লিসবনে বহু সংস্কৃতি উৎসবে প্রবাসী বাংলাদেশি
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের ব্যস্ততম এলাকা আলমিরান্তে রেইস। মিউনিসিপ্যালটির দুটি বৃহৎ ওয়ার্ড সান্তা মারিয়া মাইওর ও অ্যারিওস। পুরোনো সব স্থাপত্য এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বসবাস এই এলাকাগুলোতে। এখানে বসবাসরত স্থানীয় পর্তুগিজ কমিউনিটি ও বিভিন্ন দেশের মানুষ আর তাদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির কারণে এ এলাকা বহু সংস্কৃতির (মাল্টিকালচারাল) মানুষের এলাকা হিসেবে পরিচিত। সব সময়ই এই এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যায়। স্থানীয় পর্তুগিজদের সঙ্গে সমানতালে অভিবাসীরাও এ উৎসবে যুক্ত থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতির মিশ্রণে উৎসবগুলো অনেকটাই রঙিন থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় লিসবন মিউনিসিপ্যালটি ও লারগো রেসিডেন্সিয়াসের সহযোগিতায় গাবিব আলমিরান্তে রেইস নামের স্থানীয় একটি অ্যাসোসিয়েশন নিয়েছিল ভিন্ন এক উদ্যোগ। ৭৯টি দেশের অভিবাসীদের নিয়ে অন্য রকম আয়োজনের নাম ছিল প্রজেক্ট নেক্সট স্টপ বা প্রকল্প পরবর্তী গন্তব্য। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাবান শিল্পীদের খুঁজে বের করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ীদের নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা। গান, চিত্রকর্ম, থিয়েটার, পাপেট শো, নাচ ইত্যাদি থেকে বাছাইয়ের পর স্থানীয় শিল্পীসহ ৬০ জন্য শিল্পীকে চূড়ান্ত করা হয়।
প্রকল্পের চমক বা ভিন্নতা যেটি সেটি হলো সম্পূর্ণ প্রকল্পটি যেমন শিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, নাচ, গান পরিবেশন—সবকিছুই লিসবনের বহু সংস্কৃতি জোনের চারটি মেট্রো স্টেশনের (মার্তৃম-মুনিজ, ইন্তেন্দেন্তে, আঞ্জুস ও অ্যারিওস) ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিযোগিতা ও বাছাইয়ের মাধ্যমে উৎসবে ১৫ দেশের প্রায় ৬০ জন শিল্পী অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে দুজন ছিলেন বাংলাদেশি শিল্পী। চিত্রকর্মে শারমিন মৌ ও গানে কে এম মোস্তফা আনোয়ার।
তিন দিনের এই উৎসব উদ্বোধন হয় ২৮ মার্চ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজক ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা ছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্তুগালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী।
শারমিন মৌয়ের চিত্রকর্ম উদ্বোধনের দিন থেকে দুটি স্টেশনে চার মাসের জন্য প্রদর্শিত হবে। তাঁর চিত্রকর্মের নাম মানবতার রং। মূল বিষয় মানুষের ভেতরের রং। শারমিন মৌ জানান, মানুষকে বাইরে আমরা ভিন্ন রূপে দেখলেও প্রত্যেক মানুষের ভেতরে লুকানো একটি মানুষ থাকে। লুকানো একটি ছবি থাকে। যেটি বাইরের রূপের সঙ্গে অনেক সময় মেলে না। সমাজের মানুষের ভেতরের আসল রূপ ভিন্ন হয়। হিংস্র হয় বা অনেক সময় কোমল হয়। এসব রূপ শারমিন তাঁর চিত্রকর্মে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
দীর্ঘসময় ধরে পর্তুগালে বসবাস করা শারমিন সগৌরবে লাল–সবুজের পতাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি পর্তুগালে বাংলাদেশকে তাঁর রংতুলিতে তুলে ধরছেন প্রতিনিয়তই। স্থানীয় পর্তুগিজদের সঙ্গে সমানতালে তাঁর মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। এর সঙ্গে তুলে ধরছেন নিজের দেশীয় সংস্কৃতি ও চিত্রকর্ম। পর্তুগালে শারমিন মৌয়ের বাংলাদেশি পোশাকের ফ্যাশন শো স্থানীয় কমিউনিটিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কে এম মোস্তফা আনোয়ার উৎসবে ‘মোস্তফা ও বন্ধুরা’ শিরোনামে একটি কনসার্ট করেছেন। তিনি ভিন্ন ভাষায় বাংলা গান অনুবাদ করেও পরিবেশন করেন।
প্রকল্পটির অন্যতম পরিচালক মার্তা সিলভা বলেন, লিসবনের অ্যারিওস ওয়ার্ডের আলমিরান্তে রেইস এলাকাটি সবচেয়ে বেশি মাল্টিকালচারাল। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মিশ্রণে এই এলাকা অনেকটাই রঙিন। সব সময়ই এই এলাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ করা যায়। যা ভিন্ন একটি পরিবেশ তৈরি করে। আমাদের এই প্রকল্পটির একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে করা। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের সংস্কৃতির বিনিময়ের মাধ্যমে রঙিন একটি শহর হবে লিসবন।