌যাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দশটি ভিন্ন ভাষাভাষী দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এ বর্ণাঢ্য ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের শিল্পীরা ছাড়াও আর্জেন্টিনা, গ্রিস, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিসর, লেবানন ও স্পেনের প্রায় ৫০ জন শিল্পী সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী শিল্পীদের বৈচিত্র্যময় পরিবেশনা সমাগত অতিথিদের মোহিত করে।

উপস্থিতির একাংশ
উপস্থিতির একাংশ

দেশটির বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ছাড়াও ভারত, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, জ্যামাইকা, জাম্বিয়া, এল সালভাদরের রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১০০ জন কূটনীতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের এ আয়োজন ব্রাসিলিয়ার কূটনৈতিক মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। মিলনায়তন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে এবং শহীদ মিনার ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তথ্য–সংবলিত অণু পুস্তিকা বিতরণ করে। এ উগ্যোগ সমাগত অতিথিদের মাঝে বিপুল সাড়া জাগায়। ব্রাসিলিয়ায় স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনের পর আগামী বছর বাংলাদেশ দূতাবাস আরও বৃহত্তর পরিসরে মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন করবে। বিজ্ঞপ্তি