টরন্টোয় চবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একুশ পালন

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

‘ভাষার জন্য যাঁরা দিয়ে গেল প্রাণ, ভুলিনি আমরা, ভুলিনি আমরা...।’ সত্যিই আমরা ভুলতে পারিনি সেই বীরদের, যাঁরা অকাতরে প্রাণ করে গেছেন দান বাংলাকে মাতৃভাষা, বাংলাকে মুখের ভাষার মর্যাদা আদায়ের প্রয়াসে বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারি। শহীদের রক্তে রাঙা একুশ তাই তো এক গভীর অনুভূতির নাম...মনের গোপন মণিকোঠায় সদাজাগ্রত এক চেতনার নাম। সেই সতত জাগ্রত চেতনাকে বুকে ধারণ করে শহীদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা একুশের প্রথম প্রহরে টরন্টোয় অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছে।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

এ ছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার ডেনফোর্থের মিজান কমপ্লেক্সের হলরুমে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পড়ন্ত বিকেলের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে দূরদূরান্ত থেকে আগত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে। অল্পক্ষণের মধ্যেই হলরুম পরিণত হয় প্রাণের এক মিলনমেলায়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

সংগঠনের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় প্রথমেই বায়ান্নের শহীদের এবং সম্প্রতি ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ‘অ্যাকনলেজমেন্ট অব ল্যান্ড’ পাঠ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা সৈয়দ ফকরুদ্দীন। দুই দেশের জাতীয় সংগীতের মূর্ছনায় হলঘর ক্ষণিকের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় সমবেত সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব আলোচনা সভার। ‘একুশের চেতনা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, সংগঠক আমিন মিয়া ও সংগঠনের সদ্যবিদায়ী সভাপতি, নির্ভীক ও পরিশ্রমী নেতা সময় পাল।

একুশের প্রথম প্রহরে টরন্টোয় অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ
একুশের প্রথম প্রহরে টরন্টোয় অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ও নতুন প্রজন্মের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কানিজ ফাতেমা ও সিনিয়র সহসভাপতি অনুপ সেনগুপ্তের সঞ্চালনায় এই পর্বে ছিল দেশের গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাচ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আগত সব দর্শকের মন কেড়েছে। গানে অংশ নেন নতুন প্রজন্মের শিল্পী তিথি ভট্টাচার্য, অরুণিমা চক্রবর্তী, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, কাজী আরমানি ওয়ার্দা, সাদমান বুনন, অহনা চক্রবর্তী। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অংশ নেন মারুফ হোসেন, সুলতান নাহিদ খান সিরাজী, মেহজাবিন বিনতে ওসমানী, মুখটা পাল। অতিথি শিল্পী হিসেবে গান পরিবেশন করেন সংগীতা মুখার্জি। সমবেত সংগীতে অংশ নেন কানিজ, মাহমুদ, অনিতা পাল, সাজ্জাদ, হ‌ুমায়ুন, মেহজাবিন, সিরাজী, অনুপ ও আবদুল বাসিত। আবৃত্তিতে অংশ নেন রেশমিয়া নুজহাত নাজা, মুনিরা সুলতানা মিলি (স্বরচিত), তানভী হক, শরিফা কামাল মসি, হ‌ুমায়ুন কবির ও আবদুল বাসিত। নাচে অংশ নেন নতুন প্রজন্মের অরিত্রি ভট্টাচার্য। ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়...’ সমবেত সংগীতের পরপরই অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার সদস্যদের একাংশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডার সদস্যদের একাংশ

শেষে সভাপতি বাহাউদ্দীন বাহার আগত সবাইকে তাঁদের উপস্থিতি ও সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং যাঁরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন, তাঁদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি যাঁরা পর্দার অন্তরালে থেকে অনুষ্ঠানের সফলতার জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন, বিশেষ করে আ ম ম তোহা, নাজমুল মুন্সী, সারওয়ার জামান, বিশ্বজিৎ পাল, রফিক, শেখ জসিম, হাসান তারিক, আজম মিয়া, খোরশেদ খান, দেবরাজ, তানভীর ও সমর পালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।