ইংরেজির কাছাকাছি বাংলা ভাষা!

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

মহান ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন ভোরে আমরা খালি পায়ে সাদাকালো কাপড় পরে ফুল হাতে নিয়ে শহীদ মিনারে যাই। আমরা আমাদের মহান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। কিন্তু আমরা কি সত্যি আমাদের ভাষাকে ভালোবাসি, সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাই, নাকি তা শুধু লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের কি শুধু এই একদিনের জন্য ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা থাকে?

আমার এই জার্মান জীবনে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও পৃথিবীর অনেক মানুষের ভাষা শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু কখনো কোনো মানুষের মুখে অন্য ভাষামিশ্রিত ভাষা শুনিনি। একজন মানুষ যখন জার্মান, স্প্যানিশ, আরবি, টার্কিশ, চায়নিজ বা ফরাসি ভাষা বলেন, তখন ভাষার মাঝে অন্য ভাষা যেমন ইংরেজি বলেন না। বরং বিশুদ্ধ ভাষায় তাঁদের ভাষা বলেন। আবার যখন ইংরেজি বলেন, তখন বিশুদ্ধভাবে ইংরেজি ব্যবহার করেন এবং ভাষার সংমিশ্রণ করেন না।

তাহলে এটা কি আমাদের আধুনিকতা? ঠিক কী কারণে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় ভাষা বাংলাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি? আমাদের কেন বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে আপত্তি? কথার মাঝে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি। হ্যাঁ, আমি স্বীকার করি সবকিছু বাংলায় বলা সম্ভব না। যেমন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফোন, ইন্টারনেট ও এ রকম আরও অনেক কিছু।

অনেক ইংরেজি শব্দ ব্যবহার না করে আমরা কথা বলতে পারি। যেসব ইংরেজি শব্দের সুন্দর বাংলা রয়েছে সেখানে কথার মাঝে মাঝে কিছু অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি শব্দ সুমধুর বাংলা ভাষাকে বিনষ্ট করে দেয়। টক শো, সাক্ষাৎকার, প্রতিবেদন, দৈনন্দিন খবর, নাটক, রেডিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালতে বিশুদ্ধ বাংলার ব্যবহার করা উচিত। তবে ইংরেজি মাধ্যমে ইংরেজির ব্যবহার থাকবে। কোনোভাবে যেন ভাষার সংমিশ্রণ না ঘটে। তাহলে অনেক বাংলা শব্দ ইংরেজি শব্দের ভিড়ে হারিয়ে যাবে এবং নতুন প্রজন্মের নিজের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা থাকবে না।

জার্মানিতে একদিন আমরা বেশ কয়জন বাংলায় কথা বলছিলাম। সেদিন ভিনদেশি একজনও ছিলেন। হঠাৎ আমাদের খেয়াল হলো আমরা বাংলা বলছি আর সেই ভিনদেশি একা বসে আছেন। তখন আমরা তাঁকে দুঃখিত বলে ইংরেজি বলা শুরু করলাম। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা কী নিয়ে কথা বলছ, তা কিছুটা বুঝতে পেরেছি। কারণ তোমাদের ভাষা তো ইংরেজির কাছাকাছি (নেয়ার টু ইংলিশ)।’ আসুন আমরা শুধু ভাষার মাসে নয়, সব সময় আমাদের ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের মায়ের ভাষা বাংলাকে ভালোবাসি।

আঁখিনুর মেহবুবা: ইউনিভার্সিটি অব ডুইসবুর্গ এসেন, জার্মানি।