মুখরোচক খাবারে ভিনদেশিদের উদরপূর্তি

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

সুকুমার রায়ের ‘খাই খাই করো কেন, এসো বসো আহারে-খাওয়াব আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে’ ছড়াটির সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপ দেখা গেল পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে। যখন বাংলাদেশি খাবারের প্রতিটি বড় বড় হাঁড়ি চোখের নিমেষেই খালি হয়ে গেল। এ দৃশ্য ছিল ওয়ারশের এশিয়া প্যাসিফিক মিউজিয়ামে গত শনিবার (৩০ মার্চ) স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলা বাংলাদেশের খাবারের মেলার।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ খাবারের মেলা। পোলিশরা ছাড়াও ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিদের সঙ্গে এক নতুন ভালোবাসার বাঁধনে আবদ্ধ হন এই খাবারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

অনেক আগে কোথায় যেন শুনেছিলাম, যদি কারও মন জয় করতে চাও, তবে জয় করো তার পেট। জাতিগতভাবে আমরা বাংলাদেশিরা প্রচণ্ড রসনাবিলাসী ও অতিথিপরায়ণ। মানুষকে খাওয়াতে আমরা কখনোই কুণ্ঠাবোধ করি না। প্রিয় বাংলাদেশের খাবারের একটি আকর্ষণীয় অথচ দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া দিক হলো আমাদের অঞ্চলভেদে রান্নার ধরন ও উপকরণের বিভিন্নতা। অঞ্চলভেদে আমাদের রান্নার কৌশল ও স্বাদের মধ্যে বৈচিত্র্যময় বাঙালি খাবারের স্বাদকে করেছে অতুলনীয়। বাংলাদেশি খাবার মানেই যে ভারতীয় খাবার নয় বরং বাংলাদেশি খাবার, তার নিজস্ব স্বাদ আর স্বকীয়তায় অনন্য, তা ওয়ারশতে ভিনদেশি অতিথিরা নির্দ্বিধায় বলেছেন।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

খাবারের মেলায় আগত পোলিশদের অনেকেরই অভিব্যক্তি ছিল এ রকম যে এত দিন কোথায় ছিলেন? আগত বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশি বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরও ভালো করে জানার জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণের ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।

পোলিশ বিজ্ঞান একাডেমির গবেষক ড. মাহবুবের রান্না করা বিরিয়ানি ভারতীয় বিরিয়ানির চেয়ে শতগুণ শ্রেয়, এই স্বীকৃত দিয়ে দেন পোলিশ নাগরিক আলেক্সান্দ্রা। ড. মাহবুব আরও নিয়ে আসেন রসমালাই, রসগোল্লা ও বোরহানি।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পোল্যান্ডের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের চিংড়ি ভুনা যখন চোখের পলকে শেষ হয়ে যায়, তখন বোঝা যায় যে বাংলাদেশি প্রকৌশলীরা শুধু পড়ালেখাতেই ভালো নন, রন্ধনবিদ্যাতেও সমান পারদর্শী। স্বাতী ভৌমিকের অপূর্ব চটপটি ভিনদেশিদের শুধু জিভে নয়, চোখেও পানি (ঝাল ও আনন্দের) এনে দেয়। ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই সীমা-এরশাদ দম্পতির অতুলনীয় ভুনা গরুর মাংসের আস্বাদ নেওয়ার সুযোগ পাননি। কারণ ১০ মিনিটেই তাদের গরুর মাংসের হাঁড়ি হয়ে যায় খালি। মাত্র তিন ঘণ্টার এ উৎসবে দেড় হাজারের বেশি ভিনদেশি বাংলাদেশের প্রায় এক শ পদের খাবার দেখার ও আস্বাদের সুযোগ পান।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, এখন সময় এসেছে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে চেনানোর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশিরা যে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ ও জাতির মতোই কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগতভাবে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ, তা আমাদের ভিনদেশিদের জানাতে হবে।

উল্লেখ্য, এই একই স্থানে বাংলাদেশের ৬৫ জন চিত্রশিল্পীর আঁকা চিত্র প্রদর্শনী এখনো চলছে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টারই আরেক ধারাবাহিকতার ফসল এই সফল বাংলাদেশি খাবারের মেলা। রাষ্ট্রদূত এ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষভাবে তিনি অভিনন্দন জানান তানিয়া-মাহবুব দম্পতি, এভা-মাহবুব দম্পতি, সীমা-এরশাদ দম্পতি, তুহিন, মাসালা হাউস রেস্টুরেন্ট, থালি হাউস, এশিয়ান কাবাব রেস্টুরেন্ট, জহির কাবাব, গ্রিল ইন রেস্টুরেন্ট, আরিফ দম্পতি, রুমানা ও রোজ, পূরবী, আনিকা, চিলি কাবাব অ্যান্ড গ্রিল, জাহাঙ্গীর-শম্পা দম্পতি ও কামরুল প্রমুখকে।

বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের খাবারের মেলার একটি দৃশ্য

পোলিশ টেলিভিশন ও মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, আজকে এখানে সব বাংলাদেশি আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করছে পোলিশ ও অন্য দেশিদের বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে আতিথেয়তা দিতে পেরে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পোলিশদের কাছে একদিকে বাংলাদেশের খাবারের পরিচিতি ও আগ্রহ যেমন বাড়বে, অন্যদিকে বিদ্যমান দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী শাহানাজ পারভিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি খাবার ভিনদেশিদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরে আমরা দারুণ খুশি। পোল্যান্ডের সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে অভিনন্দন সফলভাবে সুস্বাদু বাংলাদেশি খাবার উপস্থাপন করার জন্য।

সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের খাবারের মেলা। খাবারের মেলা শেষে গর্বিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা ঘরে ফিরে যান বিপুলসংখ্যক ভিনদেশিদের বাংলাদেশের খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে।